চরফ্যাশনে অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস করে দিলো ভ্র্যাম্যমান আদালত

0
406
সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন প্রতিনিধি,ভোলা নিউজ ২৪ডটনেট।। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার তেতুলিয়া নদীর পাড়ে শাহাজালাল ইটভাটায় কাঠ ও ফসলী জমির মাঠি কেটে ইট তৈরি করায় আজ মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আশীষ কুমার ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ভেকু এবং ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গুড়িয়ে দেয়। তেতুলিয়া নদীর ভাঙনকবলিত স্থানগুলো থেকে প্রকাশ্যে শাহাজালাল ইটভাটায় যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করায় হুমকির মুখে উপকূলীয় বাঁধ। ভাঙনে বেঁড়িবাধের কাছাকাছি নদী ঘঁনিয়ে আসছে। ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। গ্রামে ঘঁনবসতি এলাকা বেড়িবাঁধের ঢালে অবৈধ টিনের ছোট চিমটি ব্যবহার করে কাঠ কাঠ পুড়িয়ে এই শাহাজালাল ইটভাটা ইট তৈরি করছে। ভাটায় ইটতৈরীর জন্য নির্বিচারে কাটা হচ্ছে বেড়িবাঁধ এবং স্থানীয় কৃষকদের ফসলের জমি। ফসলের জমি কাটার প্রতিবাদ করায় শাহাজালাল ইটভাটা মালিক পক্ষের লোকজন কৃষক পরিবারের উপর একাধিক বার হামলার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। নদী তীরের মাটি কাটায় ভাঙনের গতি আরো বেড়ে উঠছে। এব্যাপারে গত ১৬ফেব্রুয়ারী ভোলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন খান উক্ত বিকস ফিন্ডের ১লাখ টাকা জরিমান করছে। তার পর ইট ফোড়ায় বন্ধ না করায় অবশেষে আজ মঙ্গলবার তা গুড়িয়ে দেয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের তেতুলিয়া নদীতীরবর্তী অনন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে একদিকে ভাঙন, অন্যদিকে ভেকু ও শ্রমিকদের দল বেঁধে মাটি কাটার উৎসব। এই মাটি কেটে নিচ্ছে ভাটা মালিকচক্র। এই চক্র কখনো দিনের আলোয় আবার কখনো রাতের আঁধারে চালায় নদীতীরের মাটি কেটে নেওয়ার কাজ।
চরফ্যাশন উপজেলা প্রায় ২৭ইটভাটায় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ১০টি ইট তৈরিতে প্রতিদিন কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট মাটি। আর এই মাটির সবটুকু জোগান দিচ্ছে তেতুলিয়া নদীর পাড়ের ও কৃষকের ফসলি জমির উর্বর মাটি। সংবাদ কর্মী বা প্রশাসনের লোকজন গেলে মাটি কাটা বন্ধ থাকে।
মালিকপক্ষের হয়ে শাহজালাল ইটভাটার পরিচালনার দায়িত্বরত কামাল উদ্দিন জানান, জনৈক বাচ্চু মিজির কাছ থেকে জমি ক্রয় করে তারা এই ইটভাটা নির্মাণ করেছেন। ইটভাটার অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হলেও এখনো অনুমোদন মিলেনি। একটু বিনিময় করে বলেন এই ইটভাটায় দিয়ে লচে(লোকসানে)আছি। তবে বেড়িবাঁধের ঢালের এই জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধিন কি না এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিভিশন-২) কাইছার আলম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে ইটভাটা গড়ে উঠার খবর তার জানানেই। কেউ তা করে থাকলে অবৈধ জবর দখলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, তেতুলিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোল ঘেঁষে তারা মাটি কেটে নিচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব নদীতীরবর্তী নদীভাংঙ্গন রক্ষাতে পাশে ব্লোক তৈরি করে বাধ নির্মানের চেষ্টা করছে। নদীর ভাঙ্গনরোধ প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে এখানে ব্লক তৈরীর কাজও চলছে। অথচ শাহাজালাল ইটভাটায় নদীর পাড়ের মাটি কেটে আরো নদীগর্ভে বিলিন করছে। ইটভাটার ইটতৈরীর মাটির যোগান দেয়ার জন্য বেড়িবাঁধের ঢাল এবং সংলগ্ন এলাকার কৃষকদের জমির আবাদি ফসল কেটে মাটি তোলা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা- জানান, ভাঙনের অতি কাছ থেকে মাটি কাটায় পার আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় জড়িতরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডরের জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার সব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও তেতুলিয়া নদীর তীর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অথচ সেই বাঁধের অতি কাছ থেকে একশ্রেণির লোক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মচারী বলেন, ‘এই কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ভাটার মালিকরা মাসোহারা দিয়ে থাকে। আমাদের কর্মকান্ড বন্ধ হয় না। মধ্য থেকে খরচের পরিমাণটা বেড়ে যায়। ভাটা মালিকদের কিছুই হয় না।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.রুহল আমিন বলেন, ‘নদীতীরের মাটি কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ । আমি এ অবৈধ কর্মকান্ডে বন্ধের কাজ করছি। মঙ্গলবার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আশিষ কুমার জানান, আমরা অবৈধ সকল বিষয়ে উচ্ছেদের চেষ্টা করছি। আজ শাহাজালাল ইটভাটা বিনষ্ট করা হয়েছে। অবৈধ কোন স্থাপনা চরফ্যাশনে রাখা হবেনা।

LEAVE A REPLY