ভোলায় নদী ভাঙনরোধে সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকার কাজ এগিয়ে চলছে

0
866

ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট : জেলার দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন (ভোলা-২ আসন) উপজেলায় প্রমত্ত মেঘনা নদীর ভাঙ্গনরোধে ৫শ’ ৫১ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে পোল্ডার ৫৬/৫৭ রক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙ্গন কবলতি এ দুটি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৯ কিলোমিটার নদী তীর এলাকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ব্লক ও জিও ব্যাগ স্থাপনের মাধ্যমে ২০১৬ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া কাজ আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৫১ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছে। এছাড়া এ দুটি উপজেলার নদী নিয়ন্ত্রণে আরো ১১শ’ কোটি টাকার ২টি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখনই অবহেলিত এলাকায় উন্নয়ন হয়। নদী ভাঙ্গন ছিলো এ এলাকার মানুষের প্রধান সমস্যা। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে সে সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে মানুষ। এখন নদী শাসনের কাজ এগিয়ে চলায় মানুষের মধ্যে আতংক কেটে গিয়ে নিরাপত্তা বিরাজ করছে। এমপি মুকুল আরো জানান, দৌলতখান উপজেলার লঞ্চঘাট এলাকা থেকে রাধা বল্লব চৌকিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকার নদী ভাঙ্গন রক্ষায় প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভোলা-২ আসন নিয়ে গঠিত দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় নদী তীর রক্ষায় মোট ৫০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩২টি সিসি ব্লক ও ১৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬শ’ ৭২টি জিও ব্যাগ স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে ২৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৬টি ব্লক এবং ৫ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ টি জিও ব্যাগ তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে সকল জিও ব্যাগ নদী তীরে স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ব্লক স্থাপনও চলছে। দৌলতখান উপজেলার মাছ বাজার এলাকা থেকে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়ে ভবানীপুর, সৈয়দপুর, মাইনকা, বাটামারা এলাকা হয়ে বোরহানউদ্দিনের পক্ষিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত মেঘনা পাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এখানকার ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর, বিভিন্ন স্থাপনাসহ ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড’র নির্বাহী প্রকোশলী বাবুল আক্তার বলেন, এ প্রকল্পের মোট ২২টি প্যাকেজের মধ্যে সবগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। সাধারনত জিও ব্যাগ স্থাপনের পরেই তীরে ব্লক স্থাপন করা হয়। গত অর্থবছরে কাজের ৪৬ ভাগ সম্পন্ন করার টার্গেট থাকলেও তা ৫১ ভাগ হয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। বাবুল আক্তার বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে এখানে প্রায় ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নদী তীর সংরক্ষণ সম্পন্ন হওয়ায় ভাবানীপুর, সৈয়দপুর, পক্ষীয়া ও মাইনকা এলাকার লক্ষাধীক মানুষ চলতি বর্ষায় এর সুফল ভোগ করছে। এদিকে স্থানীয়দের প্রাণের দাবি নদী ভাঙ্গন বন্ধে সিসি ব্লকের কাজ শুরু হওয়ায় মানুষের মাঝে স্বস্তি নেমে এসেছে। বিগত দিনে অন্যান্য সরকারের মেয়াদে এখানে নদী ভাঙ্গনরোধে টেকসই কোন ভূমিকা না নেওয়ায় হুমকির মুখে ছিল এ জনপদ। অবশেষে বর্তমান সরকার নদী নিয়ন্ত্রণে উন্নয়ন কাজ শুরু করায় আনন্দিত এলাকাবাসী। চলমান বর্ষা মৌসুমে মেঘনা পাড়ের অনেক এলাকায় নির্বিঘœ হয়েছে মানুষের জীবন যাপন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভোলা-২ আসনের জনগণ।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নের মেঘনা তীরবর্তী বাটামারা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মঞ্জুর হাওলাদার বলেন, মেঘনার করাল গ্রাসে এ এলাকার অনেকেই ভিটে মাটি হারিয়েছেন। কয়েকবছর আগেও এখান থেকে বহু পরিবার তাদের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখন ব্লকের কাজ শুরু হওয়ায় মানুষ আর ঘর-বাড়ি সরাচ্ছেন না। এখানেই এখন নিত্য নতুন বাড়ি-ঘর তৈরি করছে। স্কুল শিক্ষক লোকমান আলী বলেন, সরকার নদী তীর সংরক্ষণের প্রকল্প হাতে নেওয়ায় এখানে জমির দাম বেড়ে গেছে। মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।
সৈয়দপুর এলাকার মেঘনা পাড়ের বাসিন্দা আকবর হোসেন ও নাগর হোসেন বলেন, নদী তীর রক্ষায় সরকারের ব্লক ও জিও ব্যাগের কাজ হওয়াতে এখন আর নদী ভাঙ্গছেনা। টেকসই উচ্চ বাঁধ নির্মানে অতি জোয়ার বা জলোচ্ছাসে এলাকা প্লাবিত হওয়ার ভয়ও এখন নেই।

LEAVE A REPLY