মুখ থুবড়ে পড়ছে বরিশালের গ্রে বোর্ড নির্মাণ শিল্প

0
310

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট।। পরিত্যক্ত কাগজের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে বরিশালে গ্রে বোর্ড নির্মাণ শিল্প। চাহিদা থাকা সত্যেও ভাঙারি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে এ শিল্পের প্রসার ঘটছে না। সাত বছরের ব্যবধানে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠে দুটি পরিবেশ বান্ধব গ্রে বোর্ড তৈরির কারখানা। তবে কাগজ সংকটে লোকসান গুনতে হচ্ছে মালিকদের। বরিশাল নগরীর কাউনিয়া বিসিক শিল্প এলাকা ও নগরীর হরিপাশা এলাকায় দুটি গ্রে বোর্ড তৈরির কারখানা অবস্থিত। পরিত্যাক্ত কাগজ সংগ্রহের পর মেশিনের সাহাজ্যে মন্ড বানিয়ে তা দিয়ে তৈরি করা হয় গ্রে বোর্ড। মিষ্টির বাক্স, জুতার বাক্স, বই বা খাতার মলাট তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে গ্রে বোর্ড।

বরিশালে পরিবেশ বান্ধব এ শিল্পের সূচনা ঘটে ২০১০ সালে। ওই সময় নগরীর ২৮নং ওয়ার্ডের হরিপাশায় সাড়ে সাত শতাংশ জমিতে টিন সেড ঘরে আর.বি বোর্ড মিল নামে গ্রে বোর্ড তৈরী প্রতিষ্ঠান চালু করেন সেরনিয়াবাত সাহেনুল ইসলাম ও মো. বোরহান উদ্দিন নামে দুই ব্যক্তি।

কারখানায় তৈরি হওয়া গ্রে বোর্ড বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছে। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়।

সরেজমিনে আর.বি বোর্ড মিলে দেখা যায়, পরিত্যক্ত কাগজ সংগ্রহ করে তা কারখানার বাইরে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। পরে তা বড় একটি হাউজে পানিতে গলিয়ে পলিথিন সহ অন্যান্য বস্তুত অপসারণ করা হয়। এর পর মেশিনের সাহাজ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা গ্রে বোর্ড হয়ে বের হচ্ছে। একজন কারিগর দাড়িয়ে মেশিন থেকে গ্রে বোর্ড নামাচ্ছেন। অপর দুই নারী শ্রমিক তা বান্ডেল করে সাজিয়ে রাখছেন। বান্ডেলগুলো কয়েকজন পুরুষ শ্রমিক মাথায় করে কারখানার পাশেই বিশাল বিলের মধ্যে নিয়ে শুকাতে দিচ্ছেন। এভাবেই তৈরি হচ্ছে গ্রে বোর্ড।

কারখানার উৎপাদন ও শ্রমিকদের তত্ত্বাবধায়নে থাকা বাবুল হাওলাদার জানান, তাদের এই কারখানায় প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাগজের গ্রে বোর্ড তৈরির কাজ চলে। নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ১৬ জন শ্রমিক কাজ করে এই কারখানায়। যার মধ্যে ৬ জন নারী এবং বাকিরা পুরুষ। এদের মধ্যে ৩ জন কারিগর। এদের প্রত্যেকের বেতন ৯ হাজার টাকার উপর। এছাড়া অন্য যারা রয়েছেন তাদের বেতন সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।

বাবুল হাওলাদার বলেন, চারটি সাইজের ১ টন গ্রে বোর্ড উৎপাদনে ১৩ থেকে ১৪শ কেজি উচ্ছিষ্ট কাগজের প্রয়োজন। যা আমাদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। তিনজন ফেরিওয়ালা ও আরো দুটি ভাঙারি দোকান থেকে আমরা ১৩ থেকে সাড়ে ১৪ টাকা কেজি দরে কাগজ পেয়ে থাকি। সচরাচর প্রতিটন গ্রে বোর্ড বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকায়। কোন কোন ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে তা পরিস্থিতি ও চাহিদার উপর নির্ভর করে।

 গ্রে বোর্ড তৈরির কারখানা 

বি.আর বোর্ড মিল এর কারিগর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে যে মেশিনটি রয়েছে তা দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই টন গ্রে বোর্ড উৎপাদন সম্ভব। তাতে বেশি একটা সময়ের প্রয়োজনও নেই। কিন্তু পরিত্যক্ত কাগজ সংকটের কারণে এক টনের বেশি গ্রে বোর্ড উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। কোন কোন দিন একটন কাগজও উৎপাদন করা সম্ভব হয় না।

বি.আর বোর্ড মিলের মালিক মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ব্যাংক লোন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। আমরা যখন এ মিলটি চালু করি তখন বরিশালে আর কোন গ্রে বোর্ড উৎপাদন কারখানা ছিলো না। তবে বছর চারেক আগে বিসিক এলাকায় আরো একটি গ্রে বোর্ড কারখানা চালু হয়।
তিনি বলেন, শুরুতে নেয়া ব্যাংক ঋণ এখনো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। কারণ চাহিদার তুলনায় আমাদের উৎপাদন কম। প্রতিদিন শুধুমাত্র বরিশালেই সর্বনিম্ন ১০ কেজি থেকে এক টন পর্যন্ত গ্রে বোর্ড এর চাহিদা রয়েছে। তার পর ঢাকা সহ অন্যান্য অঞ্চল থেকেও অর্ডার আসছে। কিন্তু সব অর্ডার নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এর কারণ উল্লেখ করে বোরহান উদ্দিন বলেন, যে পরিমান পরিত্যক্ত কাগজের চাহিদা তা পাচ্ছি না। কারণ ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ীরা বরিশালের ভাঙারি ব্যবসায়ীদের আগাম দাদন দিয়ে রেখেছেন। তাই বরিশালের পরিত্যক্ত কাগজ ঢাকায় চলে যাচ্ছে। আমরা ঢাকা থেকে বার্তি টাকা দিয়ে পরিত্যক্ত কাগজ কিনে আনতে হচ্ছে। তার মধ্যে প্রতি মাসে কম করে হলেও ৭০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। তার সাথে স্টাফদের বেতন।

তিনি বলেন, আমাদের বোর্ড শুকানোর জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। কারখানার পাশে বিশাল একটি বিলে কাগজগুলো শুকাতে হয়। এ কারণে ওই বিলটি এখন কাগজের বিল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে একদিনের মধ্যেই বোর্ডগুলো শুকিয়ে যায়। আর খারাপ থাকলে তিন থেকে চারদিনও লাগে। তবে বৃষ্টি মৌসুমে মাঠে পানি থাকে। এজন্য তখন উৎপাদনও কমিয়ে দিতে হয়। এসব কারণেই বছর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে। গেলো বছরেও দেড় লাখ টাকা লোকসান দিয়েছি।

বরিশাল বিসিকের গ্রে বোর্ড কারখানারও একই অবস্থা জানিয়ে বি.আর বোর্ড মিল এর সত্ত্বাধিকারী বোরহান উদ্দিন বলেন, এ শিল্পের প্রসার ঘটাতে অর্থের প্রয়োজন। পাশাপাশি ভাঙারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এতে করে গ্রে বোর্ড নির্মাণ শিল্পের প্রসার ছাড়াও বরিশালের অর্থনৈতিক ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভুমিকা রাখা সম্ভব।

LEAVE A REPLY