ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সারা দেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন সংগঠন। এ সময় রোহিঙ্গা সংকট নিরসন ও তাদের নিজ আবাসভূমিতে ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে হেফাজত।
আজ শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে হেফাজতে ইসলাম। মিছিলের আগে সমাবেশে বক্তব্য দেন হেফাজতের ঢাকা মহানগরের সভাপতি নূর হোসেন কাসেমী।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে নূর হোসেন কাসেমী বলেন, ‘আপনি যেভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে হাজির হয়েছেন, সাথে সাথে রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি আরাকানে ফিরিয়ে নেওয়ার পরিবেশ তৈরি করুন। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে, কূটনৈতিক প্রয়াসের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করুন।’
বায়তুল মোকারমের উত্তর গেটে মিছিল শুরু হয়ে পল্টন মোড় হয়ে আবার বায়তুল মোকাররমের গেটে গিয়ে শেষ হয়। হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে হেফাজতের অন্য নেতারা বলেন, কূটনৈতিক মিশনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়ে হেফাজত নেতারা বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ না হলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
জুমার নামাজের পরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার ডিইপিজেড এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন মুসল্লিরা। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাইপাইলে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় নবীনগর-চন্দ্রা ও টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে মুসল্লিরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, একই সময়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড সিটি সেন্টারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে মুসল্লিরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির কুশপুতুল দাহ করেন। বিক্ষোভ মিছিলে সাভার ও আশুলিয়ার কয়েকশ মুসল্লি অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিলে ঢাকা জেলা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ উজ্জ্বল অংশ নিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
দুপুরে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক আসলামাবাদী।
বক্তারা বলেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধন বন্ধে কারো আহ্বানই কর্ণপাত করছে না। মানবাধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান হেফাজত নেতারা।
একই সময়ে চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের সামনে একই দাবিতে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহ।জুমার নামাজের পর পৌর শহরের মিফতাহুল আলিম মাদ্রাসার সামনে থেকে হেফাজতে ইসলাম নেত্রকোনা জেলা শাখার উদ্যোগে মিছিল বের করা হয়।
মিছিলে নেতৃত্ব দেন জেলা হেফাজতের আমির মাওলানা আবুল কাশেম, হাফেজ দেলোয়ার হোসাইন, মাওলানা আসাদুর রহমান আকন্দ, মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল বারী, মাওলানা আহমাদুল হক, মাওলানা আবু সায়েম ও মাওলানা আবদুর রহিম।
রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম সহিংসতার প্রতিবাদে স্লোগান দিতে দিতে মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মোক্তারপাড়া বড় মসজিদের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে রোহিঙ্গাদের জন্য দোয়া করা হয়।
দিনাজপুরের ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ থেকে ইমাম, ওলামা-মাশায়েখ-এর আয়োজনে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলে হাজারো মানুষ অংশ নেয়।
মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা বন্ধের পাশাপাশি তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
জুমার নামাজের পর পাবনার বেড়া উপজেলার কাশীনাথপুর ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কাশীনাথপুর হজরত আলী (রা.) জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ও এলাকার সর্বস্তরের হাজার হাজার ওলামা ও মুসল্লিদের আয়োজনে বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিরা জুমার নামাজ শেষে এক হয়ে কাশীনাথপুর ট্রাফিক মোড়ে উপস্থিত হন। এ সময় তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে বক্তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। তারা বাংলাদেশের সবাইকে রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বক্তারা আরো বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম নারী-শিশু নির্যাতন, হত্যা, গণধর্ষণ এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী নেতা ও সমাজসেবক শেখ শাহজাহান সিরাজ, মজিবুর রহমান মজনু, মুফতি মো. হেলাল উদ্দিন, মুফতি মো. শফিকুর রহমান, মাওলানা মো. রবিউল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা আবদুল কাদের, মাওলানা কেরামত আলী, মাওলানা হাফেজ আবদুস সালাম, মাওলানা আমজাদ হোসেন, মাওলানা সরোয়ার হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ আগস্ট কয়েকটি সেনা ও পুলিশ ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।