ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঘোষণা রণকৌশলের দিক দিয়ে অসাধারণ। এটি আবেগ আর স্বতস্ফূর্ততার পরিচায়ক। যে ভাষায় তিনি কথা বলতেন, সে ভাষায়ই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। তার এই বক্তৃতা এখনো মানুষকে শিহরিত করে। এই ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়ে বাংলাদেশের মানুষের গৌরব-সম্মান আরেকবার আন্তর্জাতিকভাবে বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ প্রণীত ‘৭ মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ: বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্হের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং মূখ্য বক্তা ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। গ্রন্হটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। বইটিতে সর্বমোট পৃষ্ঠা ১১৬, অধ্যায় ৯টি।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন হারুন অর রশিদ। বইয়ের ওপর আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান প্রমুখ।
ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঘোষণার আগে রাজনৈতিক কর্মী ও জনসাধারণ একদিকে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য এক ধরণের চাপ সৃষ্টি করেছেন, অন্যদিকে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পাকিস্তানী সেনা শাসকদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে দমন পীড়ন চালিয়ে যাবে সে বিষয়েও অবহিত ছিলেন। এর এক মাস আগেই তিনি নিউজউইকের এক সাংবাদিককে অফ দ্য রেকর্ডে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানকে যেভাবে দেখা হয়, সেখানে আর ফেরার উপায় নেই।’ স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন কি না সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা তো সংখ্যাগরিষ্ঠ। পশ্চিমাদের ওপর নির্ভর করছে তারা বিচ্ছিন্ন হতে চায় কি না।’
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু দোতলায় উঠছেন, আমরা গিয়েছিলাম। একজন তাকে বললেন, জনগণ কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা ছাড়া মানবে না। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি তোমার কাজ কর। আমি তাদের নেতা, আমি তাদের পরিচালিত করবো, তারা আমাকে নয়।’
আব্রহাম লিংকন, মার্টিন লুথার কিং বা জন এফ কেনেডির মতো নেতার ভাষণ বিশ্বখ্যাত, কিন্তু সবগুলো লিখিত ভাষণ। বঙ্গবন্ধু তার চশমাটা সেদিন ডায়াসের ওপর রেখে ১৮ মিনিটের ভাষণ দিয়েছিলেন, পুরোটাই অলিখিত। একদিকে তিনি পাকিস্তানীদের প্রতি চার দফা শর্ত আরোপ করলেন, আরেকদিকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বললেন। বললেন, ‘আমরা ভাতে মারবো, পানিতে মারবো।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে বাঙালির হাজার বছরের যে আকাঙ্খা ও স্বপ্ন ছিল তা ধারণ করেছেন। তিনি ওই সময় আইনগতভাবে ছিলেন জনগণের প্রতিনিধি। ওই সময় সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পুরো বিশ্বের সমর্থন হারাতেন। বিষয়টি তাকে খুব সতর্কতার সঙ্গে নিতে হয়েছে। তার প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন ছিল। ওই সময় কী হচ্ছিল, অতীতে কী হয়েছিল, সামনে কী হবে সবগুলো বিষয় তিনি ধারণ করে নিয়ে আসেন তার বক্তৃতায়। মানুষ সে বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছেন।