ছোটন সাহা ॥
গার্মেন্টসকর্মী রাবিয়া (৩৫)। চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছেন রবিবার ভোর ৪টায় কিন্তু বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ফেরীঘাটে বসে থেকেও যেতে পারেননি। ছোট ২ ছেলেসহ পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি। ইলিশা ঘাটে চরম দুর্ভোগ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা তার। রাবিয়া জানান, ঈদের একদিন আগে শত ভোগান্তি উপেক্ষা করে চরফ্যাশনের দক্ষিন আইচা নিজের গ্রামের বাড়ি এসেছিলাম। ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে যেতে বাড়ি থেকে রওনা দেই কিন্তু ১১ ঘন্টা ধরে ইলিশা ঘাটে ফেরীর জন্য অপেক্ষা করেও ফেরীর দেখা পাচ্ছিনা। সোমবার গার্মেন্টস খুলবে। ঠিকমত যেতে না পারলে অনেক বিপদে পড়তে হবে। কিন্তু কখন যাবো তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
লালমোহন থেকে আসা অপর যাত্রী আরজু বেগম। তিনিও চট্টগ্রামে টেকেরহাট এলাকার গার্মেন্টসকর্মী। তিনিও ফেরীর অপেক্ষায়। বরিবার খুব ভোরে রওনা দিয়েও যেতে পারছেন না। জোয়ারের পানিতে ইলিশা ফেরীঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ফেরীতে উঠতে পারছেন না তিনি।
শুধু বারিয়া আর আরজু বেগম নয়, তাদের মত অনেক যাত্রীর চরম ভোগান্তি। ঈদের ছুটি শেষ করে কর্মস্থলে ফিরতে গিয়েও চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তারা।
রবিবার (২৭ আগস্ট) দুপুরের পর থেকেই মেঘনার জোয়ারে তলিয়ে গেছে ভোলার ইলিশা ফেরীঘাট। এতে ফেরীতে উঠা-নামা করতে পারছেনা কোন যানবাহন। এতে ভাটার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় ভাটার জন্য। এতে উভয় পাড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র লাইন জটের। ফেল কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলার সাথে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ভোলা-লক্ষীপুর ফেরী সার্ভিস। এ রুটে তিনটি ফেরী চললেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারেন একটি ফেরী দুইদিন ধরে বিকল থাকায় উভয় পাড়ে সৃষ্টি হয়েছে লাইনজটের। এরমধ্যে মেঘনার জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে ইলিশা ঘাট। ঘাটের পল্টুন, র্যাম ও এপ্রোস সড়ক তলিয়া যাওয়ায় ফেরী চলাচল মারাতœক বিঘেœর সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশেষ করে ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, পন্যবাহি পরিবহনগুলোও যথা সময়ে গন্তব্যে যেতে পারছেনা।
পটুয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের যাত্রী রোমানা বলেন, ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা ঘাটে বসে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
কয়েকজন যাত্রী জানান, ঘাটটি নিচু থাকার কারনে সামান্য জোয়ারে ডুবে যায়, এতে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়া মাঝে মধ্যেই ফেরী বিকল থাকে। যাত্রীরা নূন্যতম সেবা পাচ্ছেনা। ঘাটটি আরো উচু হলে কিছুটা দুর্ভোগ কমতো।
ঘাটে অপেক্ষমান হানিফ পরিবহনের শ্রমিক রহমান অভিযোগ করে বলেন, ফেরীতে আগে যাত্রীবাহি পরিবহন নেয়ার কথা থাকলেও পরিবহন নিচ্ছে কম, ট্রাক ও অন্য গাড়ি পারাপার করছে তাই যাত্রীদের ভোগান্তি। ইলিশ ফেরী ঘাটের অপারেশনের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিটিসি টার্মিনাল সহকারী হারুন অর রশিদ বলেন, জোয়ারে ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ফেরী চলাচল কিছুটা বিঘেœর সৃষ্টি হচ্ছে, আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
বিআইডব্লিএ টার্মিনাল সহকারি আবুল বাশার বলেন, কিছুদিন আগে ঘাটটি মেরামত করা হয়েছিলো কিন্তু ফের জোয়ারে বিধ্বস্ত হয়েছে, আমরা অতি দ্রুত ঘাট মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে।