ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট।। ভোলা সদরের পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ১২নং গুপ্তমুন্সী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজের টাকা আত্মসাত, উপবৃত্তির দেওয়ার নামে টাকা আদায়, শিক্ষার্থীদের কাছে বই বিক্রি সহ একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সচেতন অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে তদন্তে যান। শিক্ষা অফিসার তদন্তে গেলে সেখানে শতাধিক অভিভাবক ঝড়ো হয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকার অপসারণ ও শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন।
সরজমিনে গিয়ে ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন ২০১৩ সালে ২নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ১২নং গুপ্তমুন্সি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি নিজের ইচ্ছে মতো বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। তার আগের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে বাদ দিয়ে তার মনগড়া ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন। প্রতি বছর সরকার স্কুল সংস্কারের জন্য যে বরাদ্দ দেয় সেগুলো দিয়ে সংস্কার কাজ না করিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার করে প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন আত্মসাত করেন।
এছাড়াও প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে উপবৃত্তি ও বই বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আসার সময় প্রত্যেকর কাছ থেকে প্রথমে দুই শত এবং অভিভাবকরা টাকা তুলে আনলে আরও একশত টাকা দিতে হয় প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনকে। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার কাছ থেকে উপবৃত্তির সিমকার্ড নিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়।
স্থানীয় ইব্রাহিম বয়াতী ও অভিভাকরা রাবেয়া খাতুনের এসব দূর্নীতি ও অনিয়মের বিচার চেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও দুর্নীতি দমন কমিশনার বরিশাল এর বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার বেলা ১১টায় জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান সরেজমিনে তদন্তে যান। তদন্ত কর্মকর্তাকে দেখে স্কুলের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে প্রধান শিক্ষিকার নানা অনিয়মের অভিযোগ ‘দূর্নীতিবাজ রাবেয়ার শাস্তি চাই’ এই স্লোগানে মিছিল করেন।
এসময় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশ নিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকার আত্মীয় পশ্চিম ইলিশার সাবেক মহিলা মেম্বার জাহানারা বেগম। সদর থানার এএসআই মিরাজ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ফোনের সকল তথ্য গুজব। তিনি তদন্ত কর্মকর্তা জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামানের কাছ থেকে জানতে চান এখানে কোন সমস্যা আছে কিনা। এসময় তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এখানে পুলিশ লাগলে আমি বলবো যেহেতু প্রধান শিক্ষিকা আমার অধীনে। আমি এখানে উপস্থিত আছি কিন্তু জাহানারা বেগম পুলিশ আনার কে? এ সময় জাহানারা বেগম মানুষের তোপের মুখে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
অভিযোগকারী ইব্রাহীম বয়াতী বলেন, এই অঞ্চলের মানুষের শিক্ষার কথা চিন্তা করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা জমি দিয়েছি। এখানে পড়ালেখা করে অনেক শিক্ষার্থী এখন ভালো ভালো যায়গায় চাকুরি করছে। কিন্তু বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন ২০১৩ সালে যোগদানের পর থেকে একের পর এক অনিয়ম করে যাচ্ছেন। মনগড়া ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে তাকে ম্যানেজ করে সংস্কার কাজের টাকা আত্মসাত, শিক্ষার্থীদের কাছে বই বিক্রি, উপবৃত্তি দেওয়ার নামে টাকা আদায় সহ ব্যাপক অনিয়ম করছেন প্রধান শিক্ষিকা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নেই বললেই চলে। তাই আমি একজন সচেতন নাগরিক হয়ে স্থানীয়দের মতামত নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন জানান, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। স্থানীয় ইব্রাহিম বয়াতীকে সভাপতি না করায় তিনি ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ পর্যন্ত বিদ্যালয় সংস্কার করার জন্য যেসব বরাদ্দ পেয়েছি সেই টাকা দিয়ে ঠিক মতো কাজ করেছি। আমি কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বই বিক্রি করে ও উপবৃত্তি দেওয়ার কথা বলে কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি জহুরা বেগম জানান, প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন যোগদানের পর আমাকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হয়। তার পর থেকে আমি বিদ্যালয়ের খোজখবর রাখি। সংস্কার কাজের অনিয়ম সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এই বছর (২০১৮-১৯) অর্থ বছরের সংস্কার কাজের ব্যাপারে আমি অবগত আছি। এই বছর আমরা ৫০ হাজার টাকার কাজ করেছি। এর আগের বরাদ্দকৃত টাকার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
তদন্ত কর্মকর্তা জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান বলেন, প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনের অভিযোগ এর ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তদন্ত করে যদি অভিযোগের সত্যতা পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।