পেট্রাপোল, কলকাতা থেকে খুলনা। প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার পথ। চালু হয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন। খুলনা থেকে কলকাতা পর্যন্ত চলাচলকারী মৈত্রী ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গেল বৃহস্পতিবার এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস’ বন্ধন ট্রেনের উদ্বোধন করেন তাঁরা।
পাশাপাশি ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘এন্ড টু এন্ড কাস্টমস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস’ (ওয়ানস্টপ সার্ভিস) শুক্রবার (১০ নভেম্বর) থেকে চালু হয়েছে। শুক্রবার সকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে এই সার্ভিস পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক।
এই আনন্দ মুখর মুহূর্তটির জন্য পেট্রাপোল স্টেশন সেজেগুজে তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েক মাস আগেই। পরীক্ষামূলকভাবে গত এপ্রিল মাসের ৭ তারিখ পেট্রাপোলে যোগ হয় আট কামরার দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস। খুলনা অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর খুলনা-কলকাতা থেকে যাত্রীবাহী লাল-সবুজ ট্রেনের চলাচল শুরু হলো। গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি এই ট্রেনের পরীক্ষামূলক উদ্বোধন করেন।
এই ট্রেন যাত্রী নিয়ে ওপার বাংলায় যাওয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল গত জুন মাসে। বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়নি। সব বাধা পেছনে ফেলে এখন এই ট্রেন দুটি প্রাথমিকভাবে শনি ও রবিবার দুই দেশে যাতায়াত করবে।
১৯৬৫ সালে শেষবারের মতো এই পথ দিয়ে দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করেছিল। তারপর থেকে এই পথে ট্রেন চলাচল ছিল বন্ধ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর উদ্যোগে এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোল পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। নদীয়ার গেদে এবং বাংলাদেশের দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতা থেকে ঢাকার মধ্যে চলে যাত্রীবাহী ট্রেন ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’। পণ্যবাহী ট্রেনের সাফল্য আসায় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দাবি মেনে পেট্রাপোল–বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে কলকাতা–খুলনার মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়।
যাত্রাপথে দুই দেশের ইমিগ্রেশনের ঝামেলা দূর করতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ইমিগ্রেশন, কাস্টমসসহ অন্যান্য চেক আপ সেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রেনের ভেতরে খাদ্য-পানীয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকায় মাঝপথে কোথাও থামানোর প্রয়োজন নেই। ট্রেনটি কলকাতা থেকে ঢাকা পৌঁছাতে প্রায় ৩৭৫ কিলোমিটার দূরত্ব ভ্রমণ করতে হয়। এখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাতায়াতে যেখানে প্রায় ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগে। সেখানে ভ্রমণ সময় ৯ থেকে ১০ ঘণ্টায় নেমে আসবে।
দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস নামে এই ট্রেন সার্ভিস চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক ট্রান্স-এশিয়ান রেলরুটে অন্তর্ভুক্ত হবে বাংলাদেশ। এতে রেলপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুবিধাসহ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বৃদ্ধি পাবে।
শুধু তাই নয়। এখন থেকে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন যাত্রীদের ইমিগ্রেশন, কাস্টমসসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হবে যাত্রা স্টেশনেই। এ ক্ষেত্রে যারা কলকাতা যাবেন তাঁদের ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন এবং কলকাতা থেকে যারা বাংলাদেশে আসবেন তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কলকাতা স্টেশনেই সম্পন্ন করা হবে।
এই সার্ভিস চালু হলে ঢাকা ও কলকাতার দুই প্রান্তে শুরুতেই ইমিগ্রেশন, কাস্টমসসহ অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ সেরে নেওয়া হবে। ফলে মৈত্রী এক্সপ্রেসের মধ্যপথে আর কোথাও বিরতির প্রয়োজন হবে না। ট্রেনটি ননস্টপ চলাচল করবে।
দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার সম্প্রসারণে দীর্ঘ ৪৩ বছর পর ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল মৈত্রী ট্রেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ছাড়া ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে এখন সপ্তাহে ছয়দিন মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করে। এটি এখন সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ভাড়া ভ্রমণ করসহ এক হাজার ৬৩৩ টাকা। প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে পাঁচ বছরের নিচের বয়সের শিশুরা ৫০ শতাংশ কম ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারে।
অপেক্ষাকৃত কম ভাড়া ও আরামদায়ক ভ্রমণ হওয়ায় এখন ঢাকা-কলকাতা ভ্রমণের ক্ষেত্রে মৈত্রী এক্সপ্রেস বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে এখন আর ট্রেনের আসন তেমন খালি থাকে না। প্রতিদিন উভয় দিক থেকে প্রায় ৫ শতাধিক যাত্রী এই ট্রেনে যাতায়াত করে। মৈত্রী ট্রেনের সেবার মান আরো বাড়াতে এবং এই ট্রেনে ভ্রমণ সহজ, আরামদায়ক ও গতি বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। (এনটিভি অনলাইন)