কভিড-১৯ চিকিৎসায় সম্ভাবনা দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘রেমডেসিভির’ ওষুধ! আশাবাদী হওয়াই যায়। যুক্তরাষ্ট্রের স্যান অ্যান্টোনিও শহরসহ বিশ্বের কয়েকটি স্থানে এক হাজার রোগীর উপর চালানো ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় এটি প্রাথমিক সাফল্য দেখিয়েছে। এই ওষুধ ব্যবহারে কভিড-১৯ রোগীরা ৩১ শতাংশ পর্যন্ত দ্রুত আরোগ্য পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সংক্রাম ব্যাধি বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলছেন, করোনার চিকিৎসায় রেমডেসিভিরের কার্যকারিতার ‘সু্স্পষ্ট প্রমাণ’পেয়েছেন তারা। রেমডেসিভির যে সব রোগীদের দেয়া হয়েছে তারা অন্য রোগীদের চেয়ে অনেক দ্রুত আরোগ্য পেয়েছেন।
তবে এ ফলাফল প্রাথমিক হিসেবে জানান ডা. অ্যান্থনি ফাউচি। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এ ওষুধটি নিয়ে পরীক্ষা চালানো ১ হাজার রোগীর তথ্য সংগ্রহ করেন ফাউচি। সেগুলো বিশ্লেষন করে দেখান রেমডেসিভির যে সব করোনা রোগীদের দেয়া হয়েছে তারা গড়ে ১১ দিনে সুস্থ হয়েছেন। যেখানে অন্য ওষুধ গ্রহণকারীরা সুস্থ হয়েছেন গড়ে ১৫ দিনে। এছাড়া রেমডেসিভির ব্যবহারে মৃত্যুর হার ৮ শতাংশ, অন্য ওষুধের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ
আমেরিকা সরকারের এই প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, যাদের প্লেসবো (নকল ওষুধ) দেওয়া হয়েছে তাদের তুলনায় রেমডেসিভির গ্রহণকারীরা ৩১ শতাংশ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছে। এই ঘটনার পর ওষুধটির কার্যকারিতা নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন ফাউচি। আমেরিকার করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের চিকিৎসক বলেছেন, প্রাথমিক ফল খুবই আশাব্যঞ্জক।
ফাউচি বুধবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটা সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তটা অনেকটা ১৯৮৬ সালের মতো, যখন এইচআইভির ওষুধের জন্য আমরা সংগ্রাম করছিলাম এবং হাতে কিছুই ছিল না। এটা সেবার একটা মানদণ্ড তৈরি করবে।’
বুধবার হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ-এর তত্ত্বাবধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১০৬৩ মানুষের অংশগ্রহণে এই ওষুধের পরীক্ষা হয়। তাদের এক অংশকে দেওয়া হয় রেমডেসিভির, আরেক অংশকে দেওয়া হয়েছিল প্লেসবো। রেমডেসিভির গ্রহণকারীরা গড়ে ১১ দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। আর প্লেসবো চিকিৎসা নেওয়ারা সুস্থ হয়েছেন ১৫ দিনে।
ফাউচি বলেছেন, ‘প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণ করছে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার সময় কমিয়ে আনতে রেমডেসিভিরের ভূমিকা সুস্পষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক।’ তার মতে, পরীক্ষার ফলাফল প্রমাণ করেছে একটি ওষুধ করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে এবং রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ায় আমাদের সামনে নতুন দুয়ার খুলে গেল।
আসলে ইবোলার চিকিৎসার জন্য তৈরি হয়েছিল রেমডেসিভির। যদিও রোগটির বিরুদ্ধে এ ওষুধের সুফল মেলেনি। তবে এই ওষুধ করোনায় মৃত্যুহার কমাতে ভূমিকা রাখে কিনা তা এখনো প্রমাণিত হয়নি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, রেমডেসিভির গ্রহণকারীদের মৃত্যুহার যেখানে ৮ শতাংশ, সেখানে প্লেসবো গ্রহণকারীদের মৃত্যুহার ১১.৬ শতাংশ। তবে এই পার্থক্য দিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনই বলতে পারবেন না এটি আসলেই মৃত্যু প্রতিরোধ করে কিনা।
সূত্র- গিলমোর হেলথ।