চরফ্যাশন প্রতিনিধিঃ চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর কচ্ছপিয়া এলাকায় “চার্চ কলোনির ৫৪টি অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবার জিম্মি সাইদ ফরাজীর কাছে” শিরনামে ১০/১১ সেপ্টেম্বরে জাতিয়,আঞ্চলিক ও একাধিক অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রচারের পর থেকে চার্চ কলোনির গরিব অসহায় হত দরিদ্র এসব পরিবারকে নানান ভাবে হয়রানি করে আসছে সাইদ ফরাজি ও তার চক্র। চার্চ অফ বাংলাদেশের টমাস সংকর বিশ্বাস ও স্বপনের যোগসূত্রে অসহায় পরিবারের সৃজিত গাছ ও পুকুরের মাছ বিক্রি করে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ভুক্তভোগীরা ৪ জনকে আসামী করে চরফ্যাসন সিনিয়র ম্যাজিষ্টেট কোর্টে মামলা দায়ের করেছে। উক্ত মামলাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য সাইদ ফরাজি গং উঠে পড়ে লেগেছে বলে ভূক্তভোগীরা জানান।
এ কলোনী ১৯৯১ সালে পলংকরী ঘুর্ণিঝড়ে আশ্রয়হীন হতদরিদ্র পরিবারকে পুর্নবাসনে চার্চ অফ বাংলাদেশ দক্ষিণ আইচা থানার মানিকা ইউনিয়নের চর কচ্ছপিয়া গ্রামে ৫৪ টি পরিবারকে দেয়া হয়। তাদের আয়বর্ধক কর্মকান্ড পরিচালনা ও প্রশিক্ষনের জন্য বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টকে দায়িত্ব দেয়ার ফলে ১৯৯৮ সাল হতে এ যাবত কোস্ট ট্রাস্ট তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে কাজ করছেন।
চার্চ কলোনীর দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর যাবৎ ৫৪ পরিবার যৌথ ভাবে পুকুরে মাছ চাষ ও নিজ নিজ আঙ্গিনায় গাছপালা লাগিয়ে অন্যান্য আয়বর্ধন মূলক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
চার্চ অব বাংলাদেশের কতিপয় লোকের যোগসাজসে (টমাস সংকর ও স্বপন) কলোনীতে বসবাসরত পরিবারগুলোকে বসত ভিটা রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার নামে কচ্ছপিয়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ সাইদ ফরাজি ও তার ছেলে রফিক ফরাজীসহ অন্যান্যরা বিভিন্ন সময়ে নগদ টাকা, পুকুরের মাছ ও গাছ বিক্রি করে মোট প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছে। দফায় দফায় হত দরিদ্র পরিবার থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে।
কচ্ছপিয়া এলাকায় বসবাসরত ছিন্নমূল অসহায় পরিবারদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের মাঝে অজানা আতঙ্কের কথা। সাইদ ফরাজী ও তার ছেলের কাছে জিম্মি চার্চ কলোনী বাসী। কলোনীর বাসিন্দা তোফায়েল, জাহাঙ্গির, শাহে আলম, রহিমা বেগম, সফুরা খাতুন,রহিমা বেগম,মাকসুদ,সাধনা রানী,রিয়াজ,গনেশ চন্দসহ একাধিব বাসিন্দা জানান, বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট আমাদেরকে আয় বর্ধন মূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষন ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে স্বাবলম্বী করতে সহায়তা করছেন। হত দরিদ্ররা আয়মূলক কাজে স্বাবলম্বী হওয়ায় ট্রাস্টি থেকে স্ব স্ব বসত ভিটা রেজিষ্ট্রি করতে হবে বলে সাইদ ফরাজী স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসীদের নিয়ে উচ্ছেদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দরিদ্রদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে। এবং সম্প্রতি পুকুরে মাছ ছাড়ার কথা বলেও কলোনী বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী চার্চ অফ বাংলাদেশের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী ট্রাস্টির সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় দলিল দেয়ার কোন বৈধতা নেই বলেও আমরা মনে করি।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার (২৪সেপ্টেম্বর) বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের বিরুদ্ধে সাইদ ফরাজি গং সহ কতিপয় ব্যাক্তি মানববন্ধনের নামে নাটক সাজিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের সুনাম ক্ষুন্ন করার উদ্যেশ্যে বিভিন্নভাবে কুট কৌশল অবলম্বন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানিয় কলোনী বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান, কোস্ট ট্রাস্ট ৯১ সাল থেকে আমাদের কলোনী বাসিন্দাদের কল্যানে উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কলোনী বাসিন্দাদের পক্ষে মানববন্ধন করার নাটক সাজানোটা অন্যায় ও তা কোস্ট ট্রাস্টের সুনাম নষ্টে আইনাগতভাবে সাইদ ফরাজি গংদের বিচার দাবি ও তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
চর কচ্ছপিয়ার চার্চ কলনীর অসহায় পরিবার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলনকারী মামলায় অভিযুক্ত সাইদ ফরাজী জানান, আমি উক্ত কলোনী থেকে কোন টাকা উত্তোলন করিনি। ঢাকা থেকে ট্রাস্টির সম্পত্তি রক্ষনাবেক্ষনের জন্য মিঃ টমাস সংকর লিখিতভাবে আমাকে দায়িত্ব প্রদান করেন।
দক্ষিণ আইচা থানার ওসি (তদন্ত) মিলন কুমার ঘোষ জানান, সাইদ ফরাজিগং মানববন্ধন করেছে এমন কোনো বিষয়ে আমাদের জানা নেই এবং তারা থানায় মানববন্ধন সম্পর্কে পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করেনি।
ভোলা জেলার বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের সহকারি পরিচালক রাশিদা বেগম জানান, চার্চ কলোনীতে বসবাসরত দরিদ্র অসহায় ৫৪ পরিবারকে স্বাবলম্বী ও আর্থিক পুর্নবাসনে কোস্ট ট্রাস্ট কাজ করছে। কলোনীর গরীব মানুষকে বিভিন্ন আয় সহায়তা মূলক কর্মসংস্থানে প্রশিক্ষন দিয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে চার্চ অব বাংলাদেশ ঘুর্ণিঝড়ে আশ্রয়হীন ৫৪ পরিবারকে পরিচালনার জন্য কোস্ট টাস্টকে ৭০ শতাংশ সহ ৪ একর জমি হস্তান্তর করে। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর যাবৎ সুবিধাভোগী এসব হত দরিদ্র পরিবারকে কোস্ট ট্রাস্ট পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু স্থানিয় সাইদ ফরাজিসহ তার সহযোগীরা দরিদ্র অসহায় পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে অর্থ আত্মসাত করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও এই চক্রটির কুঠির জোর কোথায়? যে তারা উপকূলীয় মানুষের উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের বিরুদ্ধে অন্তত প্রশাসনকে না জানিয়ে উদ্যেশ্য প্রনোদিতভাবে সুনাম নষ্ট করার পায়তারা করছে।