চরফ্যাশনে পুলিশ হেফাজতে নারীর চোখ-বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ

0
25
ভোলার চরফ্যাশন থানায় শেলিনা বেগম নামে এক নারী আসামিকে পরিত্যক্ত কক্ষে চোখ বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওই থানার এক সাব ইন্সপেক্টরের (এসআই) বিরুদ্ধে। তিনি থানার সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে তাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেছেন ভিকটিম। মামলার বাদীর পক্ষে স্বীকারোক্তি নেয়ার জন্য উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ছিদ্দিকুর রহমান এমন নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ শেলিনা বেগমের।
প্রবাসী নুরে আলম ও তার স্ত্রী শেলিনা বেগমকে চরফ্যাশন থানার একটি মারধরের মামলায় গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে নির্যাতনের শিকার ওই নারীকে দুপুরে চরফ্যাশন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিন দিয়েছেন। তার স্বামী নুরে আলমের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
শেলিনা বেগম অভিযোগ করেন, একটি মারামারি মামলায় সোমবার রাতে চরফ্যাশন থানা পুলিশ তার সৌদি প্রবাসী স্বামী নুরে আলমসহ তাকে জনতাবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। প্রতিপক্ষের হামলায় আহত স্বামীকে নিয়ে চরফ্যাশন হাসপাতালে আসার পথে তারা গ্রেফতার হন। রাতভর চরফ্যাশন থানায় আটক রাখার পর মঙ্গলবার সকালে নিয়মিত মামলা করে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই মামলায় এদিন সকালে আদালতে সোপর্দ করার আগে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য এসআই ছিদ্দিক শেলিনা বেগমকে থানার একটি পরিত্যক্ত কক্ষে নিয়ে চোখ-বেঁধে মারধর করেন।
ওই নারী আরো অভিযোগ করেন, এসআই সিদ্দিক তার সাথে থাকা নগদ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন, ব্যাংকের এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেন। মোবাইলটি ফেরত দিলেও তার টাকাও এটিএম কার্ড বিকাল পর্যন্ত ফেরত দেননি।
স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা যায়, নুরে আলম-শেলিনা দ¤পতির বাড়ি ওমরপুর ইউনিয়নের আলীগাও গ্রামে। বাড়ির পাশের ১ একর ৬০ শতাংশ (এককানি) জমি কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ করছিলেন শেলিনা বেগম। এ বছর এই জমি বাগিয়ে নেন প্রতিবেশী হারুন। শেলিনার স্বামী ২০ দিন আগে বিদেশ থেকে দেশে আসেন।
সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় জনতা বাজারে প্রবাসী নুরে আলমের সাথে হারুনের দেখা হয়। সেখানে চাষের জমিটি ছিনিয়ে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে হারুন তার দলবল নিয়ে নূরে আলমকে মারধর করে। খবর পেয়ে শেলিনা বেগম তার স্বামীকে উদ্ধার করে চরফ্যাশন হাসপাতালে আনার চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য জেটন মেম্বার, আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল, হারুন, মাসুদ, আনোয়ার সিকদার, তাদের আটক করে সমঝোতা করার কথা বলে জোরপূর্বক সালিশি অচল নামায় স্বাক্ষর নেন।
সোমবার রাত ১০ টার দিকে আহত নুরে আলমকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হলে হারুনের নেতৃত্বে কথিত সালিশদাররা তাদের গতিরোধ করে মারধরের অভিযোগ করেন সেলিনা।
এসময় শেলিনা বেগমও লোকজন নিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দু’পক্ষের মধ্যে দা-লাঠি নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে নুরে আলম, শেলিনা, প্রতিপক্ষ হারুন, কথিত সালিশদার মাসুদ ও মহিউদ্দিন আহত হন। এদের মধ্যে গুরুতর হারুনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। আহত মহিউদ্দিন ও মাসুদকে চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপর পুলিশ প্রবাসী নুরে আলম ও তার স্ত্রী শেলিনা বেগমকে আটক করে। প্রবাসী ও তার স্ত্রী এবং শাহাবুদ্দিন নামে একজনসহ তিনজনকে আসামি করে রাতেই চরফ্যাশন থানায় মামলা করেন আহত হারুনের ভাই জাফর বেপারী।
ওই মামলায় মঙ্গলবার সকালে আদালতে সোপর্দ করার আগে পুলিশের বর্ণনা মতো স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য শেলিনা বেগমকে থানার পরিত্যক্ত কক্ষে চোখ-বেঁধে এসআই সিদ্দিক মারধর করেন বলে অবিযোগ। তবে উপ-পরিদর্শক ছিদ্দিকুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ঘটনার বিষয় এর বেশি আর কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি।
চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মিয়া বলেন, ‘ওই আসামি নারীর অভিযোগে আমাদের কিছুই যায় আসে না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে এসআই সিদ্দিকুর রহমান যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

LEAVE A REPLY