নিমের বিপক্ষে পিএসজির গোলের খাতা খুলেছেন। তাঁর দলও ৪-২ গোলের জয় পেয়েছে। আর নিজের গোলটির উদ্যাপন সেরেছেন মোক্ষম এক জবাবে। এরপর ম্যাচ শেষে এক অবুঝ ভক্তকে কোলে তুলে নিয়ে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন নিজের জার্সি। এই নেইমারকে কত দিন দেখা যায়নি!
‘ছিঁচকাঁদুনে’—রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে শব্দটা লেপ্টে গিয়েছিল নেইমারের সঙ্গে। সে জন্য বিশ্বকাপে নেইমারের ‘ডাইভ’–প্রবণতার দায় যতটুকু, ফুটবলপ্রেমীদের সেটি প্রচারের দায় তার চেয়ে মোটেও কম নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই নেইমারের ‘ডাইভ’ দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে হাসিঠাট্টা চলেছে। একের পর এক ‘ট্রল’ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নেইমার এ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি। বরং তিনি নিজেই এ নিয়ে মজা লুটেছেন। কিন্তু কাল মাঠে ব্যাপারটা ফিরে আসতেই আর দেরি করেননি। ঝামা ঘষে দিয়েছেন নিন্দুকদের মুখে।
২৫ বছর পর ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে উঠে আসা নিম–সমর্থকেরাও ব্যঙ্গ করতে চেয়েছিলেন নেইমারকে। ঘরের মাঠে গ্যালারিতে তাঁরা একটি ব্যানার ঝুলিয়েছিলেন। তাতে লেখা ‘ক্রাইবেবি’—বাংলায় শব্দটির অর্থ ‘ছিঁচকাঁদুনে’। সেটি যে নেইমারকে উদ্দেশ করে তা বলা বাহুল্য। ব্যানারটি পিএসজি তারকারও চোখ এড়ায়নি। অপেক্ষায় ছিলেন একটা মোক্ষম জবাব দেওয়ার। সুযোগটা পেয়ে গেলেন ম্যাচের ৩৬ মিনিটে। বক্সে বল পেয়ে মাপা শটে গোল করেই ছুটলেন গ্যালারির সেই ব্যানারটির দিকে। উদ্দেশ্য নিম–সমর্থকদের রসিকতার জবাবে পাল্টা রসিকতা করা।
দুহাত চোখের কাছে নিয়ে ছিঁচকাঁদুনে শিশুদের মতো কাঁদার ভঙ্গি করে নেইমার ছুটে যান ব্যানারটির দিকে। এ সময় গ্যালারি থেকে তাঁকে কটূক্তি করতে ছাড়েনি নিম সমর্থকেরা। নেইমার এক কাঠি সরেস। ছিঁচকাঁদুনে শিশুদের মতো কাদার ভঙ্গিতেই বসে পড়েন ব্যানারটি সামনে। হাস্যোজ্জ্বল সতীর্থরাও এসে ততক্ষণে জড়িয়ে ধরেন নেইমারকে। নিম সমর্থকেরা এরপর আর কটূক্তি করার সাহস পায়নি।
বরং ম্যাচ শেষে দলটির কিছু সমর্থক নেইমারকে অভিবাদন জানিয়ে করতালিও দিয়েছেন। শেষ বাঁশি বাজার পর নিরাপত্তা ব্যূহ ফাঁকি দিয়ে গ্যালারি থেকে মাঠে ঢুকে পড়েছিল এক খুদে নেইমারভক্ত। ব্রাজিলিয়ান তারকা ছুটে গিয়ে তাঁকে কোলে তুলে নেন। আদর করেন। পছন্দের খেলোয়াড়ের এমন মধুর আচরণের আতিশয্যে কেঁদে ফেলেন সেই খুদে ভক্ত। নেইমার তার কান্না থামাতেই সম্ভবত নিজের জার্সিটা খুলে তুলে দিয়েছেন সেই ভক্তের হাতে। মুহূর্তটি সত্যিই ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো।
নেইমার পিএসজিকে এগিয়ে দেওয়ার পর ফ্রি কিক থেকে দুর্দান্ত এক গোল করেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। এরপর ২-২ ব্যবধানে সমতায় ফিরেছে নিম। এর মধ্যে একটি গোল এসেছে ভিএআর প্রযুক্তির সাহায্যে পেনাল্টি থেকে। যদিও কিলিয়ান এমবাপ্পে ও এডিনসন কাভানির গোলে শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নেয় পিএসজি। যোগ করা সময়ে এমবাপ্পে লাল কার্ড দেখলেও ততক্ষণে জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়নদের। টানা ৪ ম্যাচেই জয় তুলে নিয়ে টেবিলের শীর্ষে পিএসজি। আর নেইমারও এই চার ম্যাচে চার গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় উঠে এলেন শীর্ষস্থানে।
দেখে নিন নেইমারের সেই উদ্যাপন আর ভক্তকে জার্সি তুলে দেওয়ার দৃশ্য: