ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। ভোটারদের সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন।একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের দিন শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট ‘নিজেরা’ ভোট থেকে সরে যাবে না।
ভোটারদের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, “আপনারা সকাল সকল কেন্দ্রে যান, ভোট দিন। আপনারা ভয় পাবেন না, আপনারা গেলে দুর্বৃত্তরাই পালিয়ে যাবে। জনগণের শক্তির সাথে তারা পারবে না।”
তরুণদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাতে গিয়ে কয়েক মাস আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের একটি স্লোগান ধার করেন গণফোরাম সভাপতি কামাল।
তিনি বলেন, “তরুণ সমাজ, তোমরা যারা প্রথমবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছ, তারা সময়মত ভোট দিতে যাবে। মনে রাখবে, যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ। যদি তুমি ঘরে দাঁড়াও তবেই বাংলাদেশ।”
রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে ২৯৯ আসনে একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনী প্রচারের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা তাদের জোটের বড় দল বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বলেছেন,বিএনপি যদি মাঝপথে ভোট থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়, তাতে কান দেওয়া অন্য প্রার্থী বা ভোটারদের উচিৎ হবে না।
সাংবাদিকরা কামাল হোসেনের সামনে প্রশ্ন রেখেছিলেন, কোনো কারণে তারা নির্বাচনের মাঝপথে সরে যাবেন কি না।
উত্তরে তিনি বলেন, “এটার স্পষ্ট উত্তর হচ্ছে, আমরা তো নিজস্বভাবে এটা থেকে কোনোভাবে সরে যাব না।”
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কেমন ফলাফল প্রত্যাশা করছেন জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, “আমি আশা করি ও বিশ্বাস করি, জনগণ আমাদের পক্ষে ভোট দেবে। কেন? আপনি আমার সঙ্গে রাস্তায় চলেন। মানুষকে বলেন কী চাও? পরিবর্তন- এই শব্দটা তারা জোর গলায় বলে। চলেন, আপনারা পরীক্ষা করে দেখেন। এতেই প্রমাণ হয়, আমরা জিতব, যদি দুই নম্বরী না হয়।”
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, “আপনারা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করুন। আপনি যদি কারও অধিকার হরণ করেন, তাহলে মনে রাখবেন, অন্য কেউ আপনার মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তানের অধিকার হরণ করছে। এটা করলে জনগণ ইতিহাস ও আইন আপনাদের ক্ষমা করবে না।”
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা কোনো দলের নয়, জনগণের সেবক। জনগণ এদেশের মালিক, দেশের মালিকদের তাদের ভোটের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবেন না। কোনো অন্যায় নির্দেশ মানবেন না।”
প্রবাসীদের উদ্দেশে ঐক্যফ্রন্টের নেতা বলেন, “আপনারা আপনাদের স্বজনকে ফোন করে ভোট দিতে যেতে বলুন। তারা যদি ভোট দিতে পারেন সে আনন্দের অংশীদার আপনারাও হবেন। আসুন আমরা ভোট দিই, আপনার ভোট খুবই মূল্যবান, কেননা আপনারা দেশের মালিক।”
সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার, ভিডিপি, কোস্ট গার্ডসহ আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সব বাহিনী এবারের নির্বাচনে ‘অতীতের মত গৌরবময় ভূমিকা’ পালন করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় আপনাদের ভূমিকা প্রশংসিত হচ্ছে, সেই প্রশংসার ফলে সারা বিশ্বে আপনাদের সুযোগ বেড়েছে। কোনো অবস্থায় যাতে তা ব্যাহত না হয় সে ব্যাপারে আপনারা সর্তক থাকবেন।”
মওদুদ আহমদের কথিত ফোন আলাপের সূত্র ধরে সাংবাদিকরা জানতে চান, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে কোনো বিরোধ তৈরি হয়েছে কি না।
জবাবে কামাল হোসেন বলেন, “এটা মোটেই ঠিক নয়। বিভেদের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ঐক্য আরও সুসংসহত হয়েছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “নির্বাচন থেকে আমাদের কোনো প্রার্থী এতো বৈরী পরিবেশের মধ্যেও সরে যাননি এবং কেউ যাবেন না। সারাদেশে আমাদের যত প্রার্থী আছেন তারা এত কিছুর মধ্যেও নির্বাচনে আছেন। ইনশাল্লাহ আগামীকাল নির্বাচনে বিজয়ী হয়েই ঘরে ফিরবেন তারা।”
ঢাকা রিপোর্টা ইউনিটি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিকউল্লাহ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশ থেকে যে সাংবাদিকরা বাংলাদেশের ভোটের খবর সংগ্রহ করতে এসেছেন, পরে তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন কামাল হোসেন।