লাল শাপলার স্বর্গরাজ্য সাতলা বিল

0
686

ভোলা নিউজ২৪ডটনেট।। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিল এলাকা এখন লাল আর সাদা শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলা ভূমি। সূর্যের আভাকেও যেন হার মানিয়েছে এ বিলের লতাপাতায় ভরা শত সহস্র লাল আর সাদা শাপলা। এ যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশি কাঁথা। বর্ষার শুরুতেই সাতলার বিলে ফুটতে শুরু করে শাপলা। বছরের মার্চ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত থাকে শাপলার বিচরণ।

এদিকে, প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমিতে শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে উজিরপুরের সাতলা এলাকা। লাল ও সাদা রঙের শাপলা ফোটার অপরূপ দৃশ্য এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমছে নানা বয়স ও শ্রেণি পেশার মানুষের।

সকাল থেকে সন্ধ্যা দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত সৌন্দর্য পিয়াসি মানুষের ভিড় লেগেই থাকে শাপলার বিল ঘিরে। মাঝে মধ্যে দেখা মিলে বিদেশি পর্যটকদেরও। শাপলার অপরূপ শোভা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন তারা। শাপলার মাঝে বাঙালিরা খুঁজে পান বাংলার চিরন্তন রূপ। সূর্য উদয় ক্ষণে সূর্যের রশ্মি পড়া মাত্রই সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয় সাতলার বিল। আবার সন্ধ্যার সূর্য অস্তমিত মুহুর্তে মনে হয় যেন মেঘ মালায় ঢেকে যাওয়া এক অপরূপ দৃশ্য। তাই দিন যতই বাড়ছে পর্যটকদের আগমনে ততটাই মুখোর হচ্ছে সাতলার লাল শাপলার বিল।

এদিকে, শুধুমাত্র সৌন্দর্যেই নয়, সাতলায় শাপলার বিলকে ঘিরে রয়েছে অনেকের জীবন-জীবিকা। গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো বিলের পানিতে জীবন সংগ্রামের আয়ের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তারা সুস্বাদু এ শাপলা তুলে বিক্রি করছেন হাটে-বাজারে। সাতলার প্রায় ৫০ ভাগ আদিবাসী এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। সাতলার বিলে দর্শনার্থীদের ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য রয়েছে ছোট ছোট নৌকার ব্যবস্থা। টাকার বিনিময়ে নৌকায় শাপলার সৌন্দর্য ঘুরিয়ে দেখান স্থানীয়রা। দিনের শেষে এ থেকে তাদের উপার্জনও কম নয়।

স্থানীয় প্রবীণ আদিবাসী সঙ্কর সমদ্দার বলেন, প্রায় দুশত বছর ধরে সাতলার বিলগুলোতে লাল এবং সাদা শাপলা ফুটছে। এখানকার একশরও বেশি পরিবারের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে আছে শাপলার বিলে। ভোর হতেই নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোররা ছোটে শাপলার বিলে। বিল থেকে শপলা তুলে তা স্তুপ করে রাখে। পড়ে আঁটি বেধে কেউ পাইকারী আবার কেউ খুচরা বিক্রি করছে। ঢাকা, খুলনা, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সাতলার শাপলার কদর রয়েছে।

স্বপরিবারে লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা রাজধানীর আদাবর এলাকার বাসিন্দা ও একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক দম্পতি তানভির কায়সার ও সিগ্ধা শারমীন বলেন, পত্রিকা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সাতলার বিলে লাশ শাপলার সৌন্দর্যের কথা অনেক শুনেছি। এতটাই শুনেছি যে না এসে পারলাম না। তবে বাস্তবে যা দেখছি তা শোনার থেকেও অনেক বেশি মনে হচ্ছে। যা এখানে না আসলে কখনই বোঝা যেত না। আমরা মুগ্ধ লাল শাপলার সৌন্দর্য দেখে।

এ দম্পতি অনেকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, সাতলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে সূর্যদয়ের আগে এসে পৌঁছতে হবে। কিন্তু এখানে থাকা বা বিশ্রাম নেয়ার জন্য হোটেল-মোটেল ও ভালো খাবার হোটেলের কোন ব্যবস্থা নেই। রাস্তার অবস্থাও খুব খারাপ। সরকার এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উচিৎ হবে পর্যটকদের সুবিধার্থে সাতলা এলাকায় আবাসন ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়ন করা।

সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক আজাদ বলেন, একটি সময় ছিল যখন শাপলার তেমন চাহিদা ছিল না। তাই তখন পানিতে জন্মে নিয়ে পানিতেই মরে যেত শাপলাগুলো। দিনে দিনে শাপলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা এখন হাটে-বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। তাছাড়া এখন প্রায় বছর জুড়েই শাপলা পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্যের তালিকায় শাপলা প্রাধান্য পাচ্ছে।

তিনি বলেন, ইতিপূর্বে সাতলার লাশ শাপলার বিলের এতটা কদর ছিল না। কোন লোকই আসতো না। গত ২-৩ বছর ধরে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে চলতি মৌষুমে পর্যটকদের ভির একটু বেশিই মনে হচ্ছে। সাতলার অজোপাড়াগাঁও যে এক সময় পর্যটকদের অন্যতম ঘাটে হবে সেটা কেউ বুঝতে পারেনি। এখন যেটা হয়েছে তার সম্পূর্ণ অবদান গণমাধ্যম অর্থাৎ সাংবাদিকদের। তাদের কারণেই আজ সাতলার শাপলার বিল দেশ-বিদেশে পরিচিতি পেয়েছে।

এদিকে উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু বলেন, ‘সাতলার শাপলা বিলকে পর্যটন কেন্দ্র পরিণত করতে এরই মধ্যে উদ্যোগ গ্রহন করেছে। এটার বাস্তবায়ন এখন সময়ের ব্যাপার। তবে খুব শিঘ্রই উজিরপুরের সাতলা পর্যটন নগরী হয়ে ওঠবে বলে আশাবাদী তিনি।

উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, গত ১৭ আগস্ট আমি সাতলার শাপলা বিলের সৌন্দর্য পরিদর্শন করেছি। সেখানে পর্যটকদের সত্যিই দুর্ভোগ হয়। যা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছি। তাই পর্যটকদের সুবিধার্থে কালবিলা এলাকায় আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। স্থানও নির্ধারণ হয়েছে। খুব শিঘ্রই ছোট পরিসরের এই আবাসন ব্যবস্থার কাজ শুরু হবে। যেখানে পর্যটকরা এসে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এছাড়াও শাপলা বিলকে পরিপূর্ণতায় রূপ দিতে নানামুখী পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

LEAVE A REPLY