মো: আফজাল হোসেন :: ভোলায় মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ের প্রাপ্য চাল না পাওয়া এবং কম পাওয়ার অভিযোগ দীর্য দিন ধরেই চলছে। এর ফাকে মাছ ধরা থেকে থেমে নেই জেলেরা। টাকার বিনিময়ে চাল ও জেলে কার্ড দেয়ার অভিযোগে হামলা হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান এর উপর। হয়েছে মামলা পর্যন্ত। তবে সাধারন জেলেরা বলছে শুধু চাল নয়,এই সময় এনজিও গুলোর কিস্তির টাকা আদায় বন্ধ করতে হবে সরকারের।
ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। সেজন্য জেলেদের জন্য চাল বরাদ্ধ করা হয়। তবে বরাদ্ধকৃত চাল সঠিক সময় আর সঠিক নিয়মে না পাওয়ার অভিযোগ জেলেদের। একই সাথে জেলেদের কাছ থেকে টাকা আদায়সহ কালো বাজারে চাল বিক্রির অভিযোগতো রয়েছে। রমজানে থেমে নেই অনিয়ম। বিক্রি হচ্ছে কালো বাজারে।
জেলা মৎস্য অফিস সুত্র মতে,জেলার ১লাখ ৫৯হাজার ৯৩৬জন নিবন্ধিত জেলের মাঝে ৮৯হাজার ৪১০জন জেলের জন্য বরাদ্ধ হয়েছে ১৪ হাজার ৩০৫ মে:টণ চাল। বরাদ্ধের ১৪হাজার ৩০৫ মে: টণ চালের শধ্যে কাগজপত্রে বিতরন হয়েছে মাত্র ৪হাজার ২১২ মে: টণ। সবচেয়ে বেশি রয়েছে চরফ্যাশন উপজেলায় ৪৪হাজার ৩১১ জন নিবন্ধিত জেলের বিপরীত চাল বরাদ্ধ হয়েছে ২১হাজার জেলের জন্য ৩হাজার ৩৬০মে:টণ চাল। এ ব্যবস্থাপনা নিয়েও রয়েছে চরম ক্ষোভ।
জেলেদের অভিযোগ আর মৎস্য অধিদপ্তর সুত্র মতে, ইলিশ না ধরে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে জেলেরা। দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ৪মাস জেলেদের জন্য চাল দেয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। নদীতে মাছ ধরার উপর নিশেধাজ্ঞা থাকার পরেও থেমে নেই মাছ ধরা। তবে এবিষয় জেলেদের সাথে আলাপে জানাযায়,সকল জেলে চাল পাচ্ছেনা,প্রভাবশালী এবং জেলে নয় এমন ব্যক্তিরাই চাল পাচ্ছে। এছাড়া প্রতিমাসে ৪০কেজি করে ৪মাসে ১৬০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও ৬০/৭০ কেজি কিংবা তার চেয়েও কম দেয়া হচ্ছে জেলেদের।
ইলিশা মেঘনা পাড়ে কথা হয় মো আ: রহিমের সাথে। ছোট শিশুদের নিয়ে নৌকায় মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত। এক পর্যায়ে রহিম বলেন,মাছ না ধরে উপায় নেই। জেলে চাল সরকার দিচ্ছে অনেক জেলে পাচ্ছে,তবে আমরা পাচ্ছি না।প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছে। কাঠিরমাথায় কথা বলতে গিয়ে বৃদ্ধ বলেন,প্রকৃত জেলেদের জন্য কিছু নেই। দলীয় জেলেদের জন্য সব আছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সব সময় চাল নিচ্ছে। এদিকে লালমোহন উপজেলার ফরাশগঞ্জ ইউনিয়নের অনিয়মের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ জেলেরা চেয়ারম্যানের উপর হামলা করেছে।
জেলেদের কাছ থেকে ১৫শত টাকা নিয়ে জেলে কার্ড এবং চাল দেয়ার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যান ফরহাদহোসেন মুরাদ এর বিরুদ্ধে। ইউনিয়নের ৫নংওয়ার্ড এর জেলে মোতালেব পাটোয়ারী চা্ল আনতে গেলে তার কাছে ১৫শত টাকা দাবী করে,এনিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন উপস্থিত জেলে তার উপর হামলা করে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে লালমোহন হাসপাতাল পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হয়। এঘটনায় ১নং ওয়ার্ড মেম্বার মোশারেফ হোসেন কাজলসহ ৬জন মেম্বারসহ ২৬জনকে আসামী করে ইউপি চেয়ারম্যান বাদী হয়ে মামলা করেন।
এবিষয় বিষয় ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার জাহিদ,৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মো: শাকিল মোল্লা বলেন,দীর্য দিন ধরেই চেয়ারম্যান অনিয়ম করে আসছে। টাকা নিয়ে জেলে কার্ড দিচ্ছে। তাই জেলেরাই ক্ষুদ্ধ হয়ে তার উপর হামলা করে।
অভিযোগ সম্পর্কে ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মুরাদ বলেন,টাকার বিনিময় জেলে কার্ড দেয়া পুরো ফালতু কথা। আসামীরা আমার উপর হামলা করে আমাকে আহত করেছে। আমি মামলা করেছি।
এদিকে জেলেদের চাল বিতরন না করে কালো বাজারে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ বহুদিন দরেই। ঐ চাল অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে বস্তা পাল্টে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। এসব চাল আটক করা হলেও প্রশাসন বিষয় গুলো এরিয়ে যাচ্ছে। এঘটনা নিয়ে সাধারন জেলেদের মাঝে ক্ষোভের শেষ নেই। চাল না পাওয়ার অভিযোগ থাকলেও কম পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে দৌলতখানের জেলে মো: নুর নবী বলেন,চাল ঠিকমত দেয় না আবার নদীতে নামতে দেয় না,যামু কই। খামু কি। এনজিওর থেকে লোন নিয়ে জাল ,সাবার করছি কিস্তি পরিশোধ করতে পারি না,ফলে বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুকি বুঝেও নদীতে যাই মাছ ধরতে। তাই সরকার আমগো কিস্তির টাকা তোলা বন্ধ করে দিক,আমরা নদীতে যামু না। সবকিছুর পরেও তবে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়ে থাকে চরফ্যাশন,লালমোহন,বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলায়।
রমজানকে সামনে রেখেও থেমে নেই এসব অসাধু জনপ্রতিনিধি আর অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা জেলেদের এবং বিভিন্ন সময় অসহায়দের নামে আসা চাল গোপনে ক্রয় করে,বস্তা পাল্টে তা চরাদামে বিক্রি করছে। ১৪হাজার ৩০৫.৬০মেট্রিক টন চাউলের বিপরীতে বিতরন হয়েছে মাত্র ৪হাজার ২১২.৫২ মেট্রিক টন। চাউল না পেয়ে চরম ক্ষোভ অসহায় জেলেদের মাঝে।
এসব বিষয় নিয়ে ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা বলেন, আমার ই্উনিয়নে ভুয়া জেলে ছিলো ১১শত। সেখানে থেকেযাছাই বাছাই শেষে ১৩৮ জনকে প্রকৃত জেলে কার্ড করেছি।যে কারনে আমি শতভাগ জেলের মাঝে চাল বিতরন করতে পেরেছে। ২মাস দিয়েছি বাকী ২মাস বরাদ্ধ পেলেই দিয়ে দিব। একই ভাবে পূর্ব ইলিশা ই্উনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন বলেন,আমার ইউনিয়নে জেলেদের সংখ্যা অনেক বেশি। আগের চেয়ারম্যান প্রায় ৪হাজার জেলেদের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এখন তাদেরকে পূনরায় তালিকায় নাম অন্তভূর্ক্ত করতে হবে।
অনিয়মের বিষয় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন,বেশ কিছুঅনিয়ম রয়েছে। তবে সে গুলো দুর করার চেস্টা করছি। সরেজমিন গিয়ে্ ঊঠান বৈঠকের মাধ্যমে সবার সামনে আমরা তালিকা করে ভূযা জেলেদের নাম বাদ দেয়ার চেস্টা করছি। তবে প্রায় সহযোগীতা করছে না,তার মধ্যে লালমোহনের ফরাশগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যন ফরহাদ হোসেন মুরাদ। তবে কোথাও চাল দিচ্ছে না,বাকম দিচ্ছে খবর পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার চেস্টা করবো।
সরকার জাটকা ইলিশ রক্ষায় মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস ভোলার মেঘনা এবং তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার মাছ ধরার উপর নিষেধাঞ্জা দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এই আইন সাধারন জেলেরা মানলেও সরকারী ভাবে দেয়া চাল সঠিখ ভাবে না পাওয়া অভিযোগ রয়েছে অনেক।