ভোলায় মেয়েকে বিয়ে করার কু-প্রস্তাব মা-মেয়েকে মারধর করে ব্লাংক চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানী

0
172

ভোলা নিউজ২৪ডটকম ॥ ঢাকায় স্ত্রীকে মারধর করে ব্লাংক চেক ও স্বাক্ষরিত ব্লাংক স্ট্যাম্প নিয়ে মা-মেয়েকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে চরফ্যাশন উপজেলার প্রতারক জিয়াউদ্দিন সোহাগের বিরুদ্ধে। মামলা দিয়ে সৎ মেয়েকে বিয়ে করার কু-প্রস্তাব ও বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিকর হুমকি দিয়ে আসছে প্রতারক সোহাগ। কান্না জড়িত কন্ঠে প্রতারনা শিকার অসহায় মুন্নী আক্তার ও তার মেয়ে পত্রিকা অফিসে এসে সাংবাদিকদের এসব বলেন। সোহাগের প্রতিনিয়ত হুমকির ভয়ে মামলার হাজিরা দিতে পারছে না তারা। বর্তমানে ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে মুন্নীর পরিবার।
এক লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী মুন্নী আক্তার জানান, ভোলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পরানগঞ্জ এলাকার মোঃ মোশারেফ সিকদারের মেয়ে ঢাকা মিরপুরের বাসিন্দা মোসাঃ মুন্নী আক্তারের প্রথম বিয়ে হয় সৌদি আরব প্রবাসী আবদুল মতিনের সাথে। ওই ঘরে তাদের ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে সুখের সংসার চলছিলো। সন্তানদের সুখের জন্য মুন্নীর প্রথম স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী ঢাকার মিরপুরে জমি কিনে বাড়ী নির্মান করে। সেখানেই ৩ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলছিলো মুন্নী আক্তারের। হঠাৎ করে মুন্নীর স্বামীর আঃ মতিন সৌদি আরবে মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে মোটামুটিভাবে মুন্নীর সংসার চলছিলো। মুন্নীর বড় মেয়ে নুসরাত জাহান বর্ষাকে প্রতিবেশী আলী হোসেনের কাছে বিবাহ দেন। মেয়ের বিয়ের দুই বছর পর মুন্নীর বাসার ভাড়াটিয়া চরফ্যাশন উপজেলার ওমরপুরের খদেজাবাগ গ্রামের বশির আহাম্মদ মিয়ার ছেলে জিয়াউদ্দিন সোহাগ মুন্নী আক্তারকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মুন্নী আক্তার প্রথমে রাজি না হলেও পরে সন্তানদের সুখের কথা চিন্তা করে ২০১৫ সালে রেজিঃ কাবিনমূলে সোহাগের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর থেকে ওই বাড়ীর সবকিছু দেখাশুনার দায়িত্ব স্বামী সোহাগ নিয়ে নেয়। কিছুদিন তাদের সংসার সুখে-শান্তি কাটছিলো। হঠাৎ একদিন স্বামী সোহাগ মুন্নীর কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি ব্লাংক চেক নিয়ে নেয়। এর কয়েক মাস পর মুন্নী আক্তারের বিবাহিত মেয়ে নুসরাত জাহান বর্ষা ও তার স্বামী আলী হোসেনের মধ্যে পারিবারিক ঝগড়া সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নুসরাত ও আলী হোসেনের পরিবারকে নিয়ে শালিশে বসে ডিবোর্সের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করে দেয়। মুন্নী আক্তার মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে বাড়িতে গেলে স্বামী সোহাগ শালিশের কথা বলে একটি ব্লাংক স্ট্যাম্পে নুসরাতের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়। এরপর থেকেই সোহাগ স্ত্রী মুন্নী আক্তার ও তার ছেলে-মেয়েদেরকে মারধর, নির্যাতন শুরু করে। স্ত্রী মুন্নীকে ব্ল্যাকমেইল করে সোহাগ বিভিন্ন সময় অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে মুন্নী আক্তার বাধ্য হয়ে ৪ বার ডিভোর্স পাঠালেও সোহাগ তা রিসিভ করেনি। এরপর প্রতারক সোহাগ ব্লাংক চেকে ১০ লক্ষ টাকার চেক ডিজোনার ও ব্ল্যাংক স্ট্যাম্পে বাড়ি বিক্রির ৩ লক্ষ টাকার বায়নাচুক্তি হয়েছে উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে। ওই মামলার পর থেকে মুন্নী ও তার মেয়ে, ছেলেকে বিভিন্ন সময় মারধর করে জিয়াউদ্দিন সোহাগ। এরপর মুন্নী ও তার মেয়ে নুসরাতকে চরফ্যাশনের বাড়ীতে এনেও মারধর করে সে। এসময় লম্পট জিয়াউদ্দিন সোহাগ অন্য একাধিক মামলার আসামী হওয়ায় চরফ্যাশন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ওই মামলার খরচের জন্য সোহাগের প্রথম স্ত্রী জান্নাত বেগম ২য় স্ত্রী মুন্নীর কাছ থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও ৫ ভড়ি স্বর্ণালংকার বন্ধক রাখার কথা বলে নেয়। সোহাগ জামিন আসলে মুন্নী তার টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরত চায়। এসময় সোহাগ মুন্নী আক্তারকে ৩০ লক্ষ টাকার জমি দিবে বলে তার কাছ থেকে আরও ৫ লক্ষ টাকা নেয়। সোহাগ ও মুন্নীর সাথে জমির ক্রয়ের বিষয়ে একটি অঙ্গীকারনামা হয়। এরপর মুন্নী আক্তার তার মেয়েকে নিয়ে ঢাকা চলে যায়। এর কিছুদিন পর সোহাগ ঢাকা গিয়ে মুন্নীর মেয়ে বর্ষাকে বিয়ের কু-প্রস্তাব দেয়। এনিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটিরটি এক পর্যায়ে সোহাগ মুন্নী ও তার মেয়ে বর্ষাকে মারধর করে চরফ্যাশনে চলে আসে। চরফ্যাশনে এসেও মোবাইল ফোনে সোহাগ একাধিকবার বর্ষাকে বিয়ের এই কু-প্রস্তাব দেয়। বর্তমানে মুন্নী আক্তার ও তার মেয়ে নুসরাত জাহান বর্ষার বিরুদ্ধে দায়ের করা চেক ডিজোনার ও স্ট্যাম্প এর মিথ্যা মামলায় চরফ্যাশনে আদালতে হাজিরা দিতে চাইলে প্রতারক সোহাগ তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। বর্তমানে সোহাগের ভয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে মুন্নীর পরিবার।
ভূক্তভোগী মুন্নী আক্তার বলেন, চরফ্যাশনের বাসিন্দা জিয়াউদ্দিন সোহাগ আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন ভালোভাবে কাটলেও এরপর সে আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মারধর করে। আমার কাছ থেকে ব্লাংক চেক নিয়ে এবং আমার মেয়ের ডিভোর্সের পর ব্লাংক স্ট্যাম্প নিয়ে আমাদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। তার অত্যাচারের হাত থেকে বাচতে ৪ বার ডিভোর্স পাঠালো সোহাগ তা না মেনে আমাকে চেক ডিজোনার ও ব্লাংক স্ট্যাম্পের মামলা দেয়। ওই মামলার পর সে আমার মেয়ে নুসরাত জাহান বর্ষাকে বিয়ের কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তার কাছে আমার মেয়েকে বিয়ে না দিলে আমাদেরকে আরও অত্যাচার-নির্যাতন করবে ও হত্যার ভয়ভীতি দেখায়। আমরা সোহাগের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। লম্পট-প্রতারক সোহাগের হাত থেকে বাচতে ভোলা জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, ভোলার অভিভাবক তোফায়েল আহমেদ এমপি সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সোহাগের সাথে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত বলে ফোনের লাইন কেটে দিয়েছেন।

LEAVE A REPLY