ভোলা নিউজ২৪ডটকম।। জাল কাগজপত্র দিয়ে নতুন রেজিস্ট্রেশন করে চোরাই গাড়ি রাস্তায় চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়ার মামলায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি’র (বিআরটিএ) পরিদর্শক আইয়ুব আনসারীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। উচ্চাদালতের জামিনের মেয়াদ শেষে সোমবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে আইয়ুব আনসারী বরিশাল বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসর্পন করে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মো. মহিসন উল হক আসামীর জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরনের নির্দেশ দেন। আইয়ুব আনসারীর আইনজীবী মোখলেচুর রহমান বাচ্চু এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত আইয়ুব আনসারী বরিশাল নগরীর পশ্চিম কাউনিয়া সাধুর বটতলা এলাকার মৃত আতাহার আলী হাওলাদরের ছেলে। আনসারী বর্তমানে ঢাকা বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের (ইঞ্জিঃ) অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ মাদারীপুর জেলার মশিউর রহমান ঠাকুরের ভাড়ায় চালিত একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৩৫০) মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানা এলাকা থেকে চুরি হয়। এ ঘটনায় একই দিন গাড়ির চালক শাহজাদা শিকদার শিবালয় থানায় সাধারন ডায়েরী করেন। পরবর্তীতে গাড়ির মালিক মশিউর রহমান ঠাকুর জানতে পারেন একই চেসিস নম্বরে ১টি মাইক্রোবাস বরিশাল বিআরটিএ অফিসের মাধ্যমে নতুন রেজিস্ট্রেশন (বরিশাল ছ-১১-০০৩৯ নম্বর) ব্যবহার করে রাস্তায় চলাচল করছে।
এ ঘটনা মশিউর রহমান ঠাকুর বরিশাল এবং ঢাকা বিআরটিএ অফিসে অবহিত করেন। বরিশাল বিআরটিএ অফিস কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই করে ওই রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করে। মশিউর রহমান ঠাকুর বরিশাল বিআরটিএ অফিসে গাড়িটি ফেরত পেতে আবেদন করেন। অফিস কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই বাছাই করতে চট্রগ্রাম কাস্টম হাউজে প্রেরণ করেন। কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে কোন মিল না থাকায় তা বরিশাল বিআরটিএ অফিসকে অবগত করেন।
এর আগে রূপ কুমার বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি বরিশাল নগরীর নতুন বাজার এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে ওই চোরাই মাইক্রোবাসটির মালিক হিসাবে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য বিআরটিএ অফিসে আবেদন করেন।
তার আবেদনের প্রেক্ষিতে একই বছর ২৬ সেপ্টেম্বর সহকারী পরিচালক তার অধীনস্ত মোটরযান পরিদর্শক আইয়ুব আনসারীকে কাগজপত্র যাচাই করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু আইয়ুব আনসারী নিজ স্বাক্ষরে গ্রাহক রূপ কুমার বিশ্বাসের দাখিলকৃত কাগজপত্র সঠিক ও ত্রুটিমুক্ত উল্লেখ করে সনদ প্রদান করেন। তার সুপারিশের ভিত্তিতে তৎকালিন সহকারী পরিচালক নূরুজ্জামান চোরাই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্রদান করেন। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই কোতয়ালী মডেল থানায় বরিশাল বিআরটিএ’র তৎকালিন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এমডি শাহ আলম রেজিস্ট্রেশন গ্রহণকারী রূপ কুমার বিশ্বাসকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনায় ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মোটরযান পরিদর্শক আইয়ুব আনসারী ও রূপ কুমার বিশ্বাসকে অভিযুক্ত করে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিআরটিএ’র নির্ধারিত ফরমে আবেদনপত্রের সাথে গ্রাহকের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র না নিয়ে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও গাড়ি চোর-ছিনতাইকারীদের সাথে যোগসাজসে অবৈধ লাভবান হতে এবং মূল অপরাধীকে আড়াল করার অপরাধে তৎকালীন মোটরযান পরিদর্শক আইয়ুব আনসারীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ওই মামলা থেকে রূপ কুমার বিশ্বাসকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।