ভোলা নিউজ ২৪ডটনেট : পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে নতুন করে বাড়ছে ব্যয়। পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চরের জমি কিনতেই এই অতিরিক্ত ব্যয়। প্রকল্পের আওতায় চরের বুকের অতিরিক্ত ১ হাজার ১৬২ দশমিক ৬৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে এর মধ্যে ৯ দশমিক ৩৫ হেক্টর জমি মাওয়া প্রান্ত্মে আর ১ হাজার ১৫৩ দশমিক ৩২ হেক্টর জাজিরা প্রান্ত্মে।
প্রকল্প হাতে নেয়ার সময় মনে করা হয়েছিল পদ্মার বুকে জেগে ওঠা ১ হাজার ১৬২ একর জমি খাসজমি। এই জমিতেই হয়তো ড্রেজিং করা মাটি ফেলা হবে। কিন্তু এসব জমি জেগে ওঠার পর তাতে ঘরবাড়ি তৈরি করে ফেলেছে সাধারণ মানুষ। এমনকি অনেকক্ষেত্রে এরই মধ্যে এসব জমির বাসিন্দাদের নামে খতিয়ানও তৈরি হয়ে গেছে। নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করছেন নতুন এসব চরের বাসিন্দারা। ফলে এগুলো আর খাসজমি হিসেবে নয়, বরং নতুন করে টাকা দিয়েই অধিগ্রহণ করতে হবে সেতু কর্তৃপক্ষকে।
সর্বশেষ পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মূল ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্ত্মাব) থেকে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ অতিরিক্ত ১ হাজার ৪০০ টাকা বাড়ছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় এখন বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মানে মোট ব্যয় থেকে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ বাড়ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের প্রস্ত্মাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্ত্মাব নিয়ে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ কয়েক দফা বৈঠকও করেছে। তবে বৈঠকে অতিরিক্ত ব্যয়ের সিদ্ধান্ত্ম চূড়ান্ত্ম হয়নি। এখন ব্যয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত্ম নেবে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্ত্মবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সেতু বিভাগের প্রস্ত্মাবে অতিরিক্ত ব্যয় সঠিক কিনা এই বিষয়ে তদন্ত্ম করতে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবে আইএমইডি। এর পরই ব্যয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত্ম চূড়ান্ত্ম করা হবে।
আইএমইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘চরের ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা দাবি করেছে সেতু বিভাগ। তবে এই দাবি যৌক্তিক কিনা তা খতিয়ে দেখতে আমরা সরেজমিন সেতু প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করব। এর পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত্ম নেয়া হবে।’
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, চারটি মৌজায় কাঁঠালবাড়ী (মাদারীপুর), বটেশ্বর (মুন্সীগঞ্জ), রণজিত খাঁ (মাদারীপুর) ও মাদবরেরচর (মাদারীপুর) মৌজায় চরের ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। তবে জমি নিয়ে এক ধরনের ঝামেলা তৈরি হয়েছে। স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্টের ৮৬ ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের এডি লাইন (প্রশাসনিক লাইন) টেনে জমির খাজনা বন্ধ রাখা হয়। যদিও এই অতিরিক্ত জমি ৩০ বছরের মধ্যে খতিয়ানভুক্ত হয়। ৩০ বছরের মধ্যেই এসব জমি ভোগদখলকারীর নামে খতিয়ানভুক্ত হয়। রেকর্ডও হয়। ফলে এসব জমি আর চর হিসেবে থেকে নেই বরং ব্যক্তিমালিকানার জমি হয়ে গেছে। চরের জমির মালিকানা নির্ধারণের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের এখতিয়ারভুক্ত। সংশিস্নষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জমির মালিকানা নির্ধারণ করা হয়। ফলে অতিরিক্ত জমি টাকা দিয়ে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায়।
সেতু বিভাগ আরও জানায়, মূল ডিপিপিতে ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় প্রাক্কলিত ছিল ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। কিন্তু এখন মোট ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে ২ হাজার ৬৯৮ হেক্টর। অতিরিক্ত জমি বাবদ মোট ব্যয় প্রয়োজন ২ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। কারণ চরে অতিরিক্ত ১ হাজার ১৬২ দশমিক ৬৭ হেক্টর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ আরও এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। আর তাই পদ্মা সেতু প্রকল্পের সামগ্রিক ব্যয়ও যাবে বেড়ে।