ভোলা নিউজ২৪ডটকম॥ ভোলায় মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর মোঃ মুনসুর আলম বাদী হয়ে মোঃ আকতারুজ্জামান (বাবুল) সহ আরো কয়েকজনকে আসামী করে ভোলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-এমপি ৪১৫/২০। সম্প্রতি ভোলার একটি পত্রিকা অফিসে এসে ভুক্তভোগী আকতারুজ্জামান বাবুল এমন অভিযোগ তুলে ধরেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ মনসুর আলম এর পরিবারের সাথে একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ আকতারুজ্জামান বাবুল এর পরিবারের মধ্যে জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছে। বাদী মোঃ মুনসুর আলম এর পিতা- মৃত: আঃ মোতালেব হওলাদার এবং আসামী আকতারুজ্জামান বাবুল এর পিতা- ছালেম হাওলাদার পরস্পর আত্মীয়-স্বজন। বাদীর পিতা ও ১নং আসামী ছালেম হাওলদার ভাই। তারা ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চরকারী মৌজার এস.এ ১৩৪ ও ১৩৫ নং খতিয়ানে ওয়ারিশসূত্রে জমির মালিক হয়ে ভোগ দখল করে আসছেন। ওই খতিয়ানে উভয় পক্ষের মালিকগণ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। উভয় গ্রুপ ওই বিরোধীয় সম্পত্তিতে তাদের জমি আছে বলে দখলের চেষ্টা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ ইং তারিখে ছালেম হাওলাদারের ছেলে আকতারুজ্জামান বাবুল ওই জমিতে কুমড়া গাছের চারা রোপন করে ভোলা শহরে চলে আসেন। এই খবর পেয়ে বাদী মুনসুর আলম আলীনগর থেকে সেখানে গিয়ে বাবুলের রোপনকৃত কুমড়া গাছের চারা উপরে ফেলে দেন। এবং ট্রিলার দিয়ে ওই জমিতে হাল চাষ দিয়ে ডালের বিজ বপন করেন দখলে আছেন।
এদিকে বাদী মুনসুর আলম গংরা মামলায় উল্লেখ করেন যে, ওই দিন বাবুল গংরা দা, ছেনী, কুড়াল ও করাতসহ বিরোধীয় জমিতে প্রবেশ করে গাছ ও নাল জমিতে মটি খননের চেষ্টা করেন। আসামীদের সেখানে জমি না থাকা সত্ত্বেও তারা জমি বিক্রি করার জন্য নিজের জমি দাবী করে অপরজনকে দেখায়। বিষয়টি জানতে পেরে মুনসুর আলম বাধা দিলে বাবুল গংরা তাকে খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দেয়।
এ ঘটনার বিষয় নিয়ে উভয় পক্ষই পৃথক পৃথকভাবে পুলিশ প্রশাসনকে জানালে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নিজ নিজ পক্ষে কাগজপত্র ও লোকজন নিয়ে থানায় বসার আহ্বান জানান। উভয় পক্ষই কাগজ ও লোকজন নিয়ে থানায় বসেন। কাগজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে উভয় পক্ষই ওই বিরোধীয় সম্পত্তিতে জমি পাবেন। কিন্তু এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলে কোন সমাধানে না পৌছেই সেখান থেকে স্থান ত্যাগ করেন। এর পরই মুনসুর আলম গংরা ছালেম হাওলাদার গংদের বিরুদ্ধে কোর্টে গত ২১ ডিসেম্বর একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং- এমপি ৪১৫/২০। কোর্ট থেকে ওই মামলা তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন ভোলা থানাকে। ভোলা থানা ডিবির এসআই মাহাবুবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং তদন্ত করে যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে ১ ও ৩ নং আসামীকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ২নং আসামীকে রেখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আকতারুজ্জামান বাবুল অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবার ওয়ারিশ এবং ক্রয় সুত্রে ভেদুরিয়ার চরকারী মৌজার এস.এ ১৩৪ ও ১৩৫ নং খতিয়ানে জমির মালিক হন। সেখান থেকে আমার বাবা কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেন। কিন্তু মুনসুর আলম গংরা দাবী করেন যে আমাদের নাকি সেখানে কোন জমি-ই নাই। এ বিষয় নিয়ে একাধিকবার শালিস মিমাংসার জন্য বসা হলেও কোন সমাধানে পৌছা যায়নি। কিন্তু গত ১৫ ডিসেম্বর তারিখে একটি ঘটনা উল্লেখ করে মুনসুর আলম গংরা যে মামলা করেছে তা সম্পূর্ণ মিথা ও ষড়যন্ত্রমূলক। ওই দিন আমার সাথে তাদের কোন দেখা হয়নি। আমার সাথে যেতেহু দেখা হয়নি সেহেতু তাদেরকে কোন প্রকার খুন করার হুমকিও দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমি বিরোধীয় জমি থেকে কোন প্রকার গাছ এবং মাটি কাটি নাই। তারা বিরোধীয় ১৩৪ ও ১৩৫ নং খতিয়ানে ১১৮৭ দাগের জমিকে উল্লেখ করেছেন বাড়ী বলে। এটা যেহেতু নাল জমি তাই সেখানে কোন গাছ থাকা এবং তা কাটার প্রশ্ন উঠে না।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে তারা ওই জমিতে নিজেদের যতটুকু আছে তার চেয়ে বেশী দখল করে হাল চাষ দিয়ে জবর দখল করে আছেন। তারা আমাদের বিরুদ্ধে যে মামলাটি দিয়েছে তাতে প্রাথমিক পর্যায়ে আমার বাবা কে প্রধান আসামী করা হয়েছিল। মামলার তদন্তের পর প্রথম এবং তৃতীয় আসামীকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আমাকে আসামী করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। মুল জমির মালিক হচ্ছে আমার বাবা। আমরা তার ওয়ারিশ। মামলায় প্রধান ও ৩য় আসামীকে বাদ দেয়ার মাধ্যমেই বুঝা যায় যে মামলাটি ষড়যন্ত্রের একটি বহিঃপ্রকাশ। তারা কোন দিক দিয়ে সুবিধা করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমি এই মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসন ও বিচারকদের কাছে সু-বিচার কামনা করছি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চরকালীর ১৩৪ ও ১৩৫ নং খতিয়ানে ১১৮৭ দাগের জমি নিয়ে বিরোধ আছে সত্য। কিন্তু ঘটনার দিন কারো সাথে দেখা হয়নি এবং প্রাণ নাসের কোন প্রকার হুমকিরও ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী মুনসুর আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই জমি আমরা দীর্ঘদিন যাবত ভোগ দখল করে আসছি। হঠাৎ করে বাবুল গংরা ওই জমিতে তারা পাবেন বলে দাবী করছেন। অথচ তারা যে সম্পত্তি পাবে তার চেয়ে বেশী বিক্রি করে ফেলেছে। জমির বিরোধ নিয়ে একাধিকবার ভোলা থানা ও ডিবি অফিসে বসা হলেও কোন সমাধানে পৌছা যায়নি। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে শালিস মিমাংসা থেকে উঠে গেছে।
মামলায় বাঁধা দেয়া ও প্রাণ নাসের হুমির যে ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়েছে, তাতে ওই দিন আপনাদের সাথে বাবুলদের কোন দেখা সাক্ষাত, হাতা-হাতি, কিংবা মারামারির ঘটনা ঘটেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সাথে তাদের ওই মারামারির কোন ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনার ব্যাপারে স্থানীয় হেজু মাঝির ছেলের বউ নাজমা বেগমের সাথে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ইং তারিখ সকালে কথা হয়। তিনি জানান, এই জমি নিয়ে বিরোধ আছে ঠিক, কিন্তু কার সাথে সামনা-সামনি কোন দেখা এবং কোন প্রকার মারামারি ও প্রাণ নাসের হুমকি-ধমকির ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার নার্গিস আক্তার এর স্বামী সিরাজ পাটোয়ারীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, জমি নিয়ে বিরোধ আছে, কিন্তু কোন প্রকার মারামারি ও হত্যার হুমকির ঘটনা ঘটেনি। যদি কেউ জমি পায় তা কাগজ-পত্র পর্যালোচনা করে সমাধান করবে। তা না করে মুনসুর আলম গং বাবুল গংদের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।