ভোলায় শিমের গ্রাম নামে খ্যাত কোড়ালিয়া

0
707

ইমতিয়াজুর রহমান।।

ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট : সবুজ পাতার আড়ালে ঝুলছে শিমের সারি। লতার সঙ্গে ঝুলছে সারি সারি শিম। সাদা-বেগুনি শিমের ফুলে ভ্রমর নাচে গুঞ্জন তোলে। বিস্তীর্ন জমিতে শিমের সবুজ সমারোহে সাদা-বেগুনি ফুলে ছেয়ে গেছে। এই পৌষের শীতে শিম ও গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। এখানে শিমের চাষ চলছে কয়েক যুগ ধরে। গ্রামটিতে প্রবেশের পর চোখে পড়বে পথের দুই পাশের জমিতে শোভা পাচ্ছে শিমের বাগান। শুধু শিম আর শিমের ক্ষেত। বাড়ির অঙিনা, পুকুরপাড়, রাস্তার পাশ, পরিত্যক্ত জমি, নিচু জমিসহ যেখানেই খালি জায়গা পাওয়া গেছে সেখানেই শিমের ঝাড় তোলা হয়েছে। এই গ্রামে প্রায় ৩০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে শিমের চাষ করা হচ্ছে। প্রথম দিকে ধান আবাদ করলেও বর্তমানে অধিকাংশ চাষি শিম চাষের সঙ্গে জড়িত। গত বছর শিমের ফলন বৃদ্ধি ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার যেন চাষিদের উৎসাহের শেষ নেই। সারা দিন ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত তারা। এখানকার পরিত্যক্ত, অপেক্ষাকৃৃত নিচু জমিতে মাচা তুলে চলছে শিম চাষ। এছাড়া এখানে অন্যান্য সময় মৌসুমি সবজির চাষ করা হয়। মূলত সবজি চাষের ওপর ভিত্তি করে এ গ্রামের কৃষকরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন এখানে।

ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের একটি গ্রাম কোড়ালিয়া। এই গ্রামটিতে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার হাজারো শতাংশ জমিতে শিম চাষের সাথে জড়িত। অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে মাঘের শেষ পর্যন্ত থাকে শিমের পরিপূর্ণ মৌসুম। পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এবার শিমের বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন এই কৃষক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাকি শিম চলে যায় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

পশ্চিম কোড়ালিয়া গ্রামের শিম চাষি সৈয়দ আহমেদ হাওলাদার জানান, তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে শিমসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করছেন। এবছর ১ একর জমিতে শিমের খামার করেছেন। এতে প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আশা করছেন ৩ লাখ টাকার উপরে বিক্রি হবে তার। লাভ থাকবে ২ লাখ টাকারও বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় তালুকদার জানান, কোড়ালিয়া গ্রাম সব সময়ই শিমের জন্য বিখ্যাত। আমরা চাষিদের বিভিন্ন রোগ-বালাই সম্পর্কে ধারণা ও পরামর্শমূলক সহায়তা দিয়ে থাকি। আর চলতি বছর আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষক গৌতম চন্দ্র দাস বলেন, তিনি ১ একর জমিতে শিমের চাষ করছেন। বর্তমানে শিমের বাজারদর ভালো রয়েছে।

কেজি ১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও প্রথম দিকে আরো বেশি দামে শিম বিক্রি হয়েছে। তিনি প্রায় ১ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন। সামনের দিকে আরও বিক্রি হবে বলে জানান তিনি। শুধু গৌতম নয়, সুমন, হারুন মাইলতা, মানিক মৃধা, কালাম সরদার, মহাসীন, সেলিম ডাক্তার, সিরাজ, ফজলে নুর, ফকরুল মিঝিসহ আরো অনেকে শিম চাষের সঙ্গে জড়িত। বেপারিরা এখান থেকেই ভ্যানে করে শিম কিনে নিয়ে যান আড়ৎ ও বাজারে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় এ গ্রাম থেকে শিম যাচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখারুল ইসলাম স্বপন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এখানকার কৃষকরা তাদের জমিতে ধানের বদলে শিম চাষ করছেন। শিম চাষে বহু চাষি তাদের ভাগ্য বদল করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাই কোড়ালিয়াকে বলা হয় শিম চাষের আদর্শ গ্রাম। চাষিরা একান্ত মনে কাজ করছেন ক্ষেতে। কোথাও কোথাও পুরুষের পাশাপাশি নারীদের শিমের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।

LEAVE A REPLY