ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট : বাংলাদেশের ২১তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন মো. আবদুল হামিদ। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরি তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি পদে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিলেন তিনি।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি তাকে অভ্যর্থনা জানান।
বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বাধীনতার পর থেকে ১৭ ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে মো. আবদুল হামিদই হচ্ছেন প্রথম ব্যক্তি যিনি পরপর দু’বার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
২৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন জমা দেয়ার তারিখ ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি এবং নির্বাচনের তারিখ ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নাম দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়। এ নির্বাচনে আর কেউ প্রার্থী না হওয়ায় ভোটাভুটির আর প্রয়োজন হয়নি।
২০১৩ এর ২৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ। প্রথম মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রিত জীবন নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হওয়া আবদুল হামিদ। তার ভাষায়, তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিকদের জন্য বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রিত জীবন ‘সবসময় আরামদায়ক’ নয়। ‘খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেয়া হোক, সে তো আর বনের পাখি না। আমি একটা দায়িত্ব হিসেবে এখানে এসেছি। সংসদে মনের খোরাক পেতাম, বঙ্গভবনে পাই না। মনটা অনেক কিছু চায়।’
প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার পর এক অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনের পরিবেশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেছিলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে জেলে ছিলাম। এখনো জেলে আছি। পার্থক্য আগে স্যালুট দিত না, এখন দেয়।
কিশোরগঞ্জের আবদুল হামিদ ১৯৯৬ সালে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর স্বভাবজাত হাস্যরস দিয়ে সংসদ মাতিয়ে তুলে বেশ জনপ্রিতা পান। পরে স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এক মেয়াদে সংসদ উপনেতাও ছিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর নিয়ম অনুসারে দলের সঙ্গে তার সম্পর্কোচ্ছেদ ঘটাতে হয়।
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্ম নেয়া আবদুল হামিদ কৈশোরেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আবদুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন। সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ২০০১ এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসেবে সংসদ পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ। আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন।
২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বঙ্গভবনের বাসিন্দা হন আবদুল হামিদ। এই দায়িত্বে ধরাবাঁধা নিয়মের ছকে থেকেও বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্বভাবসুলভ হাস্যরসের মধ্য দিয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন মানুষের খুব কাছে। ‘মিতব্যয়ী’ আবদুল হামিদ প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর চিকিত্সার জন্য বাইরে গিয়ে নিজের এবং সফরসঙ্গীদের খরচ কমিয়ে সংবাদের শিরোনামে আসেন।
২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন, বিদেশ সফরে হোটেলের ভাড়া কমিয়েছি। সিঙ্গাপুরে আমার হোটেলের ভাড়া ছিল ৬ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার। সেটা কমিয়ে ৬০০ ডলারে এনেছি। স্পিকার থাকার সময় একা যেতাম। এখন তো আর সে উপায় নেই। সফরসঙ্গীদের হোটেল ভাড়াও অর্ধেক করেছি। রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়া নিয়েও কথা বলেছেন আবদুল হামিদ। ২০১৫ সালের অক্টোবরে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ীদের হাতে থাকা দেশের জন্য ‘কলঙ্কজনক’।
রাষ্ট্রপতি হামিদের মেয়াদ ফুরিয়ে আসায় ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। ৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন দাখিলের দিন একমাত্র আবদুল হামিদের মনোনয়নপত্রই জমা পড়ে। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার পর শুধু ১৯৯১ সালেই রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন হয়েছিল। এরপর সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।