ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : আগামী জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী নগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় রাজশাহীবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এতিমের টাকা লুটপাটের অপরাধে সাজা ভোগ করছেন বেগম খালেদা জিয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের কল্যাণ নয়, মানুষকে খুন করা বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য। চুরি করা ও লুট করা তাদের চরিত্র। আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করে, আর বিএনপি দেশ ধ্বংস করে।’
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শুরু করার পর পরই নগরীর মসজিদ থেকে আসরের নামাজের আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। আজান শুনতে পেয়ে তিনি বলেন, ‘আজান হচ্ছে, আমি আজানের পরই বক্তব্য শুরু করছি।’ আজান শেষে আবার বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ১৯৯১ সালে বিএনপি জোট সরকারের শাসনামলের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘সেই সময় বিএনপি ক্যাডাররা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে। বিএনপির সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কীভাবে মানুষ কষ্ট করেছে আমরা দেখেছি। এই রাজশাহীতে তাঁরা আপনাদের লাশ উপহার দিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির আমলে মানুষ অভয়ে চলতে পারত না, ঘর থেকে বের হতে পারত না। রাজশাহীকে তারা ত্রাসের নগরীতে পরিণত করেছিল। তাদেরই সৃষ্টি শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই। বিএনপি জোট দেশের উন্নয়ন করতে পারেনি, করেছে বোমাবাজি। বিএনপি-জামায়াত যেখানে সন্ত্রাস কায়েম করে, আওয়ামী লীগ সেখানে জনগণের জন্য উন্নয়ন নিয়ে আসে। জনগণের উন্নতির জন্য বিভিন্ন উন্নয়মূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আমরা বাংলার মানুষকে উন্নয়ন উপহার দিয়েছি। বিএনপি-জামায়াত সরকার দেশবাসীকে লাশ উপহার দিয়েছে। এই রাজশাহীর ছাত্র শিক্ষক থেকে শুরু করে আমার দলের নেতা কর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে তারা। শুধু তাই না. বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই এলাকার ছোট্ট শিশুকে গণধর্ষণ করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের স্বার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছি। বিএনপি-জামায়াত জোট তা পুলিশ সদস্যকে রাস্তায় পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আন্দোলনের নামে তারা বাসে পেট্রল দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে।’ এভাবে মানুষ হত্যা করে কোন রাজনীতি করছে বিএনপি প্রধানমন্ত্রী তা জানতে চান।
এতিমের টাকা লুটপাটের অপরাধে খালেদা জিয়া সাজা ভোগ করছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯১ সালে এতিমখানা তৈরি করবে বলে খালেদা জিয়া বিদেশ থেকে টাকা এনেছিল। সেই এতিমখানা কই, তাঁর ঠিকানা কেউ জানে না। সেই টাকা তারা লুটপাট করে খেয়েছে। আজ বলে টাকা তো আছে, টাকা তো বেড়েছে। এতিমখানার ঠিকানাটা কোথায়? সেখানে কয়জন এতিম আছে? তার কোনো সংখ্যা নাই। এতিমরা কি একটা টাকাও পেয়েছে? তারা বলে সেই টাকা সুদে আসলে বেড়েছে। টাকা খেয়েছে কে? ভোগ করেছে খালেদা জিয়া ও তার সন্তানরা এবং দলের লোকজন।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারী বিএনপি নেতাদের কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেতারা আন্দোলন করে। কিসের আন্দোলন? টাকা চুরি করে নেত্রী জেলে গেছে। আন্দোলন চোরের জন্য? এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছে। ২৭ বছর এতিমের ভাগ এতিমকে দিতে পারেনি। সে টাকা নিজের কাছে রেখে গিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমরা জাতির পিতার নামে একটা ট্রাস্ট করেছি। কেয়ারটেকার সরকার তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে, কোনো কিছু পায় কি না। আমি বলেছি, ভালোভাবে তদন্ত করে দেখেন। আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে আসি। আমরা এতিমের টাকা মেরে খাইনি, জনগণকে দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বাংলার মানুষ বাংলায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। গত ৯ বছরে আমরা দেশে যে উন্নয়ন করেছি, তার ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আপনারা ওয়াদা করুন।’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান আসাদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের পরিচালনায় জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মো. আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ রাজশাহী বিভাগের আট জেলার বেশ কয়েকজন দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতা বক্তব্য দেন।
জনসভাস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহী মহানগর ও জেলার ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
রাজশাহীর জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স ষষ্ঠ কোর পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সময় সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকসহ ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রী সেখানে হুড খোলা গাড়িতে চড়ে সেনা সদস্যদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়ে মনযোগী হওয়ার তাগিদ দিয়ে বক্তব্য দেন। বর্তমান সরকারের আমলের উন্নয়ন তুলে ধরে অশুভ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যেন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে, সে বিষয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সতর্ক থাকার তাগিদ দেন তিনি।