মোঃ আফজাল হোসেন ॥ ইলিশ মৌসুম আর ইলিশ থাকবে না তা ভাবতেও পারছে না এ ব্যবসার সাথে জড়িতরা। আগের মত জালে ধরা পরছে না কাঙ্গিত ইলিশ। যদিও এজন্য বেশির ভাগ জেলে এবং আড়তদাররা নিষিদ্ধজালকে দায়ী করছে। বার বার প্রশাসনকে বলেও লাভ হচ্ছে না বলে চরম ক্ষোভ জেলেদের মাঝে।
দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা। যার চারপাশটাই মেঘনা ও তেতুলিয়া বেস্টিত। ফলে এখানকার কয়েক লাখ মানুষ মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। তবে নদীতে ইলিশ কম থাকায় হতাশা দেখা দিয়েছে এসব জেলেদের মাঝে। খেয়ে না খেে কাটছে এদের সংসার। তার উপর এনজিও গুলোর লোনের বোঝাতো আছইে। প্রায় সময় সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেরা নদীতে নদীতে মাছ স্বিকারে নামতে পারছে না। এখন কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও তাদের কাঙ্গিত ইলিশ ধরা পরছে না তাদের জালে।
এসব বিষয় খোজ নেয়ার জন্য ভোলার তুলাতলীর মাঝি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন,আল্লাহ আমাদের উপর নারাজ হয়েছে,না হলে নদীতে মাছ থাকবে না ক্যান। এখন ইলিশের ভড়া মৌসুম। মাছে মাছে পরিপুর্ন থাকবে আড়ৎগুলো। অথচ সারাদিন জাল বেয়ে ৪/৫টা মাছ পাচ্ছি,যাতে তেল খরচ পর্যন্ত উঠছে না। ইলিশার জেলে সাগড় মাঝি বলেন,ইলিশ মৌসুম বলেই সরিয়তপু থেকে ইলিশ মাছ স্বিকার করতে প্রতি বছরের মত এবছর ভোলার মেঘনায় এসেছি। এখন দেখছি ইলিশের ধেকা নেই। মাছ না থাকার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন,মেঘনার মাঝখানের প্রায় স্থানে প্রভাবশালীরা খুটাজাল,বেহুন্দীজাল,মশারীজাল দিয়ে মাছ ধরছে। ফলে এসব জালে মাছের সমস্ত পোনা পর্যন্ত মারা যাচ্ছে। প্রশাসন আসলে আমরা বল্লেও কোন লাভ হচ্ছে না। কোস্টগার্ড আমাদের দৌড়ায় তাদের ঠিকই মাছ ধরতে দিচ্ছে। নৌ-থানার পুলিশ রয়েছে,যারা খোজ নিচ্ছে না নদীতে কি হচ্ছে না হচ্ছে।
এদিকে মনপুরা উপজেলার আড়ৎদার মোঃ ইউসুফ পাঠোয়ারী ও মোঃ ফিরোজ মিয়া বলেন,যতদিন এসব নিষিদ্ধজাল সরকার বন্ধ করবে না,ততদিন আমাদের অবস্থা খারাপই থাকবে। হাজার হাজার মণ জাটকা ইলিশ প্রতিদিন ঝুড়িতে করে ঢাকা যাচ্ছে। কোস্টগার্ড বলেন আর পুলিশ কেউ কিছুই বলছে না। নিষিদ্ধজাল বন্ধ করা জরুরী। আমরা এখন না খেয়ে মরছি। পজু শেষ করে এখন এনজিওর লোন নিয়ে চলতে হচ্ছে আমাদের।
শুধু মেঘনা বা তেতুলয়িা নয় খুব ভালো নেই সাগড়ের জেলেরাও। ৬৫দিন সাগড়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর গত ২৪জুলাই শেষ হয়েছে এর সময়। ৬৫দিন পর জাল,মাঝি-মাল্লা নিয়ে সাগড়ে নামতেই শুর ুহয়েছে নিন্মচাপ। তার মধ্যেও ইলিশের আশায় সাগরে নেমেছে ভোলার জেলেরা। তবে এসব জেলেরা বিগত দিনের ধার-দেনা পরিশোধ করবেন এমনটাই আশা ছিলো। ধার-দেনা পরিশোধের পাশাপাশি ঘুরে দাড়াতে পারবেন বলেও আশাবাদি ছিলেন এসব জেলেরা। পরিবার-পরিজন নিয়েও ভালো-ভাবে দিন কাটাবেন এমনটাই স্বপ্ন তাদের। বর্ষা এলেও ইলিশের ভরা মৌসুমে আশানুরূপ কাঙ্ক্ষিত পরিমান ইলিশের দেখা না পাওয়ায় হতাশায় পরেছেন জেলেরা। এতে করে জেলেরা নতুন করে জড়িয়ে পড়ছে ধারদেনায়। আর লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের।
এবার মৌসুম শুরু আগে অনেক জেলে এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সংগ্রহ করেছেন নতুন জাল ও নৌকা। কিন্তু দিন-রাত জাল ফেলে ৩/৪টি ইলিশ নিয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে বাজারে ইলিশের দাম চড়া হলেও মহাজনদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না জেলেরা। সেখানে প্রতারিত হতে হচ্ছে জেলেদের।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচরের পূর্বের চর মাছ ঘাটের ইউসুফ মাঝি বলেন,তারা সবাই সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ইলিশ ধরায় নিশেধাজ্ঞা থাকায় তাদের অনেকেই মাছ শিকারে যাননি। বৈরী আবহাওয়ার কারনে সাগরে যাননি, আবহাওয়া ভালো হলে সাগরে যাবেন। এবং সাগরে গিয়ে বিগত দিনের ক্ষয়ক্ষতি পুশিয়ে নেওয়ার আশায় আছেন। তবে এখন পর্যন্ত যারা গেছেনে তেমন একটাা মাছ না পেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে।
জেলে ও মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি এরশাদ মাঝি বলেন, সাগরে মাছ ধরা শুরু প্রথমদিনে জেলার ৮০ভাগ জেলে মাছ শিকারে গেছেন। তারা এইদিনের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন, এখন অপেক্ষার অবসান হলো। নদীতে তেমন একটা মাছ না পরলেও আমরা আশা করছি সাগরেও ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ পড়বে।
জেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা যায়, সাগরে মাছ ধরেন জেলায় এমন নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯৫৪ জন। এদের মধ্যে সদর উপজেলার ৩ হাজার ৬৯৮ জন, বোরহানউদ্দিনে ৭ হাজার ৬৫০ জন, দৌলতখানে ১১ হাজার ৫৫০ জন, লালমোহনে ৮ হাজার ৮০৪ জন, তজুমদ্দিনে ৪ হাজার ৫০৬ জন, চরফ্যাশন উপজেলায় ১৭ হাজার ৫৬১ জন ও মনপুরা উপজেলায় ১০ হাজার ১৮৫ জন। এর বাইরেও অনেক জেলে রয়েছে।
এসব বিষয় দক্ষিন জোনের স্টাফ কর্মকর্তা (গোেন্দা প্রধান) লে: এসএম তাহসিন রজমান বলেন,আমাদের বিশেষ অভিযান চলছে এসব নিষিদ্ধ জালের বিষয়। আমাদের একটি টিম এজন্য কাজ করছে। নিষিদ্ধ জালের বিষয় অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি এবছর নদীতে লোনা পানির পরিমান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিলো। যে কারনে ইলিশের প্রজননে কিছুটা বাঁধা পেয়েছে। তবে আশা করছি জেলেদের কাঙ্গিত ইলিশ তাদের জালে ধরা পরবে। তবে নিষিদ্ধ জালের বিষয় বলেন,এটা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আশা করছি প্রশাসন,পুলিশ, কোস্টগার্ড এর সহযোগীতা নিয়ে বন্ধ করা হবে।
উল্লেখ্য, সাগরে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইলিশসহ সকল প্রজাতির মাছ ধরা গত ১৯ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়।
ছবির ক্যাপসনঃ ভোলার মেঘনা ও তেততুলিয়া নদীতে এভাবেই খুটি দিয়ে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে আবার নদীর মাঝখানে ড্রামের সাথে বেঁেধ নিষিদ্ধজালে মাছ ধরা হচ্ছে। অপরদিকে জেলেরা ব্যস্ত কাজের ফাঁেক জাল ঠিক করা নিয়ে।