লাল ফিতার দৌরাত্ম্য দূর করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

0
0

নিজস্ব প্রতিবেদক:: বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া অফুরন্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে দেশে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। তাই আমি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানাব বাংলাদেশে আপনারা বিনিয়োগ করুন, আমরা সব ধরণের সহযোগিতা দেব। সেই সঙ্গে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনা হবে।

শনিবার (১১ মার্চ) সকাল ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সম্মেলন ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেছেন, এক সময়ের বাংলাদেশ দারিদ্রপীড়িত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বলেই পরিচিত পেতো। এখন আর সে অবস্থা নেই। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল। অন্তত এতটুকু দাবি করতে পারি মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে সকলের সহযোগিতায় আমরা বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। এমনকি করোনাকালেও বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা যে পারি, সেটা প্রমাণ করেছি পদ্মা সেতু নিজ অর্থায়নে করে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সেটি আরও সংস্কার ও ব্যবসাবান্ধব করা হবে।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হলে আমাদের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য আমি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মানসিকতা নিয়ে এগোনোর অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি কোনো হতাশা শুনতে চাই না। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবো।
সরকার প্রধান বলেন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার পন্থা খুঁজে বের করতে হবে, সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে নিজেরা নিজেদের বাজার হারাবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি অর্জনে সহায়তা করেছি। এমনকি কোভিড ১৯ অভিঘাতে যখন সারাবিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছে তখনও বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা কোভিড ১৯ এর পূর্বে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ‘মাথাপিছু আয় এক দশকে তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে। জিডিপির আকার ২০০৬ সালে যেখানে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, বর্তমানে তা ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬ সালে দারিদ্রের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ যা আমরা কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। কোভিড ১৯ অভিঘাত না আসলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যে অর্থনৈতিক মন্দা না হলে আরও ২-৩ ভাগ দারিদ্রের হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হতাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোশাক খাতে বিশ্বে এখন দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। বেসরকারি বিনিয়োগ উন্নয়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার, তাই আমরা বেসরকারি খাতকে সব রকম সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব না দিলে এতো কিছু সম্ভব হতো না।
বেসরকারি বিনিয়োগকে উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ্য সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য যেন না থাকে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ এর আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। এফবিসিসিআই প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এ সম্মেলনে সংস্থাটিকে সহযোগিতা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সিইও এবং দুইশর বেশি দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বিশ্বের ১৭টি দেশের ব্যবসায়ী নেতারা সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। তিন দিনের সামিটে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত নিয়ে ১৭টি সেমিনার ও তিনটি প্ল্যানারি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিজনেস সামিটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতা, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং এখানে বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হবে। সম্মেলনটি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ আকর্ষণে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, সৌদি আরবের বাণিজ্য সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী কর্ম দর্জি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) উপ-মহাপরিচালক জিয়াংচেন জং। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন।

 

LEAVE A REPLY