ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেটঃ বাংলাদেশে নতুন করে আসা রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ইউরোপসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে ও পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়ে সমাজের কিছু জনপ্রতিনিধি ও দালালচক্র মোটা অঙ্কের ফায়দা লুটছে- এমন অভিযোগ প্রশাসনের কাছে রয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা কোনোভাবেই অবৈধ পন্থায় যাতে পাসপোর্ট তৈরি করতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে গেলে ৭ রোহিঙ্গাকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপরই প্রশাসনের সর্বস্তরে কঠোর নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগে কমপক্ষে প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ চলে গেছে। পাড়ি জমানো উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ইরাক, ইরান, কাতার, জর্দান, ওমান, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গা রয়েছে। বিদেশে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এবং তাদের অপরাধের দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, অতীতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি না থাকায় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের অনেকেই এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। এখন আর সেটি করা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গারা সন্ত্রাস ও সমাজবিরোধী কাজ করলে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারের নির্দেশে পুলিশের পক্ষ থেকে এই বার্তা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রচার করা হয়েছে এবং অব্যাহত আছে। পাশাপাশি তারা যাতে পাসপোর্ট তৈরি করতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব বিষয় কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, নির্যাতনের মুখে গত দুই দশক ধরে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেই বেছে নিয়েছে। গত এক বছর আগে তাদের অনেকেই সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেয়। অতীতেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশি সেজে পাসপোর্ট করে সুযোগ বুঝে মধ্যপ্রাচ্যে চলে গেছে।
২৫ আগস্ট থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই সুযোগ মতো বিদেশে পাড়ি দেয়ার কৌশল নিচ্ছে। আর তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে এক শ্রেণির দালালচক্র। বাঙালি পোশাক পরিয়ে জন্মসনদসহ পাসপোর্ট তৈরির চেষ্টা করছে তারা। অতীতে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের অনেকেই স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মিশে গেছে। স্থানীয় ভাষা এবং চেহারায় মিল থাকায় কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে তাদের আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় যাওয়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পরিচয়ে সেখানে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে অনেক রোহিঙ্গা আটক হয়। এ ছাড়া প্রতি বছর হজ ও ওমরাহ ভিসায় অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে পাড়ি জমায়। সৌদি সরকার রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় হওয়ায় সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে রোহিঙ্গারা। শুধু সৌদি আরবেই এখন ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীর সংখ্যাও হাজার হাজার।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বিশাল সমস্যা। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয়া হলেও বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। তাই কক্সবাজার জেলার বাসিন্দাদের জন্য জন্মনিবন্ধনের পাশাপাশি পুলিশ ভেরিফিকেশনে কঠোর হতে বলা হয়েছে। পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে সংশ্লিষ্টদের এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে আগে শুধু চট্টগ্রাম বিভাগকে ঝুঁকির মধ্যে রাখা হলেও এখন অন্যান্য বিভাগেও একইভাবে দেখতে বলা হয়েছে। কারণ রোহিঙ্গারা এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে। কোথাও কোথাও আত্মীয়তা সৃষ্টি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।