ভোলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

0
868

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খন্ডকালীন শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করানো এবং পরীক্ষায় নকল সরবরাহ সহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব সুশান্ত কুমার দেব এর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা প্রশাসনের কাছে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সরকারি বালিক উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে ২০১৮ সালের অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব সুশান্ত কুমার দেব বিদ্যালয়ের (নিয়োগপ্রাপ্ত) শিক্ষকদের ছুটিতে রেখে খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করিয়েছেন। এছাড়াও ওই কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দিয়ে হল পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করিয়েছেন সুশান্ত কুমার দেব। বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক অনুজ কুমার, অনিন্দিতা হালদার, জালাল উদ্দিন মোঃ মাসুম, নাজমুল হোসেন নামক খন্ডকালীন শিক্ষকদের দিয়ে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে দিয়েছেন। যেখানে পরিপত্রে উল্লেখ আছে বিএ ডিগ্রি ও ৩ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ছাড়া কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করা যাবে না। সেখানে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যাতে নির্বিঘেœ প্রাইভেট পড়াতে পারে সে জন্য খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে দায়িত্ব পালন করিয়েছেন। এদের মধ্যে গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক রয়েছে যারা গণিত ও বিজ্ঞান সহ সকল পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেছেন। যা নিয়ম বর্হিভূত। পরীক্ষার নীতিমালায় রয়েছে যেসব শিক্ষকদের ছেলে-মেয়ে ও ভাই-বোন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে তারা পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কোন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু এদের মধ্যে খন্ডকালীন শিক্ষক জালাল উদ্দিন মাসুম এর আপন বোন ও নাজমুল হোসেন এর ছেলে এই সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকেই পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু নাজমুল হোসেন প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা এবং জালাল উদ্দিন মাসুম প্রাকটিক্যাল ও মূল পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছেন। মাসুম তার বোনের কক্ষেও দায়িত্ব পালন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব খন্ডকালীন শিক্ষকরা বিভিন্ন প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারের সাথে জড়িত রয়েছে। এদের অনেক ছাত্র-ছাত্রী এই কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তাদেরকে ভালো রেজাল্ট করিয়ে দেওয়ার জন্য এসব খন্ডকালীন শিক্ষকরা প্রশ্ন ফাঁস করা সহ বিভিন্ন ধরনের দূর্নীতি করতে করতে পারেন বলে সচেতন অভিভাবক মনে করেন। ভোলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রভাতী শাখার ছাত্র আদিত্য এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছে। আদিত্যের মা দক্ষিণ আলীনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিপ্রা রানী দে ছেলের কক্ষে বেশ কয়েকদিন কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন বলে জানা গেছে। সচেতন অভিভাবকরা বিষয়টি প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার দেব এর কাছে অভিযোগ করেও কোন ফল পায়নি। পরীক্ষা চলাকালীন অন্যান্য দায়িত্বরতদের দিয়েও সুশান্ত কুমার দেব নিয়মিত কক্ষ পরিদর্শকের কাজ করিয়েছেন। যা পরীক্ষার নিয়ম বর্হিভূত বলে জানা গেছে। যেসব শিক্ষক দায়িত্ব পালনে যোগ্য তাদেরকে কি কারনে ছুটিতে রেখে খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পরীক্ষা পরিচালনা করিয়েছেন এ নিয়েও অভিভাবক ও সুশীল সমাজের মধ্যে ব্যাপক সন্দেহ দানা বেঁধেছে।
এছাড়াও পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তার বিদ্যালয়ের আশেপাশে বসবসারত শিক্ষকরা প্রাইভেট, কোচিং বানিজ্য মহা সমরাহে চালিয়ে গেছে। অনেকের ধারনা ওই সব শিক্ষকরা হল থেকে ফাঁস করা প্রশ্ন হাতে পেয়ে প্রাইভেটের সময় সমাধান বের করে হলে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। যেখানে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ ছিলো, সেখানে প্রধান শিক্ষকের চোখের সামনেই তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোচিং কার্যক্রম চালু রেখেছে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোচিং ও প্রাইভেট বানিজ্য বন্ধ রাখার জন্য সরকারের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তিনি কেনো নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষককে এ ব্যাপারে সতর্ক করেননি এ নিয়ে অভিভাবকদের প্রশ্ন রয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বাইরে কড়াকড়ি থাকলেও ভিতরে নকলের মহোৎসব চলেছে। অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার দেব এর পছন্দের ওইসব খন্ডকালীন শিক্ষকরা হলে নকল সরবরাহ করতেন। অনেক শিক্ষার্থী টেবিলে বই রেখেও পরীক্ষা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার দেব এর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভোলা ঐতিহ্যবাহী এই বালিকা বিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি অক্ষুন্ন রাখার জানিয়ে সুশীল সমাজ ও অভিভাবকবৃন্দ।
এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার দেব বলেন, খন্ডকালীণ শিক্ষক এরা তো শিক্ষক, এরা এই স্কুলই শুধু শিক্ষকতা করে না। এরা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে দায়িত্ব পালন করানোর কোথায়ও কোন নিয়ম নাই। কিন্তু খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে বোর্ডে খাতা আনানো যাবে না এ ধরনের নির্দেশনা আছে। খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে কেন দায়িত্ব পালন করিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে শিক্ষক স্বল্পতার কারনে খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কোন অনুমিতর প্রয়োজন নেই। পরীক্ষার্থীর অভিভাবক দিয়ে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে তিনি বলেন, অভিভাবক, আমি তো জানি না এ ধরনের কোন ঘটনা। তবে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক তথ্য গোপন করে তার শিক্ষককে পাঠালো এবং সে অভিভাবক যদি কোন দায়িত্ব পালন করে সে বিষয়টি তো আমাদের জানার বিষয় নয়। ছেলে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে, আর মা আরেক প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন। এ বিষয়টি তো আমাদের জানা ছিলো না। আমি এ ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলাম। প্রথম দিনে এমন একজন অভিভাবকে পেয়ে আমরা তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি।
কোচিং ও প্রাইভেট সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার দেব বলেন, আমি কোন কোচিং সেন্টার সম্পর্কে জানি না। কোচিং সেন্টার সম্পর্কে কাউকে উৎসাহিত করি না। আমাদের শিক্ষকরা যাতে কোচিং না করায় এ ব্যাপারে আমরা সচেতন ছিলাম। বাইরে কোথায় কি ঘটেছে এ ব্যাপারে আমরা জানি না। প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার বিদ্যালয়ে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জাকিরুল হক বলেন, এমপিওভূক্ত ও সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ছাড়া অন্য কোন (খন্ডকালীন) শিক্ষক দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া ঠিক নয়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোন ধরনের ঘটনা ঘটলে এসব খন্ডকালীন শিক্ষকদের জবাবদিহীতার বিষয় থাকেনা। এসব খন্ডকালীন শিক্ষকদের দিয়ে দায়িত্ব পালন করনো সমিচীন না। তিনি বলেন, কোন ছাত্রের অভিভাবক দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করানোর কোন নিয়ম নেই। তবে সর্বশেষ মেনুয়ালে এ ধরনের কোন নিয়ম আছে কি না সেটা আমরা জানা নেই।

 

LEAVE A REPLY