করোনায় অসহায় ভোলার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কওমী শিক্ষক

0
167
দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ভোলার সাত উপজেলার প্রায় ছোট-বড় সাড়ে চার শতাধিক  কওমী মাদ্রাসায় কর্মরত সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক অসহায় দিন কাটাচ্ছে। এ সকল আলেমদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ভরসা মাদ্রাসাগুলো বন্ধ থাকায় তারা কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেনা। এমনকি তারা চক্ষুলজ্বায় কারো কাছে চাইতেও পারছে না।  এ অবস্থায় তারা পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের তথ্য সূত্রে জানা যায়, ভোলার আঞ্চলিক কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ইত্তেদুল ওলামাইল মাদারিছের আওতায় জেলায় ১৮৩টি, বেফাকের আওতায় ৮২টি, বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ৩৩টি ও ছোট ছোট নুরানী ও হেফজখানা প্রায় ১৫০টিসহ সর্বমোট সাড়ে চারশতাধিক কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। এ মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার আলেম ও হাফেজ। এ মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের বেতনসহ যাবতীয় খরচ চালানো হয় ছাত্রদের বেতন ও মানুষের দানের টাকা দিয়ে। কিন্তু দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে মাদ্রাসাগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের বেতন দেয়া যাচ্ছে না। তাই এ সকল শিক্ষকরা এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা চক্ষুলজ্জায় কারো কাছে হাত পাততেও পারছে না। অর্ধাহারে অনাহারে না খেয়ে তারা দিন পার করছে।
ভোলা শহরের দরগা রোড কারিমিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মো. হারুন জানান, তার মাদ্রাসায় শিক্ষক ও কর্মচারী মিলে ১৫ জন স্টাফ রয়েছে। গত তিন মাস ধরে তাদের বেতন বাকী। দেশে চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন দেয়াসহ তাদেরকে সহযোগীতা করা দরকার। কিন্তু মাদ্রাসার ফান্ডে কোনো টাকা নেই। যারা এতদিন মাদ্রাসায় দান করতো তাদেরও অবস্থা বেশী ভালো না। তাই খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ভোলা জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মিজানুর রহমান জানান, দেশে করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশে গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভোলার সকল কওমী মাদ্রাসাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। মাসের মাঝামাঝি সময় হওয়ায় অনেক শিক্ষকই বেতন ছাড়াই বাড়ি চলে যেতে হয়েছে। এরই মধ্যে আরো এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পথে। কিন্তু এ শিক্ষকদের কোনো বেতন নেই। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও বেতন দিতে পারছে না। কারন মাদ্রাসা বন্ধ। তাই ছাত্রদের বেতন ও মানুষের দান কোনটাই নেই।
তিনি আরো জানান, দেশের এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশী কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এসকল কওমী আলেমরা। তাদের সংসার চলার একমাত্র মাধ্যম হলো মাদ্রাসার বেতন। সেটিও এখন বন্ধ। তারা কারো নিকট হাত পাততেও পারছেন না। অনেক শিক্ষক মোবাইল করে তাদের দুরবস্থার কথা জানালেও আমরা তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না। তাই আমরা এ সকল আলেমদের কথা চিন্তা করে গত এক মাস ধরে ভোলার জেলা প্রশাসক, ত্রাণ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা পাইনি।
মাওলানা মিজান জানান, সামনে রমজান মাস। এ মাসেই কওমী মাদ্রাসাগুলোতে মানুষের দান সদকাহ বেশী আসে। আর এ দিয়েই মাদ্রাসার পুরো বছরের খরচের বেশীরভাগ অংশ পূরণ করা হয়। এবং এর একটি অংশ দিয়ে শিক্ষকদের বকেয়া বেতনও পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এ বছর সে সুযোগও থাকছে না। এ অবস্থায় আমরা এসকল আলেমদের সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে “ওলামা ত্রাণ কমিটি (করোনা ও দুর্যোগ)” নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির মাধ্যমে আলেমদের সহায়তার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাই আমরা সরকার ও বিত্তবানদের কাছে এসকল অসহায় আলেমদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।

LEAVE A REPLY