ফ্যাশন করে চুল কাটালে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা—সমালোচনার মুখে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পুলিশের এই নোটিশ প্রত্যাহার হয়েছে সবেমাত্র। এর মধ্যেই সাভারের জনপ্রতিনিধিরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চুল কেমন করে কাটাতে হবে তা নিয়ে তৎপর হয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এটা সমাজের কাজ। তাঁরা ‘ভালো’ কাজ করছেন।
এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মানুষের মধ্যে। ফ্যাশন করে চুল কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধুবাদ জানিয়েছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে এর বিরোধিতা করছেন, শফিক উদ্দীন আহমেদ নামের একজন আগে পুলিশকে ভালো হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘একজন এএসআই হতে ১০/১২ লাখ টাকা লাগে, সেখানে চুল নিয়ে টানাটানি কেন?’কেকেজ ডায়েরি নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে বলা হয়েছে, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, ভোট দেওয়ার অধিকার নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই আর এখন আবার স্বাধীনভাবে চুল কাটব, সেটাও পারবে না এ দেশের জনগণ?’
কথা হচ্ছিল সাভার পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সাভার পৌর প্যানেল মেয়র হাজী মো. সেলিম মিয়ার সঙ্গে। তিনি মঙ্গলবার স্থানীয় নরসুন্দর সমিতির (শীল) সঙ্গে বৈঠক করে বলে দেন, ‘বখাটে স্টাইলে’ চুল কাটা যাবে না। সেলুন কর্তৃপক্ষ বা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই অনুরোধ না মানলে তাদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হবে। কেন এই বৈঠক জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিশোর-তরুণ-যুবকদের দেখতে যেন ভদ্র লাগে সে জন্য তিনি এলাকার নরসুন্দরদের সঙ্গে সোমবার আলোচনায় বসেছিলেন। তিনি নিজেই এই নিয়ম জারি করলেন, না কি অভিভাবক বা শিক্ষকদের অনুরোধে উদ্যোগী হলেন? এ প্রশ্নের জবাবে সেলিম মিয়া বলেন, তিনি নিজে থেকেই সমাজের উন্নয়নে এই কাজ হাতে নেন। এখন তিনি স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করবেন। অন্য ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিরাও এই কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অবশ্য তাঁর আগেই তেঁতুলঝরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম চুল কাটায় শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগ নেন।
উল্লেখ্য, ফ্যাশন করে চুল কাটার প্রথম নিষেধাজ্ঞা আসে টাঙ্গাইলের সখীপুরে। তবে সেটা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য হয়নি। বিষয়টি নজরে আসে গত ৭ মার্চ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে চুল কাটা নিয়ে নোটিশ জারির পর। নোটিশটি ইস্যু করেছিলেন, ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম। ওই নোটিশে বলা হয়, চুল-দাড়ি-গোঁফে ফ্যাশন করার ওপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আদেশ অমান্যকারীদের ৪০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। নোটিশের নিচে সাক্ষর ছিল, স্থানীয় নরসুন্দর সমিতির সভাপতি শেখর শীল, সাধারণ সম্পাদক অরুণ শীল ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলামের।
এর এক সপ্তাহের মাথায় ঝালকাঠিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ হাসান স্থানীয় নরসুন্দর সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, তাঁরা নিয়মিত স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং এর অংশ হিসেবে স্কুল পরিদর্শনে যান। সেখানে ছাত্রীরা জানায়, যারা ইভ টিজিং করে তাদের বেশভূষা ও চুল কাটা দেখলেই ভয় পায় তারা। এরপরই তারা নরসুন্দর সমিতিকে অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন চুলটা ‘মার্জিত’ভাবে কাটেন। তবে তাঁরা কোনো নির্দেশনা জারি করেননি, অনুরোধ করেছেন। ছেলেদেরও বুঝিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা এই উদ্যোগে খুশি।
তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পুলিশ যা-ই বলুন না কেন, বিষয়টি নিয়ে কিশোর-তরুণ-যুবকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। তারা প্রশ্ন তুলছে, কে কীভাবে চুল কাটবে সেটা জনপ্রতিনিধি বা পুলিশ ঠিক করে দেওয়ার কে। এমনকি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ পুলিশের ইস্যু করা নোটিশটি খারিজ করেছেন।
ঝোটন চন্দ বলেন, চুল কাটার নিয়ম বেঁধে দেওয়া ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। এটা নিয়ে জরিমানা ধার্য করার এখতিয়ারও প্রশাসনের নেই। এ ধরনের নোটিশ যে জারি হয়েছে , সেটা তাঁর কানে আসে বেশ পরে। কেউ কেউ যখন চুল কাটাতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ছিলেন, তারা হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁদের বিরক্তির কথা লিখেছেন। তিনি জানতে পেরে গত ২২ মার্চ নোটিশটি প্রত্যাহার করেন।
ভূঞাপুর নরসুন্দর সমিতির সভাপতি শেখর শীল বলছিলেন, উঠতি বয়সের কিশোর, তরুণ-যুবকেরা চুল নিয়ে স্টাইল করতে পছন্দ করেন। নোটিশ প্রত্যাহার হলেও পুলিশ যেহেতু বলেছে, তাঁরা আর স্টাইল করে চুল কাটবেন না।