দালাল আর এজেন্সির প্রতারণায় এবারো হজে যেতে পারছেন না অনেকে

0
547

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট:দালাল আর এজেন্সির প্রতারণায় এবারো হজ করতে যেতে পারছেন না শত শত মুসল্লি। চুক্তি অনুযায়ী সব টাকা পরিশোধের পরও তাদের ঘুরতে হচ্ছে এজেন্সি ও দালালদের দ্বারে দ্বারে। প্রতিবছরই এ ধরনের কিছু সমস্যা হলেও কঠোর হতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও হাব। আর আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ হজ ক্যাম্পের দায়িত্ব।

হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। প্রতি বছরই এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে হজযাত্রীদের জন্য নিম্নমানের লাগেজ ক্রয়, ভিসা-টিকিট নিয়ে টালবাহানা, মক্কা-মদিনায় বিলম্বে বাড়ি ভাড়া করা, নির্ধারিত দূরত্ব থেকে দূরে এবং নিম্নমানের বাড়ি ভাড়া করা, ঠিকমতো খাবার না দেয়া, চুক্তিহীন বাড়িতে গাদাগাদি করে হজযাত্রীদের রাখা, দেরিতে মোয়াল্লেম নেয়া, হজযাত্রীদের খোঁজখবর না নেয়াসহ অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। কিন্ত প্রতিকার হয় না। হজ মৌসুমে হৈচৈ হয়। হজ মৌসুম চলে গেলে সবাই ভুলে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর শুরু থেকেই শুরু হয়েছে হজযাত্রীদের ভোগান্তি। প্রথমে নিবন্ধন নিয়ে দুর্নীতি। তারপর প্রি-ভিসা জটিলতা, সময় মতো ভিসার আবেদন না করা, মোয়াল্লেমের সঙ্গে এজেন্সিগুলোর বিলম্বে চুক্তি, সময় মতো বাড়িভাড়া না করা, ভিসা লজমেন্ট ও মোফা সেন্ড করতে বিলম্ব করা, হজ এজেন্সিদের গাফিলতিতে যাত্রীর অভাবে একটার পর একটা করে ৩৩টি হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়া। আর শেষ মুহূর্তে এসে এখন ফ্লাইটের বিপর্যয় ঘটেছে। বহু হজযাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে এজেন্ট ও মধ্যস্বত্বভোগী। ভিসার কথা বলে অন্তত এক হাজার হজ গমনেচ্ছুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভিসার জন্য আবেদনই করেনি। ভিসাপ্রাপ্ত হজযাত্রীদের সৌদি পাঠাতে এজেন্সি মালিকরা শুরু করেছেন টালবাহানা। মধ্যস্বত্বভোগী দালালচক্র প্রায় দুই হাজার হজযাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে এজেন্সিকে দেয়নি। ফলে এজেন্সি টিকিট কাটছে না। প্রতারণা করে মধ্যস্বত্বভোগী ও অনেক এজেন্সি মালিক লাপাত্তা হয়ে গেছে। প্রতারিত হজযাত্রীরা জড়ো হচ্ছেন আশকোনা হজ ক্যাম্পে। সেখানে প্রতারিত হজযাত্রীদের কান্নায় প্রতিদিন ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ। অভিযোগের পাহাড় জমছে হজ অফিস ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে। কিন্ত দ্রুত কোনো প্রতিকার করতে পারছেন না কেউই।

সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থেও হজের টাকা গোছানো সম্ভব হয়নি, তাই তো জমি বিক্রি করে জীবনের শেষ ইচ্ছা স্ত্রীকে নিয়ে পবিত্র হজ করতে চেয়েছিলেন পাবনার আবদুস সালাম। এজেন্সির অতিরিক্ত টাকা দাবির পর তা পরিশোধ করে এবারো হজে যাওয়া হচ্ছে না। মিস ফালাহ ট্রাভেলসের নিয়োগপ্রাপ্ত দালাল আবু হানিফ এখন আর তার ফোনও রিসিভ করেন না।

এমনি ৭৫ বছর বয়সী সাতক্ষীরার মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী। ২০১৫ সালে টাকা পরিশোধ করে দুই বছর পর ভিসা মিললেও হজ ক্যাম্পে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে কিন্তু বিমানের টিকিট মেলেনি। অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা না দিলে বিমানের টিকিট দেবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি। এমন অভিযোগ করেন আরো অনেকে।

বিগত কয়েক বছর একই সমস্যা পরিলক্ষিত হলেও হজ এজেন্সির লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের কারণে সে সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে এজেন্সি আর দালালদের দৌরাত্ম্যে এ বছরও ভিসা পাননি নিবন্ধন করা অন্তত এক হাজার হজযাত্রী। এদিকে পবিত্র হজ নিয়ে প্রতারণার শেষ কোথায় জানতে চাইলে আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি হজ ক্যাম্পের পরিচালকের কাছে।

হজযাত্রার আর মাত্র দুই দিন বাকি থাকলেও ২৭ হাজার ১শ’ ৭১ জন হজযাত্রী এখনো হজ করতে যেতে পারনি। এদিকে, ৫০টি এজেন্সির বিরুদ্ধে হজযাত্রীদের টিকিট না কাটা এবং হাজিদের নানাভাবে হয়নির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি এজেন্সি তাদের বেশিরভাগ হজযাত্রীর বিমানের টিকিট কাটেনি বলেও জানান হজ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার হজযাত্রার ৩১তম দিনে ১৩টি ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৭টি বাংলাদেশ বিমানের এবং ৬টি সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ১৯৩ জনের ভিসা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ৯৯ হাজার ২২ জন হজযাত্রী। ভিসা সম্পন্ন হওয়ার পরও বিমানের টিকিট নিয়ে হয়রানির অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। এদিকে, হাবের মহাসচিব শাহদাত হোসেন তসলিম অভিযোগ করে বলেন, দালাল এবং ব্যাংকের নানা হয়রানির কারণে সঠিক সময় টিকিট পাচ্ছে না হজযাত্রীরা।

যাত্রী ভোগান্তি এবং অনিশ্চয়তার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং হজ এজেন্সিগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করে চলেছে। আর মাঝে পড়ে পিষ্ট হচ্ছেন হজযাত্রীরা। আগামী ৩১ আগস্ট হজ। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট শেষ হবে আর দুই দিন পরই। ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভিসা পাওয়া প্রায় ৪ হাজার হজযাত্রীর সৌদি আরবে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা গতকালও কাটেনি। যাত্রীসংকটের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি এয়ারলাইনসের মোট ৩৩ হজফ্লাইট বাতিল বা পেছানোর কারণে শেষ মুহূর্তে এই সংখ্যক যাত্রীর জন্য আসন পাওয়া যাচ্ছে না।

বিমানের শেষ হজ ফ্লাইট ২৬ আগস্ট। সৌদি এয়ারলাইনসের শেষ হজ ফ্লাইট ২৭ আগস্ট। বাকি দিনগুলোতে ভিসা পাওয়া অন্তত ২৭ হাজার হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পাঠাতে হবে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১২টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে এই দুই সংস্থা। প্রতিটি ফ্লাইটে ৪১৯ জন করে যাত্রী যাচ্ছেন।

বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানিয়েছেন, ২৬ আগস্ট দুটি অতিরিক্ত সুট (বিমান ওঠা-নামার অনুমতি) পাওয়া গেছে। সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ২৭ ও ২৮ আগস্টে হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত ১২টি স্লটের আবেদন করা হয়েছে। এই স্লটগুলো পাওয়া গেলে তা পূর্ণ ব্যবহার করতে পারলে সব যাত্রীকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। বিমান সাধ্যমতো চেষ্টা করছে সব হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পৌঁছাতে। বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের পবিত্র হজ পালন করতে যাওয়ার কথা। ৯৯৩ জনের পাসপোর্ট শেষ দিনেও জমা না পড়ায় তাদের ভিসা পাওয়ার আর সুযোগ নেই।

LEAVE A REPLY