মো: আফজাল হোসেন।। ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে অন্তত ৩শতাধিক খুটি,খুরচি, পিটানোসহ হাজার হাজার নিষিদ্ধ কারেন্টজালে ধ্বংস করছে সৎস্য সম্পদ। এসব জাল নিষিদ্ধ হলেও ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ প্রভাবশালীরা নদী দখল করে মাছ ধরছে।সাধারন জেলেরা এসব এলাকায় মাছ স্বিকারে যেতে পারেনা। এসব জালের মালিকরা বলছেন বছরের পর বছর ধরে যাচ্ছি। আর মৎস্য বিভাগের কর্তারা বলছেন এসব নিষিদ্ধজাল অপসারন করা কথা।
দ্বীপ জেলা ভোলা। এর চারপাশেই মেঘনা আর তেতুলিয়া নদী বেস্টিত। যে কারনে অন্তত আড়াই থেকে ৩লাখ মানুষ মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। যে কারনে ইলিশ মাছ জেলেদের জালে ধরা পরলেই মেঘনার পাড়ের মাছের আড়ৎগুলো আর জেলেপল্লীতে সব সময় উৎসবের আমেজ দেখা যায়। তবে দীর্য দিন ধরেই নদীতে মাছ না থাকায় জেলেদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছিলো। কিছুদিন ধরে নদীতে জেলেদের জালে বেশ ভালোই মাছ ধরা পরায় পুনরায় প্রান ফিরে পেয়েছে মাছের আড়ৎগুলোসহ জেলেপল্লীতে।তবে সমস্যা হচ্ছে,জালে ধরা পরছে প্রায় সবই জাটকা ইলিশ। ঝাকে ঝাকে ইলিশ ধরা পরলেও জাটকা হওয়ায় জেলেদের আনন্দে কিছুটা ভাটা পরেছে। তবে এর অন্যতম কারন কচ্ছে নদীতে সব নিষিদ্ধজাল।
এসব বিষয় সাধারন জেলে এবং আড়তদারদের সাথে আলোচনায় বেরিয়ে আসে নানান ধরনের সব তথ্য। এর অন্যতম কারন হচ্ছে নদী দখলে নেয়া। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান,মেম্বার,ক্ষমতাসিন দলের প্রভাবশালী ও তাদের আত্বীয়-স্বজনরা মিলেই মুলত মেঘনার লোভনীয় স্থান গুলো দখলে নিয়ে সেখানে শুধু তাদের জেলেরাই মাছ ধরে। ঐসব এলাকায় সাধারন জেলেরা কখনোই ইলিশ বা কোন ধরনের মাছ ধরতে বা জাল ফেলতে পারে না।
সরেজমিন দেখার জন্য ট্রলার নিয়ে মেঘনার বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে ডুবো চরে ও নিষিদ্ধজাল ব্যবহারে মাছ ধরারত অবস্থায় জেলেদের সাথে আলাপে বেরিয়ে আসে অনেক তথ্য। তবে তাদের নিরাপত্তার জন্য নাম ব্যবহার করা হলো না। নদীর মাঝখানে গেলে দুর থেকে দেখা যায় কিছু মানুষ নদীর মাছখানে ভাসছে। কাছে গেলে দেখা যাবে,ফ্লুটের সাথে পাতিল বেধে রেখেছে। ৩থেকে ৪কিলো মিটার বা তারো বেশি এলাকা জুড়ে ডুবো চরে একাধিক জাল ফেলে শতাধিক মানুষ বড় বড় বাঁশ দিয়ে ঐ জালের ভিতর পানিতে আঘাত করতে করতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবে পিটিয়ে ধরা হয় ইলিশ মাছ। ছোট-বড় যা থাকে সবই আটকে যায় জালে। এক পর্যায় জাল ছোট করে তার ভিতর থেকে ঝাকে ঝাকে ইলিশ তুলে আনা হয়। তবে সেব ইলিশ বেশির ভাগই জাটকা। জাল থেকে ছুটিয়ে কোমড়ে বেধে রাখা রশিতে দ্রুত মালার মতই গেথে ফেলা হয় ইলিশ। সাংবাদিক দেখে বেশির ভাগ পানিতে লুকিয়ে রাখা হয়। তার পরেও তারা বলেন,ভালো হলে এক একটি খ্যাও (জালে) দের থেকে ২লাখ টাকার মাছ পাওয়া যায়। এসময় মাছ ধরারত অবস্থায় কথা হয় ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচরা ইউনিয়ের চেয়ারম্যান নুরনবী বাবুল এর জেলেদের সাথে। পিটিয়ে নিষিদ্ধ পদ্ধতি আর নিষিদ্ধজালে মাছ ধরছে তারা। বলেন,আমরা সকল্ইে চেয়ারম্যানের লোক।তার ঘাট্রে। তার সাবার (জাল) দিয়ে মাছ ধরছি। তারা বলেন,এই স্থানে অন্যরা মাছ ধরতে পারে না। আমরাই ধরি।নিয়ন্ত্রন তরা করেন।এখন এই এলাকা নিয়ন্ত্রন করছেন তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচরা ইউনিয়নের অধ্যক্ষ নুরনবী বাবুল চেয়ারম্যান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসান নগর ইউনিয়নের মানিক হাওলাদারসহ ৪জন হাকিমুদ্দিন সংলগ্ন মেঘনার ডুবোচর গুলো নিয়ন্ত্রন করে।
এদিকে দৌলতখানের এসব খুটিজাল ও পিটানোসহ নিষিদ্ধজালের মালিকদের সাথে আলাপ হয়। এসময় মুঠোফোনে দৌলতখানের আব্দুল হাই বলেন,ভোলা জেলায় অন্তত তিন থেকে চার শতাধিক জাল আছে। যার মধ্যে পিটানো জালই আছে দুই শতাধিক। নিজের একটা জাল আছে স্বিকার করে বলেন,এসব জাল মেঘনার বিভিন্ন ডুবো চরে চরে ফেলে ইলিশ মাছ ধরা হয়। এসব তিনি জেলার যাদের নিষিদ্ধজাল আছে কারা কোন এলাকা নিয়ন্ত্রন করেন,তাও বলেন। দৌলতখানের খুটিজালের মালিক মনু মাঝি বলেন,আমরা চারজনের মিলে একটা সাবার করেছি।১১টা সাবার আছে বাকীদের। মাঝে মাঝে অনেক মাছ পাওয়া যায় স্বিকার করে বলেন,মানিক হাওলাদার চেয়ারম্যান, বাবুল চেয়ারম্যান,মিজান মেম্বার,লিটন,মান্নান মাঝি,আব্দুল হাই,মনু,হাসান,কালামসহ আরো অনেকেরই আছে এসব জাল। দৌলতখানের হাজীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মোঃ মিজান মেম্বার বলেন,আমার একটা পিটানো জাল আছে। এছাড়া কবির,টিপু, সুমন,রিপন, মনির, সেলিম, কাজল মাস্টার, সাইফুল মেম্বারসহ আরো অনেকেরই এসব জাল আছে। তবে যেসব ডুবো চরে এসব জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়,তার সিরিয়াল (নিয়ন্ত্রন)আমি করতাম।এখন টিপু করছে। দৌলতখানের হাজীপুর এর মেঘনা এখন কবির ভাই নিয়ন্ত্রন করছেন বলেও জানালেন তিনি।
এসব বিষয় শুধু মৎস্য অধদিপ্তর নয়,দেখার দ্বায়িত্ব নৌ-পুলিশ এবং কোস্টগার্ড এর থাকলেও তারা অদৃশ্য কারনে চুপ থাকছে। জেলেরা সাধারন জেলেরা অভিযোগ করে বলেন,সবাইকে ম্যানজে করে নিষিদ্ধজাল ও নিষিদ্ধ পদ্ধতিতে মেঘনা নদী দখলে নিয়ে মাছ স্বিকার করছে প্রভাবশালীরা। নিয়মিত মাসোয়ার দিয়ে যাচ্ছে। যে কারনে ছোট-খাট সাধারন জেলেদের আটক করা হলেও প্রভাবশালীরা থাকে ধরাছোয়ার বাহিরে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসব জেলেরা।
এবিষয় ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলামের সাথে আলাপ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বিকার করে বলেন,আমরা বেশকিছু খুটিজাল এর খুটি কেটে দিয়েছি। এটি নদীর বিশাল একটি অংশ দখল করে স্থায়ী ভাবে জাল পেতে মাছ ধরে। পিটানো,খুটিজাল,খুরচিজালসহ সকল ধরনের নিষিদ্ধজাল এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে। এসব জাল মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করার কথা স্বিকার করে বলেন,এসব জালের মালিকদেরও আইনের আওতায় আনাহবে।