বাসস ।। ২৫ মার্চের কালরাত প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অল্প সময়ে এত মানুষ হত্যা, এ রকম গণহত্যা কিন্তু আর কোনো দেশে ঘটে নাই। সেই গণহত্যা গিনেস বুক অব রেকর্ডেও উঠে এসেছে। এটা ছিল সব থেকে ভয়াবহ, মারাত্মক এবং অধিক সংখ্যার গণহত্যা। ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে পুরো নয়টা মাস পাকবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে।’
আজ রোববার জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
২৫ মার্চের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন বের হই তখন রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে আমি নিজে দেখেছি। ধানমণ্ডি, মিরপুর রোড থেকে শুরু করে ঢাকা শহরে শুধু লাশ আর লাশ। বস্তিতে আগুন দিয়েছিল, মানুষের চিৎকার আর দাউ দাউ করা আগুন। সমস্ত জায়গায় বাড়িতে বাড়িতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা, যে বাড়িতে পতাকা দেখেছে সে বাড়িতেই হামলা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের একটি নির্দিষ্ট গণহত্যা দিবস থাকলেও যেসব দিবসে মুক্তিকামী যেসব দেশে গণহত্যা হয়েছে তারা সে দিনগুলোতে নিজস্ব আঙ্গিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। কাজেই আমরা এই ২৫ মার্চ দিনটিকেই আমাদের দেশের গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করব।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যারা গণহত্যায় যুক্ত এবং যারা মদদদানকারী উভয়েই সমান দোষে দুষ্ট। তাদের এই অপকর্মের কথা জাতি যেন ভুলে না যায়। আর প্রজন্মে পর প্রজন্ম যেন এই কথাটা মনে রাখে- কারা এবং কেন এই দেশে গণহত্যা ঘটিয়েছিল এবং তাদের বিচার যেন এই মাটিতে চলতেই থাকে। তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তাদের বিচার হবেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণহত্যায় মদদদানকারীরা ঘৃণার পাত্র। এই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। কারণ আমাদের মা-বোনদের ওপর যেই অত্যাচার চালানো হয় তা আমরা চোখে দেখেছি। যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।’
২৫ মার্চের নির্মমতার চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের বাড়ির আশপাশে সব বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ৩২ নম্বরের বাড়িতে আক্রমণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অথচ আমাদের দেশেরই কোনো কোনো নেতা-নেত্রী, এমনকি খালেদা জিয়া নিজেই সন্দিহান- ৩০ লাখ লোক নাকি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয় নাই। তারা তো নিজেরাই মানুষ খুন করে অভ্যস্ত, তারা তো নিজেরাই মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তাদের পক্ষে এটা বলাটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আদৌ তারা বিশ্বাস করে কি না, আমার সন্দেহ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। পাকিস্তানের পাসপোর্টসহ বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিল গোলাম আজম, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই গোলাম আজমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে। বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে ওই যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করে দেয় জিয়াউর রহমান।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখন পাকি (পাকিস্তান) প্রেমে যারা হাবুডুবু খেয়েছে তাদেরও উপযুক্ত জবাব বাংলার মানুষকে দিতে হবে। তাদেরও শাস্তি দিতে হবে। তাদের ওই পাকি প্রেম ভুলিয়ে দিতে হবে। এই বাঙালি যদি এটা না পারে তাহলে নিজেদের অস্তিত্ব থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের আলোকে বলেন, ‘আমাদের কেউ যে দাবায়ে রাখতে পারবে না, সেটা আমরা বিশ্বে প্রমাণ করেছি। আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশ।’ তিনি বলেন, ‘এই উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা আমরা অর্জন করেছি সেটা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি পালন করব। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করব এবং সেই সময়টায় বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। সেভাবেই ইনশা আল্লাহ দেশকে আমরা গড়ে তুলব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে মাত্র সাড়ে ৩ বছরে প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের শর্ত পূরণ করে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। যে দেশের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিল। যে দেশ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন স্বাধীন হলে তো এ দেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি ছাড়া কিছুই হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই দেশে জাতির পিতার নেতৃত্ব ছিল বলেই তলাবিহীন ঝুড়ি না হয়ে স্বল্পন্নোত দেশের মর্যাদা পেয়েছিল। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটল এবং যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা তো এ দেশের উন্নতি চায়নি। অগ্রযাত্রা চায়নি। এ দেশের মানুষ পেট ভরে ভাত খাক চায়নি। এ দেশের মানুষের লেখাপড়া, মাথা গোঁজার ঠাঁই হোক, রোগে চিকিৎসা পাক তা চায়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা নিজের হাতে এই সংগঠন (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) গড়ে তুলেছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমেই দেশের স্বাধীনতা এসেছে। এই সংগঠনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর এই গণহত্যার প্রতিশোধ আমরা তখনই নিতে পারব যখন বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হবে। আর ওই পাকি-প্রেমীদের উপযুক্ত শিক্ষা আমরা দিতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘আজকে যেমন বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে তেমনি যখন বাংলাদেশের সম্মান আরো বাড়বে, তখন হয়তো সেই পাকি-প্রেমীরা হাবুডুবু খেতে খেতে ডুবেই যাবে- সেটাই আমরা চাই।’