মা-বাবা ছাড়াই আসছে অনেক রোহিঙ্গা শিশু

0
539

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট: মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অব্যাহত নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আসছে লাখো রোহিঙ্গা। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আছে শিশুরা। এই শিশুগুলোর অনেকের সঙ্গেই নেই তাদের মা-বাবা। সংসারের সবচে বড় আশ্রয়কে হারিয়ে ভিনদেশের পানে ছুটে এসেছে এই শিশুগুলো।

বাংলাদেশে আসা এই শিশুগুলো জানিয়েছে, তাদের অনেকেরই মা-বাবা নেই। মিয়ানমারের সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন তাঁরা। অনেক শিশু আবার হারিয়ে ফেলেছে পরিবারকে।  প্রাণ বাঁচাতে পরিবারহারা শিশুগুলো দিশেহারা হয়ে একাই ছুটছে বাংলাদেশের দিকে। সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাদের এই করুণ চিত্র।

বাংলাদেশে একা আসা এমনি এক শিশু ১০ বছর বয়সী আবদুল আজিজ। শিশুটি একটি নারী দলের সঙ্গে পাড়ি দিয়েছিল বাংলাদেশের আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। তোমার বাবা-মা কোথায়? প্রশ্ন করেছিলেন ওই নারী শরণার্থী দলের সদস্যরা। শিশুটির উত্তর দিয়েছিল, তার জানা নেই।

রোহিঙ্গা নারীরা বুঝতে পারলেন শিশুটির অবস্থা। বললেন, ‘চিন্তা করো না। সন্তানেই মতোই থাকবে তুমি আমাদের সঙ্গে।’ এরপর নতুন ওই পরিবারের সঙ্গে আবার অজানার উদ্দেশে পাড়ি দিল শিশুটি।

এমন শিশুর সংখ্যা কিন্তু একেবারেই হাতেগোনা নয়। ইউনিসেফের জরিপ অনুযায়ী গত ২৫ আগস্ট থেকে প্রায় এক হাজার ১০০ শিশু একাকী পাড়ি দিয়েছে বাংলাদেশে। তাদের সামনে দূর্গম পথ ছাড়াও ছিল ধর্ষণ, নির্যাতন ও শিশু পাচাকারীদের হাতে পড়ার ঝুঁকি।

শিশুগুলোর অনেকেরই অভিযোগ, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্য ও বৌদ্ধদের কিছু দল তাদের সামনেই মা-বাবাকে হত্যা করেছে। পার পায়নি শিশুগুলোও। উখিয়ার বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরগুলো ঘুরে দেখা গেছে তাদের অনেকের শরীরে রয়েছে গুলি ও আঘাতের চিহ্ন।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী প্রায় তিন লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তাদের মধ্যে এক লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে। এদের মধ্যে ১২ হাজার শিশুর বয়স এক বছরের নিচে।

এ বিষয়ে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর এই শিশুগুলো কিছু খায় না, কথা বলে না, খেলা করে না, জল ভরা চোখে এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মকর্তা জর্জ গ্রাহাম বলেন, ‘পরিবারকে খুঁজে বের করতে, এই শিশুগুলোর বিশেষ সাহায্য প্রয়োজন।’

গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। সেখান থেকে পালিয়ে আসার রোহিঙ্গাদের দাবি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বিচারে গ্রামের পর গ্রামে হামলা-নির্যাতন চালাচ্ছে। নারীদের ধর্ষণ করছে। গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ সাধারণ নাগরিক।

মিয়ানমার সরকারের আরো দাবি, ‘বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা’ এখন পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় দুই হাজার ৬০০ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা মুসলিমদের মধ্যে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এফএমটি নিউজ

LEAVE A REPLY