গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে দুই উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার বেলা দুইটার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ বন্ধের ঘোষণা দেন।
ভোট বন্ধের খবরে বেলা তিনটার দিকে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজের নেতৃত্বে মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তাঁরা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসানের কর্মী-সমর্থকেরা পরিষদের সামনে সড়কে অবস্থান নেন। পরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই সময় সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চত্বরে খণ্ড খণ্ড মিছিল করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, উদাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দিনের বেশির ভাগ সময়ই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন বন্ধ ঘোষণার কোনো কারণ নেই।
এদিকে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বোনারপাড়া এলাকায় সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান। তিনি স্থগিত কেন্দ্রগুলো বাদ দিয়ে বাকি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদ হাসান বলেন, উপনির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে প্রায় সারা দিন ভোট দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে বেলা তিনটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তারা কারও কাছে কোনো অভিযোগ দেননি। অথচ যৌক্তিক কারণ ছাড়াই নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে, যা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে।
মাহমুদ হাসান আরও বলেন, কিছু কেন্দ্রে ভোট স্থগিতের কমিশনের একতরফা ওই সিদ্ধান্ত তাঁরা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কমিশন উপনির্বাচন বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। এটা সাধারণ ভোটারদের হতাশ করেছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। তিনি অভিযোগ করেন, যেসব কেন্দ্রে কমিশন ভোট গ্রহণ স্থগিত করে, অধিকাংশই জাতীয় পার্টির প্রার্থী পরিকল্পিতভাবে কাজটি করেছেন। এটা ষড়যন্ত্র ও রহস্যজনক। প্রথম যে ৪৪টি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়, সেগুলো বাদে বাকি কেন্দ্রগুলোর ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান তিনি।
এদিকে উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত এ এইচ এম গোলাম শহীদসহ অন্য প্রার্থীরা। গোলাম শহীদ বলেন, ভোটে অনিয়ম হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখেছে। তাই কমিশন প্রথমে ৪৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে এবং পরবর্তী সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। কমিশন নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে করা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮ জন। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান, জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনীত এ এইচ এম গোলাম শহীদসহ উপনির্বাচনে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ইভিএমের মাধ্যমে ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি বুথে ভোট গ্রহণ করার কথা ছিল। এ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।