বাল্য বিয়ে মুক্ত ভোলা গড়তে কিশোরী ক্লাবের পাশে থাকবে জেলা পরিষদ

0
486

আদিল হোসেন তপু/ ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট : ভোলা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মমিন টুলু বলেন –  বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে কিশোর-কিশোরী।  এই কিশোর-কিশোরীরা এক সময় দেশের দায়িত্ব গ্রহন করবে। কিন্তুু উপকূলীয় জেলা  ভোলার কিশোরী মেয়েরা অধিকাংশ বাল্য বিয়ে শিকার হয়ে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন অন্ধকার নেমে আসছে। তাই এই কিশোরীদের বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

কোস্ট ট্রাস্ট এর কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যরা বাল্য বিয়ে রোধে ও জীবন দক্ষতায় যে ভূমিকা রাখছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাই জেলা পরিষদ বাল্য বিয়ে মুক্ত ভোলা গড়তে সব সময় কিশোরী ক্লাবের পাশে থাকবেন বলে জানান।
মঙ্গলবার ( ৫ জুন) সকালে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে  বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট এর সমন্বিত  শিশু বিবাহ প্রতিরোধ (আইইসিএম) কর্মসূচির আয়োজনে ও ইউনিসেফের সহযোগীতায়  শিশুর বিকাশে ও বাল্য বিবাহ রোধে কিশোর কিশোরী ক্লাব ভিত্তিক ক্রীড়া ও  সাংস্কৃতিক কর্মসূচী  সহযোগীতা ও মূল ধারায় সম্পৃক্তকরন বিষয়ে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে- জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান আবদুল মমিন টুলু  একথা বলেন।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- ইউনিসেফের চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার মমিনুনেছা শিখা, ভোলা জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো: আকতার হোসেন, টবগী মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অসীম আর্চায শান্ত, পতিবন্ধি শিশুদের স্পেশাল আলেম্পিক এর প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম, এলসিজি প্রকল্পের জেলা সম্মনয়কারী আব্দুস সালাম, কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের সহকারী সমন্বয়কারী দেবাষীশ মজুমদার প্রমুখ।

এসময় প্রধান অতিথি আবদুল  মমিন টুলু আরো বলেন, শিশুবিবাহ কিংবা বাল্যবিবাহ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান  সমস্যা। বাল্য বিবাহের ফলে ঘটে সুন্দর শৈশবের সমাপ্তি।  হরণ হয় একটি কিশোরী মেয়ের  নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ ও স্বাধীনতা। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও বিকাশের অধিকার ও সুযোগ খর্ব হয়।

শিশু বিবাহের পরিণতিতে শুধু শিশু বা তার পরিবারেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এতে  দেশ হয় অপুষ্ট দূর্বল ও  মেধাহীন ভবিষৎ প্রজন্ম। তাই বাল্য বিবাহ রোধে আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক আন্দোলন ও প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে।

এসময় তিনি জেলা পরিষদ থেকে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সঠিক ভাবে ভেড়ে উঠার জন্য খেলাধুলার সামগ্রী ক্রয় করার জন্য ১ লাখ টা দেয়ার ঘোষনা করেন। পাশাপাশি বাল্য বিয়ের ঝুকিঁতে থাকা বিভিন্ন মেয়েদের  পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেয়ার জন্য সেলাই মেশিন ও বৃত্তির ব্যবস্থ করে দিবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি বলনে, আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু বান্ধন। শিশুদের উন্নয়নের জন্য তিনি বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরাও সব ভালো কাজে শিশুদের পাশে থাকবেন বলে তিনি জানান।
এর ফলে  কিশোর কিশোরীদের সমাজের জন্য দক্ষ হিসাবে গড়ে ঊঠবে। এই কিশোর-কিশোরীরা এ সময়  সমাজ পরির্বতনে কাজ করতে পাড়বে । বাল্য বিয়ে,মাদক,ইভটিজিং মুক্ত সমাজ গড়তে ভূমিকা রাখতে পারবে।

ইউনিসেফের চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার মমিনুনেছা শিখা  বলেন, সত্যিকার অর্থে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হলে মেয়েদের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা সহ কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ  নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা কঠিন হবে।
মেয়েদের শিক্ষার ওপর বেশি  জোর দিতে হবে। মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি। কিশোরীদের ক্ষমতায়ন হলে তারা নিজেরা অনেক বিয়ে বন্ধ করতে পারে। তার জন্য কিশোর-কিশোরী ক্লাবকে সক্রিয় রাখতে হবে বলে জানান।

কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের সহকারী সমন্বয়কারী দেবাষীশ মজুমদার উপকূলীয় জেলা ভোলা একটি বাল্য বিয়ে প্রবন এলাকা। এই জেলার বিশেষ করে কিশোরীদের বাল্য বিয়ের  হার অনেক বেশি। তার জন্য ইউনিসেফ এর সহায়তায় কোস্ট ট্রাস্ট এর বাস্তবায়নে ‘‘সমন্বিত  শিশু বিবাহ প্রতিরোধ (আইইসিএম) কর্মসূচির” নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে  প্রাথমিক ভোলার ৩ টি উপজেলা ( ভোলা সদর, লালমোহ ও চরফ্যাশন) বাল্য বিয়ের হার কমিয়ে আনার জন্য প্রায় ৮০০ শ কিশোর-কিশোরী ক্লাবে প্রায় ৪০হাজার সদস্য রয়েছে। তাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, পানি ও পয়:নিস্কাশন, সুরক্ষা, যোগাযোগ ও সিস্টেম শক্তিশালী করনে কাজ করে যাচ্ছে এই প্রকল্পটি।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য রেহানা ফেরদাউস,কোস্ট ট্রাস্ট এর ভোলা সদর  উপজেলা ট্রেনিং এন্ড মনিটরিং অফিসার মোঃ মনিরুজ্জামান, চরফ্যাশন উপজেলা মনিটরিং অফিসার মো: ইউনুছ, মো: মনির হোসেন, মিডিয়া অফিসার আদিল হোসেন তপু, লালমোহন উপজেলার টেনিং এন্ড মনিটরিং অফিসার ফাতেমা বেগম প্রমুখ।  এসময় বিভিন্ন কিশোর-কিশোরী ক্লাবের প্রতিনিধিরা তারের বক্তব্য মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কার্যক্রম তুলে ধরেন।

LEAVE A REPLY