চায়ের দোকানদার মঞ্জুর ঘুরে দাডানোর চেষ্টা

0
1879

ইমতিয়াজুর রহমান /ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট : ভোলা সদর রোড বাংলা স্কুল মোড়ে পাঁচতালা ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর পাশে গলির ভিতরে ঢুকলে দেখা মিলে একটি চায়ের দোকান।অল্প পরিসরে দোকানটি হলেও বেশ নাম আছে এলাকায়।সকাল বিকেল রাত সব সময় জমজমাট থাকে দোকানটি।বাংলাস্কুল মোডে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে মুনজুর চায়ের দোকান। কারো কাছে মনজু ভাই আবার কারো কাছে মনজু মামা। তিনি কর্মজীবনে চায়ের দোকানদার হলেও আগে তিনি ছিলেন সদরে টিভি ভিছিডি ও ফাস্টফুড ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তার বাবা ছিলেন এডভোকেট।তাদের ছিলো অনেক জমি জমা অর্থ সম্পদ।কিন্তু সময়ের পরিপেক্ষিতে তিনি আজ চায়ের দোকানদার মনজু । মঞ্জুর চায়ের দোকানে বসে চা খেতে গিয়ে,মঞ্জু সাথে আড্ডায় তিনি তার জীবনের গল্প বলেন।

তার কাছে তার জীবনী জানতে চাইলে সে ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট কে বলেন । ভোলা সদর ওয়েষ্টেন পাড়া নিবাসি এডভোকেট মজিবোর হকের ছোট ছেলে ছিলেন তিনি। সে জানায় তার চায়ের দোকানদার হয়ে ওঠার কারন। মনজু  বলেন ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ আমার নানা বাসায় আমার জন্ম হয়।আমরা তিন ভাই তিন বোন। শৈশবকালে বড় ভাই বোনদের সাথে ভালই সময় কাটতো আমার। শৈশবকালে পড়ালেখায় আমি মোটামুটি ভালই ছিলাম। সময়টা বেশ ভালই যাচ্ছিলো, সংসারে অভাব অনটনের মূখ দেখিনি কখনো।

হঠাৎ করেই বাবার সাথে চাচা ও প্রতিবেশির সাথে জমি জমা নিয়া মামলা হয় তখন আমার বয়স ছিল (৫) বছর এসময় আমাদদের পরিবার এর সবাই উকিল পাড়া ভাড়া বাসায় চলে আসি। আমার বাবা ও চাচা,চাচাতো ভাই দের দেওয়া মামলা দীর্ঘ দিন চালাতে যেয়ে বাবার নিজের সঞ্চয়ের টাকা সব খরচ করে ফেলেন। তখন থেকেই সংসারে অভাব অনটনের সৃষ্টি  হয়। তখন তিনি সরকারি  পি পি ছিলেন।

আমার মেঝো ভাই মোঃ মমিনুল হক তিনি ছিলেন আমার তিন বছর এর বড় তার সাথে আমি আড্ডা দিতাম, সে ছিলে আমার বন্ধুর মত আমার খেলার সাথী  তার অকাল মৃত্যুতে আমাদের পরিবার ও আমার পড়া লেখা এলোমেলো হয়ে যায়। আমার বাবা ও দাদার প্রচুর জমি জমা ও অর্থ সম্পদ ছিলো কিন্তু তা পরিচালনার ভুলে আমরা ধরে রাখতে পাড়িনি।

আমি নিজের ইচ্ছায় ভোলা আব্দুর বর স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই আমার পড়ালেখার খরচ আমি নিজেই যোগাতাম আমাকে বাসা থেকে নাস্তা করার জন্য টাকা দিতো তা জমাতাম এবং মাঝে মাঝে আমার প্রতিবেশিদের কাজ করে দিতাম তারা খুশি হয়ে যে টাকা দিতো তা দিয়েই কোন রকম পড়া-লেখার খরচ চালাতাম।যখন আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার বাসায় আমি একটা ছোট বাস্কে করে  মুদির দোকান দেই সেখানে চাল, ডাল,লবন,চিনি ইত্যাদি পন্য বিক্রয় করতাম তা থেকে সিমিত লাভ হত তা দিয়ে আমি আমার পড়ালেখার খরচে দিতাম।টাকার জন্য প্রাইভেট পরতে পারিনি তাই আমার খালাতো ভাই এর কাছে যেয়ে তার সাথে পড়তাম।তার সাহায্যে ১৯৯৫ সালে আমি এসএসসি পরিক্ষা দেই।

dav

আমার বাবার অনেক অর্থ সম্পদ থাকার পরে ও মামলা মোকাদ্দমার কারনে আমাদের ভাই বোনের জামা কাপর দিতে পারতো না, আমার মা সাংসারিক খরচ থেকে বাচিয়ে আমার বোনেদের জামাকাপরের জোগান দিতো,আর আমরা ভাইরা আমাদেরটা নিজেরাই ব্যস্থাকরতাম। ১৯৯৬ সালে আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করি একখানা লাল ডাইরি ও কিনি কিন্তুু পরিবারের অর্থিক সমস্যার কারনে আমার কলেজে পড়া আর হলোনা।বোনের বিয়ে খরচ দিয়ে বাবাকে সাহায্য করি। ২০০১ সালে আমার বাবা মারা যায়।
তার পর থেকেই সংসারের হাল ধরি,ভাইদের সাথে কাজ করি।নিজের জমানো টাকা দিয়ে একটি ভিসিয়ার কিনি ও বাসার টিভি এনে ভাড়া দেই,এভাবে ভালোই পুঁজি জমে আমার।এক বড় ভাইয়ের সাথে শেয়ারে সদরের টিভি ভিসিডি দোকানদেই।এক বছর পার করতেই তারা নানা ফন্দি করে আমার পুজি খেয়ে ফেলে। তিন মাস বাসায় বসে থাকি।নিজের জমানো ডিপিএস ভেঙে
সেই টাকা দিয়ে বড় ভাইয়ের সাথে ফাস্টফুড দোকান দেই সেই দিন টি ছিল আমার জন্মদিন।ব্যাবসা ভালোই ছিল।২০১৩ সালে বিয়ে হয় বিয়ের কিছু বছর পর ভাইয়ের সাথে পারিবারিক দন্দে ভাইকে ৫০%ক্যাস বুঝিয়ে দিয়ে নিজে দোকান ছেরে দেই।তার পরেই আমার ছোট্ট এই চায়ের দোকান শুরু করি ভাগ্যক্রমে সেই দিন টি ও ছিল আমার জন্মদিন।

এখন আমার ২ বছরের একটি মেয়ে আছে।ছোট্ট পরিবার নিয়ে এখন ভালই আছি দিনআনি দিনখাই। ছোট বড় সবার সাথে আড্ডা গল্প  দুষ্টামিতে সারাদিনের ক্লান্তি  ফেলে আশা সৃতি ও কষ্ট  দূর হয়ে যায়। সব মিলিয়ে বলতে চাই আমি ভালো আছি।

LEAVE A REPLY