ভোলায় ১০০টাকা খরচ করে মিললো পুলিশের কনস্টেবল চাকরি

0
38

স্টাফ রির্পোটার,ভোলা  নিউজ২৪ডটকম।। ভোলায় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরীর জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলো ১৪৪৫ জন আবেদনকারী।

নিয়োগ পক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখতে নতুন নিয়মে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করে অনুষ্ঠিত হয় পুলিশ এই পরীক্ষা। টাকার বিনিময় চাকরী দেওয়ার প্রতারণা ঠেকাতে আগে থেকেই নেয়া হয় নানা ব্যবস্থা। অবশেষে কোন ধরণের অনিয়ম ছাড়াই স্বচ্ছ পক্রিয়ায় বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে চাকরী হয় ৩৭ জনের।কোনো ধরনের তদবির ছাড়াই আবেদন ফরম ৩ টাকা, ব্যাংক ড্রাফট ১০০ টা ও অনলাইন চার্জ ৩০ টাকা সহ ১৩৩ টাকা খরচ করেই মিলেছে কাঙিক্ষত চাকরি।এই নতুন নিয়মে চাকরী পেয়ে খুশী উত্তীর্ণরা। আর পুলিশ সুপার বলছেন মেধা আর যোগ্যতার সাক্ষর বহন করেই চাকরী পেয়েছেন। সম্পূর্ন প্রভাব মুক্ত পরিবেশে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করা হয়েছে বলে জানান।

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১২ টা (৮ নভেম্বর)।ভোলার পুলিশ লাইন্স চত্বরে ট্রেইনি রিক্রুটিং কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করছিলেন ভোলার নবাগত পুলিশ সুপার ( এসপি)মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।তার ঠিক সামনেই চেয়ারে অধীর আগ্রহে বসে শুনছিলেন চাকরি প্রত্যাশীরা। মাইকে তখন উত্তীর্ণদের রোল নম্বর ও নাম ঘোষণা করছিলেন জেলা পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা। একেকটা রোল ঘোষণা করা হচ্ছিল আর সঙ্গে সঙ্গেই উত্তীর্ণদের দাড়িয়ে উত্তর ‘ইয়েস স্যার’। চূড়ান্ত তালিকা থেকে ঘোষণা করা নিজের নামটি শোনার পরপর অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ছিলেন। তাদের স্বপ্ন পূরন হওয়ায় পাশাপশি পরিবারে হাল ধরতে পারবে বলে খুশী সবাই। কোন ধরণের অনিয়ম ছাড়াই স্বচ্ছ পক্রিয়ায় বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে চাকরী হয় ৩৭ জনের।কোনো তদবির ছাড়াই আবেদন ফরম ৩ টাকা, ব্যাংক ড্রাফট ১০০ টা ও অনলাইন চার্জ ৩০ টাকা সহ ১৩৩ টাকা খরচ করেই মিলেছে কাঙিক্ষত চাকরি। এই নতুন নিয়মে চাকরী পেয়ে খুশী উত্তীর্ণরা।
এবার পুলিশের কনেস্টবল পদে প্রথম স্থান অর্জন করে উত্তির্ন হওয়া বোরহানউদ্দিন উপজেলার এক কৃষক বাবার মেয়ে ফাতেমা আক্তার বলেন, আমি ছোট থাকতেই আমার বাবার সপ্ন ছিলো আমি পুলিশ অফিসার হই, জনগণের সেবা করি। ছোটবেলা থেকেই আমাকে বাবা উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। আজ ২০২১ সালে আমি আমার বাবার সপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।
একই রকম সদর উপজেলার জাকিয়া বেগম বলেন, আমার বাবা একজন অটোড্রইবার তার উপার্জীত আয়ে আমাদের সংসার চলাচলে হিমসিম খেতো। বাবার সপ্ন ছিলো আমরা পড়াশোনা করে যাতে আমরা কিছু করি বাবার পাশে দাড়াই সচ্ছলতা প্রধানে সাহায্য করি। আর আমার ছোট বেলা থেকে সপ্ন ছিলো বাহিনীতে কাজ করারা। আজকে ফলাফলে মাধ্যমে আমার ও আমার পরিবারের সপ্ন পূরন হয়েছে।
সদর উপজেলার জাবের হোসেন বলেন,আমার বাবার ইচ্ছে ছিলো আমি সেনাবাহিনীতে যোগদান করি ও মা এবং আমার ইচ্ছে ছিলো আমি বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করবো। আমরা দুই ভাই জমজ জবাবের হোসেন ও জোবায়ের হোসেন। আমরা একই সাথে গত ১০ তারিখ সেনাবাহিনীর নিয়োগ পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং একই দিনে আমাদের দুই ভাইয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি হয়। কিন্তু আমার মায়ের ইচ্ছে পূরণ ও আমার ইচ্ছে পূরণের জন্য আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জয়েন না করে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করতে যাচ্ছি। যাতে করে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে দেশের মানুষকে সর্বউচ্চ সেবা দিতে পারি।
আর অভিভাবরা সন্তানের এই সাফল্যে খুশী তারাও। একই সাথে তারা মনে করেন দেশের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত থাকবে তাদের সন্তানরা।
ভোলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ পুলিশি ট্রইনিং রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরিক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য মাননীয় আইজিপি স্যার এর উদ্যোগে একটি সম্পন্ন নতুন নিয়মের মধ্যে দিয়ে এই কনস্টেবল নিয়োগ পরিক্ষাটি সম্পন্ন হয়েছে। এই পরিক্ষায় যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা সম্পন্ন মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর বহন করেই নির্বাচিত হয়েছেন। এই নিয়োগ পরিক্ষায় কোন দালাল বা অন্য কোন ব্যক্তির কোন রকমের প্রভাব ছিলো না। সম্পন্ন প্রভাব মুক্ত পরিবেশে আমরা টিআরসির নিয়োগ পরিক্ষা সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি।
পুলিশ সুপার বলেন, বিগত সময়ে এই কনস্টেবল নিয়োগ পরিক্ষা বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে ৭/৮ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের সহ নানা কথা শুনা যেতো। এই সকল কিছু ইতিহাসে ছিলো ইতিহাসেই থাকবে, আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। নতুন নির্বাচিত পুলিশ সদস্যরা নতুন সতাবদির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। বাংলাদেশ পুলিশকে আরও জনবান্ধন করতে সহায়তা করবে। এই মুজিব বর্ষে আধুনিক পুলিশ গঠনে তারা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে নতুন দিনের নতুন পুলিশ হিসেবে কাজ করবে এবং পুলিশকে আরও মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাবে এই প্রত্যাষা ব্যক্ত করেন তিনি।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশ হেডকোয়াটার্সেরস সার্বিক তত্বাবধানে এবছর ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নতুন নিয়ম প্রবর্তন করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে বাছাই কৃতদের ২৯ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর ভোলার পুলিশ লাইন মাঠে মেধা যাচাইয়ের পাশাপাশি গুরুত্ব পেয়েছে ক্রীড়া ও শরীর চর্চ্চা। এবছর ভোলাতে ১৪৪৫ জন আবেদন গৃহিত হয়। এর মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে জয় করতে হয়েছে ৭ টি চ্যালেঞ্জ। দৌড়, লং জাম্প, হাই জাম্প, পুশ আপ, সিট আপ, ড্রাগিং এবং রোপ কাইম্বিং) এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয় যা সম্পূর্ন স্বচ্ছ ও শতভাগ যোগ্যতার ভিত্তিতে সম্পন্ন করে ৪১১ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হয়।সেখান থেকে পাস করে ৯৪ জন। এর মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষে প্রাপ্ত নম্বর ও লিখিত পরীক্ষার নম্বর যোগ করে ৩৭ জনকে প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত হয়। এর মধ্যে ৬ জনকে প্রাথমিক ভাবে অপেক্ষমান হিসাবে রাখা হয়েছে।

LEAVE A REPLY