আদিল হোসেন তপু ॥ ভোলার মনপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানত উল্যাহ আলমগীর এর বিরুদ্ধে জেলেদের ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম- দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জেলেদের জন্য নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে চাল কম দেয়া, অন্য পেশাজীবীদেরও চাল দেয়াসহ নানা অভিযোগে জেলেদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান অবশ্য দাবী করছেন স্বচ্ছ ভাবে জেলেদের মাঝে চাল বিতরন করা হয়েছে। একটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব অভিযোগ করছে। এদিকে জেলেরা চাল কম দেয়ার অভিযোগ এনে মৌখিক ভাবে মনপুরা উপজেলার চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আর অভিযোগের সত্যতা মিললে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় প্রশসন।
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ভোলার মেঘনা তেতুলিয়ার ১৯০ কিলোমিটার নদীতে দুই মাস ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকারিভাবে নিবন্ধিত প্রত্যেক জেলেকে ৪ মাসে ৪০ কেজি করে মোট ১৬০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও এর মধ্যে (ফেব্রুয়ারী-মার্চ) দুমাসের ৮০ কেজি চাল দেওয়ার কথা। তবে মনপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানত উল্যাহ আলমগীর জেলেদের দিয়েছে ৩০ থেকে ৬০ কেজি করে চাল। বাকি চালের নেই কোন হদিচ। এছাড়াও ৮০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে এমন তালিকায় জোড় করে নেয়া হয়েছে টিপসই। তাছাড়া জেলের পরিবর্তে অন্য পেশাজীবিদের মাঝে চাল বিতরন করেছে চেয়ারম্যান। ফলে প্রকৃত জেলেরা চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়ে গেলো।
সম্প্রতি চাল বিতরণকালে দেখা গেছে, অনেকে জেলে কার্ড নিয়ে চাল নিতে এসে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাড়ি ফিরে গেছেন। মনপুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে চাল নিতে আসা জেলে জয়নাল আবেদিন, নাসির, মাইনউদ্দিন,আজিজ মাঝি সহ আরো অনেকেই জানায়, আমাদেরকে চেয়ারম্যান সাহেব ৩০ কেজি ওজনের একটি করে বস্তা দিয়েছে। বাকী চাল চেয়ারম্যান সাব রেখে দিয়েছে। এতে আমরা জনপ্রতি আনুমানিক ৫০ কেজি করে চাল কম পাইছি। অপরদিকে জেলে কার্ড নিয়ে চাল নিতে এসে চাল না পেয়ে জেলেরা বলেন, যারা কখনও জেলে পেশায় ছিলোনা তাদেরকেও চাল দিছে চেয়ারম্যান মেম্বাররা। কিন্তু আমরা প্রকৃত জেলে হয়েও করোনার মধ্যে এমন সংকট ময় সময়ে চাল দেয়নি চেয়ারম্যান।
জেলেরা আরো বলেন,সরকারের নিষেধ মতো নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখছি। এখন বেকার। পুনর্বাসনের চাইলের আশায় ছিলাম। অনেক জাইল্যা চাইল পাইছে। আমাদের জাইল্যা কার্ড থাকতেও চেয়ারম্যান সাব আমাগোরে চাউল দেয়নায়। এখন তো আমাদের সকলকে না খাইয়া মরতে হবে। বর্তমানে এই ইউনিয়নের কয়েকশ জেলে কার্ড থাকা সত্তেও জেলে সহায়তা না পেয়ে চরম কষ্টে দিন পাড় করছে। তাই বরাদ্দকৃত চাল পাওয়ারর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এবং দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান শাস্তি দাবি করেন।
চাল বিতরণের তদারকির দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার মনপুরা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব জেলেদের একটি একটি করে বস্তা দিয়েছে। জেলেদের কোন চাল কম দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
মনপুরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: ইলিয়াছ মিয়া জানায়, মনপুরা ইউনিয়নের ৮০১ জন নিবন্ধিত জেলের জন্য ২ মাসে ৬৪.৮ মেট্রিট টন চাল বরাদ্ধ দিয়েছে সরকার। এই চাল ইউনিয়নের নিবন্ধিত প্রত্যোক জেলেকে ৮০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে বলে জানায়।
মনপুরা ইউপি চেয়ারম্যান আমানত উল্যাহ আলমগীর জানায়, ওজনে কম চাল দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে করেন। সরকারি নিয়ম অনুয়ায়ী প্রকৃত জেলেদের চাল বিতরন করা হয়েছে।কোন অনিয়ম করা হয়নি। ট্যাগ অফিসার ও ইউনিয়ন সচিব এর উপস্থিতে চাল বিতরন করছি। কেউ কম পেলে হয়ত সামান্য কম হতে পারে। তবে বেশি নয় বলে তিনি দাবী করেন। চাল না পেয়ে জেলে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নে ২২শ’ জেলে রয়েছে। চাল বরাদ্দ পাইছি ৮০১ জনের। বাকি জেলেদের চাল পরে আসলে আবার দেওয়া হবে বলে জানায়।
মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস জানায়,চাল বিতরন কম দেওয়ার কথার বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী জেলেদের জন্য ভিজিএফ এর চাল প্রকৃত জেলেরা যদি চাল কম পায়,কিংবা কেউ চাল পায়নি এমন অভিযোগ করলে তা তদন্ত করে প্রমান মিললে স্থানীয় সরকার এর আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায়।
এদিকে করোনা পরিস্থিততে নি¤œ আয়ের,শ্রমজীবী,অসহায় দারিদ্র্য পরিবারের কর্মহীনদের তালিকা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে ওয়ার্ড প্রতি তালিকা করে সময় মতো জমা না দেয়া ও সরকারি কাজে অসহযোগীতা করার জন্য জন্য তাকে মনপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানত উল্যাহ আলমগীর কে কারন দর্শনো নোটিশ করে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে পিপিই পরে চাল বিতরন করায় স্থানীয় পর্যায়েও সমালোচনার মুখে পরেন। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে ইউনিয়নে ঘাট পছন্দের ইজারাদারদের কাছ থেকে গোপনে অর্থ নিয়ে ঘাট ইজারা দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।