অর্ধেক সময়েই শেষ করতে হলো অনশন

0
381

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বুধবার সকাল থেকে ছয় ঘণ্টার জন্য অনশনে বসেছিলেন নেতাকর্মীরা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশে অর্ধেক সময় পার হওয়ার পরই শেষ করতে হয় এই কর্মসূচি।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বাংলাদেশে আজ স্বাধীনতা নেই। আমরা অনশনের জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও নয়াপল্টনের পার্টি কার্যালয়ে অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের তা দেওয়া হয়নি। প্রেসক্লাবের সামননে অনুমতি দিল; কিন্তু বলল, দুপুর ১টার মধ্যে শেষ করতে। তাহলে কী করে স্বাধীনতা থাকে দেশে?’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সুশৃঙ্খল হন। কারণ, বিশৃঙ্খল নেতাকর্মী দিয়ে আন্দোলন হয় না। আমাদের নেত্রীও বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা, আমরা তাঁর নির্দেশ মেনে চলব।’

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আজিজ আহমেদ দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অনশন শুরুর পর প্রেসক্লাবের সামনের ওই এলাকা ব্লক হয়ে যায়। মানুষ ও যানবাহন চলতে পারছিল না। জনগণের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে বিষয়টি আমরা বিএনপি নেতাদের জানাই। আমরা বলার পর তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে জনস্বার্থে অনশন শেষ করেন।’

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ডা. মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথেও সক্রিয় বিএনপি। কর্মসূচি সফল করতে আজ সকাল ১০টার আগ থেকেই নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। এরপর আসেন বিএনপি ও জোটের জ্যেষ্ঠ নেতারা। ১০টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় অনশন।

এ সময় হাইকোর্টের কদম ফোয়ারার মোড় থেকে তোপকানা রোডের সচিবালয়ের গেট পর্যন্ত একপাশ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। নেতাদের বক্তব্য আর কর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে প্রেসক্লাব চত্বর। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা পুরোটাই নেতাকর্মীদের দখলে চলে যায়। তখন পুলিশ একটি গাড়ি চলতে পারে এমন রাস্তা তৈরি করে দেয়। যদিও উল্টো দিকের রাস্তা পুরোটাই যানবাহন ও মানুষ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

অপরদিকে বিএনপির এ অনশনকে ঘিরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সে জন্য সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রেসক্লাব ও আশপাশের এলাকায় ছিল অন্যদিনের তুলনায় অতিরিক্ত পুলিশ। এ ছাড়া সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ওই এলাকায় ছিলেন।

‘সরকার আগুন নিয়ে খেলছে’

অনশনে বিএনপি ও ২০ দলের নেতারা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। তাঁরা বলেন, সরকার আগুন নিয়ে খেলছে। কিন্তু এর পরিণতি ভালো হবে না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে সরকার। অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দিতে হবে।’

সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচন করতে চায় বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগকে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে সরকার আগুন নিয়ে খেলা করছে। এর পরিণতি ভালো হবে না। খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করেই আমরা আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে ২০ দলীয় জোট।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘ভুয়া মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। আমরা এ অন্যয় রায় মানি না, এটি জনগণের রায় না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনব। তাঁকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিচারের মানদণ্ড যেখানে দাঁড়িয়েছে, তাতে বিচারকদের ক্যালকুলেটর দেওয়া দরকার। কারণ, দুই কোটি টাকার জন্য পাঁচ বছরের সাজা হলে ১৪ কোটি টাকার জন্য কত দিন সাজা হবে? তাই এখন থেকেই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে গণনা শুরু করেন।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারছি না। আমরা যদি ঘুমাতে না পারি, তাহলে কাউকে শান্তিতে ঘুমাতে দেবো না। আমাদের নেত্রী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বলেছেন, তাই আমরা তাঁর নির্দেশ মেনে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি। এটাকে কেউ বিএনপির দুর্বলতা ভাববেন না, তাহলে ভুল করবেন।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিন, আমাদের সবাইকে নিয়ে যান। আমরা লক্ষ নেতাকর্মী জেলে যেতে প্রস্তুত আছি।’ পুলিশকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, ‘আমাদের টিয়ার শেল না মেরে, লাঠিপেটা না করে কারাগারে নিয়ে যান। আমাদের নেত্রীকে মুক্তি দিন।’

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু বলেন, ‘মাকে কারাগারে রেখে কোনো সন্তান ঘরে বসে থাকতে পারে না। বিএনপির চেয়ারপারসন আমাদের শুধু নেত্রী নন, তিনি আমাদের মা। আমরা তাঁকে মুক্ত করার আগে ঘরে ফিরে যাব না। বর্তমান সরকারের প্রধান টার্গেট জিয়া পরিবার। তাই খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। আমরা তাঁকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করে আনবোই।’

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, ‘ছাত্রদল শপথ নিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগর থেকে মুক্ত করা ছাড়া ঘরে ফিরে যাবে না। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে কারাগর থেকে মুক্ত করে আনব।’

অনশনে আরো উপস্থিত ছিলেন—বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, নিতাই রায় চৌধুরী, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ২০ দলের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল করিম, ন্যাপ-ভাসানীর মহাসচিব গোলাম মোস্তফা, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।

‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না’

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীরবিক্রম) বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনার সরকার রেহাই পাবে না। খালেদা জিয়াকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে।’

ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে প্রধানমন্ত্রী শান্তি পাবেন না। মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্তি দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।’

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে তাঁকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। তারা চায়, বিএনপি ও ২০ দলকে বাইরে রেখে ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন করে আবারও ক্ষমতা দখল করতে। কিন্তু সেটি আর করতে দেওয়া হবে না।’

এ ছাড়া অনশনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ।

LEAVE A REPLY