জালনোট প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগ

0
585

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠছে দেশের জাল টাকার কারিগররা। তাই কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে সাধারণ মানুষের মধ্যে জাল টাকার আতঙ্কও বাড়ছে। এ ধরনের ভোগান্তি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন সরবরাহসহ বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর রয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক হয়েছে বলেও জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, জালনোট প্রতিরোধে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পোস্টারিং করাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এটিএম মেশিনে টাকা ঢোকানোর আগে তা পরীক্ষা করার জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বড় বড় দোকান মালিকদের নিজ উদ্যোগে জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপনের জন্য পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে জামিনে থাকা জাল নোট কারবারিদের ওপর বিশেষ নজর রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা মানবকণ্ঠকে বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জাল নোটের ব্যবহারও বেড়েছে। যার ফলে সাধারণ মানুষকে এ ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এ কারণে জাল নোটের ব্যবহার বন্ধে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের পশুর হাটগুলোতে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন সরবরাহ করা হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জোরালো মনিটরিং করা হবে। পাশাপাশি আসল নোট চেনার উপায় সংবলিত বিজ্ঞাপন সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একার পক্ষে জাল নোট প্রতিরোধ সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাল নোট প্রতিরোধে দোকান মালিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, একটি জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনের দাম সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা। তাই দোকান মালিকরা ইচ্ছা করলেই এ ধরনের মেশিন কিনে রাখতে পারেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় দুই হাজার জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। এ বছর সারা দেশের বিভিন্ন পশুর হাটে ও শপিংমলগুলোর চাহিদা অনুসারে ৪৬০টি জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন সরবরাহ করা হবে। রাজধানীর ১৬টি পশুর হাটে সরবরাহের জন্য ১৮০টি মেশিন দেয়া হবে র‌্যাব ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি)। বাকি ২৮০টি মেশিন দেয়া হবে রাজধানীর বাইরের পশুর হাটগুলোতে। এসব মেশিন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা তদারকি করবেন। তবে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা নেই সেখানে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা তদারকি করবেন।

জানা গেছে, আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে জাল নোট তৈরি ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বেশ কয়েকটি চক্র। এদের সঙ্গে কিছু অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত। তাদের মধ্যে কয়েকটি চক্রকে শনাক্ত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বাংলাদেশ ব্যাংকের জাল নোট প্রচলন প্রতিরোধ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে প্রচলিত নোটের মধ্যে ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোটই বেশি পরিমাণে জাল হচ্ছে। জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম ও নোটসহ যেসব প্রতারক চক্র ধরা পড়েছে তার বেশিরভাগই ওইসব নোটের জালকারী। ৫০ ও ১০০ টাকা মূল্যমানের নোট এখন জাল হচ্ছে না বললেই চলে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জাল নোটসহ গ্রেফতার করা চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ থাকলেও এ ক্ষেত্রে জোরালো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বিছিন্নভাবে যেসব জাল নোট উদ্ধার করা হয়, ওসব মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয় তারা নিয়মিত সাক্ষ্য দিতে আসে না। ফলে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আর যেগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে সেগুলোয় সাজা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জাল টাকা প্রতিরোধ কমিটির সভায় বার বার বিষয়টি তুলে ধরা হলেও নেয়া হচ্ছে না কার্যকর কোনো উদ্যোগ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাল নোট যারা বাজারে ছাড়ছে তাদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে এই প্রবণতা বাড়তে থাকবে। এজন্য জাল নোটের মামলাগুলোকে সংবেদনশীল কেস হিসেবে নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।

LEAVE A REPLY