ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।।আজ শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। গত বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ সম্পন্ন হয়েছে। আজ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দিচ্ছেন।
আজ সকাল আটটায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের প্রধান এই জামাতে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ঈদ জামায়াতকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। নামাজে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।
সকাল থেকেই জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার জন্য সব বয়সী মানুষের ঢল নামে। সারিবদ্ধভাবে মুসল্লিরা ঈদগাহে প্রবেশ করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের জামাত উপলক্ষে বাড়তি সতর্কতা নেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখে হাসিনা গণভবনে সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এ ছাড়া পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশ, জাতিসহ গোটা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও বিশ্বশান্তি কামনা করেছেন।
এদিকে চট্টগ্রামে সকাল পৌনে আটটায় নগরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় ওয়াসা মোড়ের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে। এতে নামাজ আদায় করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। নামাজ শেষে দেশের শান্তি ও উন্নয়ন, জনগণের কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। নামাজ শেষে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নিজ বাসায় পড়ে গিয়ে কোমরে আঘাত পাওয়ায় চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে ঈদের নামাজে এবার উপস্থিতি ছিলেন না। মেয়রের সুস্থতার জন্য নামাজ শেষে মোনাজাত করা হয়েছে।
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হন। কিন্তু আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবানিতে ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায় পশু কোরবানি করে থাকেন। পশু কোরবানির কারণে এই ঈদ সাধারণ মানুষের কাছে কোরবানির ঈদ বলেই পরিচিত।
ঈদুল আজহায় মুসল্লিদের প্রধান কর্তব্য দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ জামাতে আদায় করে আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা। ঈদের জামাতের খুতবায় খতিব ঈদের তাৎপর্য তুলে ধরেন। নামাজ আদায়ের পর শুরু হয় কোরবানি। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা হলেও ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে।
দেশে এবার একটু ভিন্ন পরিস্থিতিতে ঈদ উদ্যাপিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টিতে প্রবল বন্যা হয়েছে কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয়। অসংখ্য পরিবার ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকায় ফসলহানি হয়েছে। অনেক এলাকার ঈদগাহও ডুবে গেছে। পানি নামতে শুরু করলেও অনেক ঈদগাহে এখনো ঈদের জামাত আদায় করার মতো পরিবেশ নেই। সেসব জায়গায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদুল আজহার জামাত।
বন্যাকবলিত শস্য সম্পদ হারানো মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁধ, সড়ক বা উঁচু স্থানে অস্থায়ী ঝুপড়িঘর করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পরিস্থিতির বাস্তবতায় এসব দুর্গত মানুষের পক্ষে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। তবে সমাজের বিত্তবান, সামর্থ্যবান, যারা কোরবানি করবেন, তাঁদের কোরবানিতে হক রয়েছে দুস্থ অসহায় মানুষের। এটি ধর্মেরও বিধান। কাজেই আনন্দের দিনে আর্ত-অসহায় মানুষের কথা ভুলে থাকলে চলবে না। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এই আনন্দের দিনে ওই অসহায় নিঃস্ব মুখগুলোতে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারলেই সার্থক হবে ঈদের আনন্দ উদ্যাপন।