ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট : তমব্রু সীমান্তে নিজেদের অংশের দেড়’শ গজের মধ্যে ভারী অস্ত্রসহ অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। এ নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ কে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার বিকালে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব এম খোরশেদ আলম তাকে তলব করেন। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদপত্র রাষ্ট্রদূতের কাছে দেয়া হয়। সীমান্তে উত্তেনাকর পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন বিষয়ে রাষ্ট্রদূত লুইন উ-এর কাছে জানতে চাওয়া হয় এবং বলা হয় এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ভালো নয়। তাকে একটি নোট ভারবাল বা আনুষ্ঠানিক পত্র ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখা হচ্ছে না বলে জানানো হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে আলোচনা হয় এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ ধরণের কার্যত্রম গ্রহণ না করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। কারণ, সীমান্তে সামরিক শক্তি বাড়ালে নো ম্যানসল্যান্ডে যে ৬ হাজার রোহিঙ্গা আছে তারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে আগ্রহী হবে না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর গোটা প্রক্রিয়াটি অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।
এদিকে সীমান্তে ভারী অস্ত্রসহ মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মিয়ানমারের কাছে একটি প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড ট্রেনিং) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুল হক। বৃহস্পতিবার বিজিবির সদর দফতর পিলখানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
মুজিবুল হক বলেন, সীমান্তে মিয়ানমারের কর্মকাণ্ড গভীর পর্যবেক্ষণে রেখে বিজিবির শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। জরুরী পতাকা বৈঠক আহ্বানের পাশাপাশি মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনের ঘটনায় বিজিবি প্রতিবাদ পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, তমব্রু সীমান্তের জিরো লাইন এলাকায় বেশ কিছু রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। এলাকাটি মিয়ানমার অংশে। কিছুদিন ধরে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনী তমব্রু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া, সেগুলো আরো মজবুত করা, উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সার্ভেলেন্স ইকুয়েপমেন্ট স্থাপন করার কাজ করছে। এর মধ্যে মাইকের মাধ্যমে সেখানকার রোহিঙ্গাদের অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য তারা বারবার বলছে, যা গত একমাস ধরে চলছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে তমব্রু সীমান্তের ৩৪ ও ৩৫ পিলারের মাঝামাঝি এলাকায় মিয়ানমার অংশের প্রায় ১৫০ গজ ভেতরে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে। বেশ কিছু মিলিটারি প্যাটার্নের পিকআপের ট্রাক-লরির মাধ্যমে তারা সেখানে ভারী অস্ত্র স্থাপন করেছে। আমরা সার্ভেলেন্স ও ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমে এসব তথ্য জানতে পেরেছি। এরপর থেকে বিজিবিও সতর্ক অবস্থানে আছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের আহ্বান জানিয়েছি। এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আশা করি, দ্রুততম সময়ে এর সমাধান হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মিয়ানমার পতাকা বৈঠকে সাড়া না দিলে বিজিবি কী ব্যবস্থা নেবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বর্ডার এলাকায় ভারী অস্ত্র মোতায়েন, সৈন্য সমাবেশ করা বর্ডার নর্মসের বাইরে। আমরা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সতর্ক অবস্থানে আছি। যে কোনও ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত।
মিয়ানমার কী কারণে এবং কী পরিমাণ সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে, এমন প্রশ্নে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, সৈন্যদের সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তবে সীমান্তে তারা যে পরিমাণ সৈন্য মোতায়েন করেছে তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। আর সেজন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে থেকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর কী কারণে তারা সৈন্য মোতায়েন করেছে, সেটা জানার জন্যই ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের আহ্বান করা হয়েছে। আলোচনায় বসলে জানা যাবে।
জানা গেছে, মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়া সীমান্তের তংপিও লিতওয়ে এলাকায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি উভয় দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠকের পরও তমব্রু সীমান্তে থাকা রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারের ভীতি প্রদর্শন থামেনি। আতঙ্কিত হয়ে নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গাদের মধ্যে অধিকাংশ সরে গেছে তমব্রু সীমান্ত থেকে। বেশ কিছু রোহিঙ্গা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়ে জিরো পয়েন্ট ছেড়ে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় জড়ো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন অঙ্গরাজ্যে সেনাবাহিনী অব্যাহত নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো শুরু করলে দেশটি থেকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তমব্রু-কোনারপাড়ার নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান নেয় সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গা। সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে এ সংক্রান্ত কয়েকটি বৈঠকে এই সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে নিজেদের বাড়িঘরে পূণর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেয় মিয়ানমার। কিন্তু এখন সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে এসব রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে মিয়ানমার।