স্টাফ রিপোর্টার,ভোলা নিউজ২৪ডটকম॥ ভোলা সদরের শিবপুরে নারী নির্যাতন মামলা তুলে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য গৃহবধু নাজমা বেগমকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করেছে পাষ- স্বামী ও তার পরিবার। গৃহবধুর আত্মচিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন ও তার ভাই এসে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার সময় সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ রতনপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম হাওলাদার বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ভোলা থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
আহত নাজমা বেগম জানান, শিবপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ রতনপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মোঃ ইমরানের সাথে তার বিবাহ হয়। বিয়ের পর নাজমা বেগমের পিতা রফিকুল ইসলাম মেয়ের সুখের জন্য জামাই এমরানকে কাপুড়ের ব্যবসা করার জন্য টাকা পয়সা দেয়। ব্যবসা শুরুর পর এমরান বিভিন্ন সময় নাজমার কাছে যৌতুক চাইতে চায়। সংসারের সুখের জন্য নাজমা বেগম প্রায় সময় বাপের বাড়ী থেকে টাকা এনে এমরানকে দিতো। তাদের এক যুগের সুখের সংসারে ১ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে। তাদের নিয়ে সুখে-শান্তিইে কাটছিলো ইমরান-নাজমার সংসার। গত দুই বছর আগে সংসারের সুখের জন্য নাজমা বাপের বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে ৩ তলা ফাউন্ডেশন নিয়ে ঘর নির্মান শুরু করে। ওই ঘরের কাজ ১ তলা পর্যন্ত শেষ হয়। এরপর থেকেই ইমরানের আচরণ পাল্টে যেতে শুরু করে। যৌতুকের জন্য ইমরান ও তার পরিবার একাধিকবার নাজমা বেগমকে মারধর করে। সংসারের সুখের জন্য বাপের বাড়ি থেকে ইমরানের চাহিদা মতো টাকা এনে দেয় নাজমা। কিন্তু তাতেও সুখ আসেনি নাজমার সংসারে। ইমরান ব্যবসা বাদ দিয়ে সংসার রেখে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন যায়গা চলে যায়। মাঝে মধ্যে বাসায় এসে নাজমাকে মারধর ও নির্যাতন কতো ইমরান ও তার পরিবার। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে নাজমা বেগম ইমরান ও তার পরিবারের লোকজনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। ওই মামলার আসামীদেরকে গ্রেফতার করলেও কিছুদিন জেল খেটে জামিনে এসে নাজমা বেগমকে মামলা তুলে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় মারধর করতো ইমরান ও তার পরিবার। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২৩ অক্টোবর-২০) দুপুরে স্বামী মোঃ ইমরান নাজমা বেগমকে মামলা তুলে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বেধড়ক মারধর করে। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামী ইমরান, শ্বশুর নুরুল ইসলাম হাং, শ্বাশুড়ী মানসুরা বেগম, দেবর জাকির, মনির, জাল রোকসানা বেগম, ননদ জামাই রিয়াজ গৃহবধু নাজমা বেগমকে ঘর থেকে টেনে হিচড়ে বাইরে বাগানে নিয়ে এলোপাথারী মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। মাকে মারধর করতে দেখে তার নাজমা বেগমর মেয়ে তার মামাকে ফোন করে খবর দেয়। নাজমা বেগমের আত্মচিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এসে ঝড়ো হয়। এসময় নাজমার ভাই মোঃ মনির হোসেন এসে স্থানীয় লোকজনের সহায়তা নাজমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে নাজমা বেগম হাসপাতালের গাইনী সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে নাজমার ভাই মোঃ মনির হোসেন জানিয়েছেন।
নির্যাতনের শিকার নাজমা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, বিয়ের পর কয়েক বছর সুখে শান্তিতে কাটে। এরপর ইমরান ও তার পরিবার বিভিন্ন সময় আমাকে যৌতুকের জন্য মারধর করতো। আমি প্রায় সময় বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতাম। তারপরও তাদের অত্যাচার, নির্যাতন বন্ধ হয়নি। আমি বাপের বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা এনে সংসারের সুখের জন্য বাড়ি নির্মান করি। তারপরও তারা আমাকে মারধর করে। এ ঘটনায় আমি নারী নির্যাতন মামলা দিলে তাদের অত্যাচার, মারধরের মাত্রাও বেড়ে যায়। তারা জামিনে এসে মামলা তুলে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যেতে মারধর করে। শুক্রবার রাতে ইমরান ও তার পরিবারের লোকজন মিলে মাকে ঘর থেকে বের করে পাশের বাগানে নিয়ে মারধর ও কুপিয়ে জখম করে। আমি চিৎকার দিলে স্থানীয় লোকজন আসলে তারা চলে যায়। আমি স্বামী ইমরান ও তার পরিবারের অত্যাচার নির্যাতনের হাত থেকে বাচতে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোঃ ইমরান ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কাউকে পাওয়া যায়নি।