ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট: ঈদে ঢাকা থেকে বের হওয়ার এবং সারা দেশ থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথে ১৪ জেলার বেহাল মহাসড়ক দুর্ভোগ বাড়াবে। এসব জেলার ছোট-বড় গর্তে ভরা অংশ জোড়া দিলে তা প্রায় ৫৩৭ কিলোমিটারের সমান হয়। এই বাধার শুরু রাজধানী ঢাকা থেকে। অনুসন্ধানে এই চিত্র উঠে এসেছে।
সেতু বিভাগের হিসাবে, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৬ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদে তা আরও হাজার দুয়েক বেড়ে যায়। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে ২০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করে বলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
গত বছর ঢাকায় পশু কোরবানি হয়েছে ৪ লাখ ৩৭ হাজার। এই পশুর প্রায় সবই দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় আসে। এ ছাড়া ঢাকা হয়ে দূরের জেলাগুলোতেও পশুবাহী যানবাহন চলাচল করে। এ ছাড়া ঈদে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ সড়কপথে ঢাকা ছাড়তে পারে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পর সবচেয়ে বেশি যান চলে বঙ্গবন্ধু সেতু ধরে। ঢাকার গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকেই বাস যায় এই পথে। রাজশাহী, রংপুর বিভাগের পুরোটা এবং খুলনা ও ঢাকা বিভাগের একাংশের যানবাহনের মূল যাতায়াত এই মহাসড়কে। যমুনা সেতু হয়ে অন্তত ২০টি জেলার মানুষ যাতায়াত করে।
কিন্তু গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে রংপুর পর্যন্ত পুরো পথই খানাখন্দে ভরা। এর মধ্যে জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলছে। ফলে যানবাহনের গতি কমে যানজট হচ্ছে। সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভোগরা বাইপাস এলাকা, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই থেকে টাঙ্গাইল বাইপাস পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা নাজুক অবস্থায় আছে। এরপর সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে বগুড়া পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পথে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মেরামত করা হলেও তা হারিয়ে যাচ্ছে। মহাসড়কের গাইবান্ধা অংশের ৩২ কিলোমিটারও ছোট-বড় গর্তে ভরা।
গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে রংপুর পর্যন্ত সোয়া ২০০ কিলোমিটার পথ চার লেন প্রকল্পের অধীন। চার লেনের ঠিকাদারই মহাসড়ক চালু রাখবে, এমন একটা চিন্তা সওজের। এ জন্য সেখানে ভারী কোনো মেরামত হচ্ছে না।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে ঢাকা-খুলনাপথে খুলনা, বরিশাল বিভাগের পুরোটা এবং ঢাকা বিভাগের ১৬ জেলার মানুষের যাতায়াত হয়। এই পথের যাত্রীদের বেশির ভাগই যাত্রা শুরু করেন রাজধানীর কলাবাগান, কলেজ রোড, কল্যাণপুর, মাজার রোড আর গাবতলী থেকে। শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত সড়কের এক-তৃতীয়াংশই কেটে নির্মাণকাজ চলছে। বাকি যে অংশটুকু দিয়ে যান চলে, তাতেও বড় বড় গর্ত। পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত বাকি সড়ক ভালোই।
এই মহাসড়কে যশোর-খুলনা, যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-মাগুরা ও যশোর-নড়াইল অংশ রয়েছে। এই পাঁচটি পথে ১৩০ কিলোমিটার হেলেদুলে যানবাহন চলাচল করছে। সাময়িক মেরামত হলেও তা যানবাহনের চাকার সঙ্গে আবার নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যশোর শহরের পালবাড়ি থেকে অভয়নগরের রাজঘাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটারের অবস্থা খুবই খারাপ।
ঢাকা থেকে দুই ভাগে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ওঠা যায়। একটি হচ্ছে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা হয়ে। অন্যটি মহাখালী থেকে টঙ্গী হয়ে। এই দুটি পথ ধরে সিলেটসহ নয়টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের সামনে থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালসড়কের নিচের সড়কের একাংশ মেরামতের কারণে বন্ধ। বাকি অংশে হাঁটুপানি জমে আছে। গতকাল বুধবার দুপুরে এই প্রতিবেদক আধা কিলোমিটার পথ মোটরসাইকেলে গেছেন এক ঘণ্টায়। কুতুবখালী হয়ে সায়েদাবাদ টার্মিনালে প্রবেশ করার পথেও বড় বড় গর্ত। আর উড়ালসড়ক ধরে চলতে গেলেও টোল প্লাজায় লম্বা জটে পড়তে হচ্ছে।
সিলেট যেতে ডেমরা হয়ে সুলতানা কামাল সেতু দিয়েও যাওয়া যায়। কিন্তু উন্নয়নের জন্য এই সড়কটিও কেটে একাকার করা হয়েছে। গভীর গর্তে যান চলার জো নেই। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া কাপড়ের হাটের কাছে উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই যানজটে পড়তে হচ্ছে।
অন্যদিকে টঙ্গী ও ঘোড়াশাল হয়ে যাওয়ার পথটি আরও অচল। টঙ্গী থেকে নরসিংদীর পাঁচদোনা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্ত এতটাই গভীর যে কিছু কিছু স্থানে বাসের কাঠামো মাটিতে লেগে যাচ্ছে।
ঢাকা থেকে সিলেটের তামাবিল পর্যন্ত ২৮৭ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের শেরপুর থেকে সিলেট শহর পর্যন্ত অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটে প্রায় ৯০ কিলোমিটার মহাসড়কে ছোট-বড় গর্ত রয়েছে।
সওজ সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেটপথে ২১৫ কিলোমিটার চার লেন করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। এই মহাসড়কে আগামী কয়েক বছরে ভারী মেরামতের সম্ভাবনা কম।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন হওয়ার কারণে বড় কোনো সমস্যা নেই। তবে যাত্রাবাড়ী থেকে কুতুবখালীর দুর্ভোগ—এই পথের মানুষকেও পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া মেঘনা-গোমতী সেতু দুটি দুই লেনের এবং এর দুই পাশের সড়ক চার লেনের। ফলে বিপুল যানবাহন সেতুতে এসে আটকে যাচ্ছে। সেতুর টোল প্লাজা ও ওজন নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে লাইন পড়ে যাচ্ছে। এই দুই সেতুতে প্রায়ই যানবাহন বিকল হয়। যা ঈদে ভোগান্তির কারণ হতে পারে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে চলতে গেলে টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারজুড়ে খানাখন্দ। বর্ষার পানি জমে থাকছে স্থানে স্থানে। বাকি অংশ চার লেন করা হয়েছে গত বছর, কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ময়মনসিংহের পর নেত্রকোনা ও জামালপুরের দিকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ। এই মহাসড়ক ধরে সাত জেলার মানুষ যাতায়াত করে।
ঢাকা-দক্ষিণবঙ্গের পথে যাত্রাবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের কাজ চলছে। এই অংশে সড়ক ভালো, নির্মাণকাজের কিছু ঝক্কি তো থাকছেই। তবে উজিরপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত প্রায় ৭৬ কিলোমিটার পথের পুরোটাতেই স্থানে স্থানে গর্ত। এর মধ্যে চলছে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ।
জানতে চাইলে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এই ঈদে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। এর মধ্যে ৩০ লাখ সড়কপথে যাতায়াত করবে। বন্যার কারণে রেলে আশানুরূপ যাত্রী পরিবহন না-ও হতে পারে। আবার পশুবাহী যানবাহনের ঢাকামুখী স্রোত তো আছেই। সব মিলিয়ে একটা আশঙ্কার পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনি অভিযোগ করেন, সড়ক মেরামত এক দিনও টিকছে না। এর মূল কারণ রাজনৈতিক ঠিকাদার। এঁরা বিল আদায় করে নেন। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ আদায় করতে পারে না। ফলে ভোগান্তি হয় মানুষের।