মিয়ানমারের সেটে দেদার ঢুকছে দেশি সিম

0
470

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : সরকারিভাবে নিষেধ করা হলেও বাংলাদেশি সিমকার্ড ব্যবহার করে মুঠোফোনে কথা বলছে রোহিঙ্গারা। তাদের মুঠোফোন চার্জ দেওয়ার জন্য আশ্রয়শিবিরের কাছাকাছি গড়ে উঠেছে কিছু দোকানও। অনেক রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষের হাতে মুঠোফোন দেখা গেছে। কারও কারও কাছে আছে স্মার্টফোনও।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। এসব আশ্রয়শিবিরে এসেই অনেকে স্থানীয় বাজার থেকে বাংলাদেশি সিম কিনেছে। মিয়ানমার থেকে আনা সেটে বাংলাদেশি সিম ঢুকিয়ে ব্যবহার করছে। আবার অনেকে বাংলাদেশ থেকে মোবাইল ফোনের সেট ও সিম দুটোই কিনছে। বাজারে পুরোনো সেটও বিক্রি হচ্ছে। অনুপ্রবেশের সময় টেকনাফের সাবরাং হারবার পয়েন্টে রোহিঙ্গাদের নাম নিবন্ধনের পর ত্রাণ হিসেবে চাল-ডালের পাশাপাশি নগদ টাকা দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। এই টাকা মুঠোফোনের সিমসহ অন্যান্য খাতে খরচ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড বিক্রি করতে পারবে না দেশীয় কোনো মোবাইল ফোন অপারেটর। রোহিঙ্গাদের কাছে সিম বিক্রি করা হচ্ছে—এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যোগাযোগের জন্য কক্সবাজারের সব রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের ফোন বুথ স্থাপন করার কথা বলা হয়।

তখন সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছিলেন, কিছু ব্যক্তি বাড়তি আয়ের লোভে নিজের নামে নিবন্ধিত সিমটি রোহিঙ্গাদের কাছে বিক্রি করছেন। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সরেজমিনে কুতুপালং বাজার, উখিয়া বাজার, বালুখালী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোবাইল সিমকার্ড ও ফ্লেক্সিলোডের দোকানগুলোতে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের ভিড় বেশি। সিম বিক্রির ক্ষেত্রে পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি রাখা বাধ্যতামূলক হলেও সেই নিয়ম এখানকার দোকানিরা মানছেন না। টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশেও একই চিত্র দেখা গেছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দোকানি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, রোহিঙ্গারা এই দেশে এসেছে। পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সিম নিচ্ছে।

গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়শিবির তৈরি করে তাদের রাখা হয়েছে। এর কয়েক বছর আগে অনুপ্রবেশ করা আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাও এই দুই উপজেলায় আছে।

বালুখালী ক্যাম্পের সর্দার (মাঝি) মো. শফিক বলেন, মিয়ানমার থেকে তারা মোবাইল সেট নিয়ে আসে। এখানে অনেকে সিম কিনছে। রোকসানা নামের এক রোহিঙ্গা নারী স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভিডিও চিত্র দেখছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর স্বামী কয়েক দিন আগে এ দেশের সিমসহ মোবাইল ফোনটি কিনে এনেছেন।

অথচ উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গাশিবিরের পাশে টেলিটকের সৌজন্যে খোলা বুথগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে কোনো রোহিঙ্গা যায় না। এসব বুথে স্বল্পমূল্যে মোবাইলে কথা বলা যায়। এ ধরনের কমপক্ষে ১০টি বুথ রয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদ হোসেন সিদ্দিক বলেন, রোহিঙ্গাদের কাছে সিম বিক্রি সম্পূর্ণ নিষেধ। মোবাইল সিম বিক্রি থামাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়েছে। শাস্তিও দেওয়া হয় একজনকে।

অন্যদিকে, কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের পাশে দেখা যায়, মুঠোফোন চার্জ দেওয়ার জন্য কয়েকটি দোকান গড়ে উঠেছে। একই সঙ্গে ২০ থেকে ৩০টি মুঠোফোনে চার্জ দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। প্রতিটি ফোন চার্জের জন্য ১০ থেকে ২০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বড় ব্যাটারি দিয়ে চার্জের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ, ক্যাম্প এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ নেই।

এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, অবৈধ সিম বিক্রি চোখে পড়লেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

LEAVE A REPLY