যে কারণে রিয়ালের এমন দুর্দশা

0
259

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেটঃ  ‘আমরা কোনো সংকটে পড়িনি!’ জিনেদিন জিদানের এমন অভয়বাণীতেও মনে হয় না কোনো কাজ হচ্ছে। কাল তো ‘অপয়া তেরো’তেই কাটা পড়তে হলো তাদের। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে ইংলিশ কোনো ক্লাবের বিপক্ষে ১৩তম বারের মতো মাঠে নেমেছিল কাল রিয়াল মাদ্রিদ। তাতে প্রথমবারের মতো হার! টটেনহাম হটস্পারের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে হেরে বসেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। দুদিন আগে এর চেয়েও বড় ধাক্কা খেয়েছে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। প্রথমবারের মতো লা লিগায় খেলতে আসা জিরোনার কাছে হেরেছে ২-১ গোলে। টানা দুই পরাজয়েই যে সব শেষ হয়ে গেছে তা নয়, কিন্তু গত কিছুদিনের চেনা সুর যে কেটে গেছে সেটা নিশ্চিত।

কোন সুর? যে সুরে ইউরোপের সেরা রক্ষণের জুভেন্টাসকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল। যে সুরে ভর করে বার্সেলোনাকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতে নিয়েছিল রিয়াল। এর মাঝে বার্নাব্যুর ম্যাচে তো রীতিমতো অসহায় মনে হচ্ছিল বার্সেলোনাকে। অথচ সে ম্যাচে মাঠে ছিলেন না ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেল এবং দলের প্রাণভোমরা ইসকো! আড়াই মাস আগের সে ম্যাচের পর মনে হচ্ছিল, এ রিয়ালকে আটকানোর সামর্থ্য যেন কারওরই নেই। জিদানের রিয়ালকে মনে হয়েছিল অপ্রতিরোধ্য!

আগস্ট থেকে নভেম্বর আসতে আসতেই বদলে গেছে প্রায় সবকিছু। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে পাঁচ বছর অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে গেছে। লিগে ১০ ম্যাচ যেতে না যেতেই বার্সেলোনার চেয়ে ৮ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছে তারা। কোপা ডেল রেতেও তৃতীয় বিভাগের দলের বিপক্ষে জয় পেতে দুটি পেনাল্টির দরকার হয়েছে জিদানের দলের। রিয়ালের হলোটা কী?

রিয়ালের বাজে অবস্থার সম্ভাব্য কারণগুলো এক নজরে দেখে নিন…
একটু চাপেই ভেঙে পড়ছে রিয়ালের রক্ষণভাগ।

গোলরক্ষক
আবারও চোটে পড়েছেন কেইলর নাভাস। গত মৌসুমে তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করে দিয়েছিলেন কিকো ক্যাসিয়া। এবার তাঁর পারফরম্যান্স একেবারেই ভরসা রাখার মতো নয়। রিয়াল একাডেমির এই গোলরক্ষকের বাজে ফর্মের পাশাপাশি নাভাসের অনুপস্থিতি ভালোই ভোগাচ্ছে রিয়ালকে।

রক্ষণ
রিয়ালের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রক্ষণে। পেপে চলে গেছেন ক্লাব ছেড়ে। তাঁর বদলি তরুণ ভায়েহো চোট কাটিয়ে ফিরেছেন মাত্র সেদিন। রাফায়েল ভারানেও দুদিন পর পরই ক্লাবের চিকিৎসকদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। প্রতি ম্যাচেই রিয়াল রক্ষণের ‘কঙ্কাল’ বের হয়ে যাচ্ছে। অধিনায়ক রামোসও যে খুব ভালো খেলছেন, তা নয়। সব কাজের ‘কাজি’ নাচোও যেন ভার বইতে বইতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন!
তবে রিয়ালের মূল সর্বনাশ হয়েছে দুই ফুলব্যাকের চোটে। বুকে সংক্রমণের কারণে দেড় মাস ধরে মাঠের বাইরে কারভাহাল। সে শূন্যস্থানে পূরণ করতে হাকিমি ব্যর্থ। একাডেমির এই তরুণ নিজের সর্বস্বটাই দিচ্ছেন। কিন্তু আক্রমণে কারভাহালের ডিফেন্স এলোমেলো করে দেওয়া দৌড় কিংবা ক্রস পাচ্ছে না রিয়াল। মার্সেলোও চোট থেকে ফিরে এসে নিজের ছায়া হয়ে আছেন। পাস বাড়ানোর আগে অযথা সময় নিচ্ছেন। ক্রসগুলোও দিতে পারছেন না ঠিকমতো। রিয়ালের গোল কমে যাওয়ার পেছনে ফুলব্যাকদের এমন নখদন্তহীন হয়ে পড়াটা বড় ভূমিকা রেখেছে।
ফর্ম হারিয়ে ফেলেছেন মডরিচ-ক্রুস-কাসেমিরো। 

মধ্যমাঠ
বিশ্বের সেরা মধ্যমাঠ হারিয়ে ফেলেছে তাদের ধার। ইসকো তারপরেও প্রতি ম্যাচে জাদুকরী কিছু মুহূর্ত উপহার দিচ্ছেন। ড্রিবলিং দিয়ে চোখ কপালে তুলছেন দর্শকদের। কিন্তু বাকিরা যে তাঁকে ঠিকমতো সঙ্গই দিতে পারছেন না! লুকা মডরিচ তো ১০ নম্বর জার্সির ভারে নুইয়েই পড়েছেন। টনি ক্রুস শেষ কবে ‘ডেড বল’ থেকে কোনো গোল করিয়েছেন সেটি হয়তো ভুলে গেছেন রিয়াল-ভক্তরা। কাসেমিরোর অবস্থাও তথৈবচ। কোভাচিচ চোটে পড়ায় তাঁকে দলে পাওয়ার আশা নেই। কিন্তু মাঝমাঠের এমন অবস্থাতেও সেবায়োসকে সুযোগ দিতে জিদানের কেন যেন বড্ড আপত্তি। এসেনসিওকেও মূল একাদশে জায়গা দিচ্ছেন না জিদান। হামেস রদ্রিগেজের মতো গোল করতে পারঙ্গম একজন মিডফিল্ডারকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখন বড় ধরনের ভুলই মনে হচ্ছে।
অতিরিক্ত রোনালদো-নির্ভর হয়ে পড়েছে রিয়ালের আক্রমণভাগ। 

আক্রমণভাগ
গোল পাচ্ছেন না ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো! না, এ কথা বলার উপায় নেই। চ্যাম্পিয়নস লিগে ৬ গোল করে এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদো। কিন্তু লিগে মাত্র এক গোল তাঁর। করিম বেনজেমা হতাশ করেই যাচ্ছেন। গ্যারেথ বেল তো মাঠের চেয়ে ক্লাবের ‘রিকভারি রুমে’ই বেশি সময়। গত মৌসুমে মোরাতা বেনজেমা-বেলের গোল-খরা সামলে নিয়েছিলেন। কিন্তু সে মোরাতাও এখন নেই ক্লাবে। আর মায়োরাল তো সুযোগই পাচ্ছেন না।

ফরমেশন
রিয়ালকে শুরুতে ৪-৩-৩ ফরমেশনেই বেশি খেলাতেন জিদান। এতে রোনালদো নিজের প্রিয় লেফট উইংয়ে খেলতে পারেন। বেনজেমাও রোনালদোর জন্য রক্ষণে জায়গা সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু বেলের চোট এবং ইসকোর উত্থান মিলিয়ে ৪-৪-২ ফরমেশনেই বেশি দেখা যাচ্ছে রিয়ালকে। এতে রোনালদো অস্বস্তিতে ভুগছেন। বেনজেমাও পারছেন না নিজের কাজটা ঠিকভাবে করতে। ভাসকেজ ফর্ম হারিয়ে ফেলায় জিদানের পক্ষে ৪-৩-৩ ফরমেশন নামানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

LEAVE A REPLY