ভোলা নিউজ২৪ডটকম।। করোনা সংক্রমণের কারণে এবার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব করা হলেও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও উপাচার্যরা। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী শনিবার (১৭ অক্টোবর) উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে ইউজিসি।
এবার করোনার কারণে সশরীরে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যাবে কি না, সেই প্রশ্নটি সামনে এসেছে। এ ছাড়া এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সরাসরি না নিয়ে জেএসসি, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ অবস্থায় এইচএসসির ফলের পয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে যুক্ত হবে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির এক ভার্চ্যুয়াল সভা হয়। সেখানেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোর মতো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা ছাড়াই কেবল এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করার বিষয়টি বিবেচনা করা যায় কি না বা অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না—এ ধরনের বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় ১৭ অক্টোবরের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
বর্তমানে দেশে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিনটি গুচ্ছ করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এর মধ্যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি, সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আরেকটি এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আরেকটি গুচ্ছ করে এই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
কিন্তু এবার করোনার কারণে সশরীরে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যাবে কি না, সেই প্রশ্নটি সামনে এসেছে। এ ছাড়া এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সরাসরি না নিয়ে জেএসসি, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ অবস্থায় এইচএসসির ফলের পয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে যুক্ত হবে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আজকের সভায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একজন প্রথম আলোকে বলেন, সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন উর রশিদ জানিয়েছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে আগের মতোই পরীক্ষা ছাড়া কেবল এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একইভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে বলে তিনি প্রস্তাব দেন। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
যেহেতু করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যাবে কি না, সেটি নিয়েও আলোচনা হয়। কারণ, এবার এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করবেন। ফলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করবেন। যেখানে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়নি, একই সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতেও দেখা দেবে। এ অবস্থায় অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়।
সভায় উপস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় আলোচনা করে ঠিক হবে।
অনলাইন শিক্ষা কেমন চলছে
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, উপাচার্যদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস হলেও সবার প্রয়োজনীয় ডিভাইস ও ইন্টারনেট খরচের সামর্থ্য না থাকা, সংযোগের সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে অনলাইন ক্লাস ভালোভাবে চলছে না। শিক্ষার্থীদের প্রথমে বেশি আগ্রহ থাকলেও এখন সেই আগ্রহে ‘ভাটা’ পড়েছে।
সভায় ইউজিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ৪২ হাজার শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাস করার মতো প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সুবিধা নেই, সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। সভায় উপাচার্যদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনার কারণে এখনই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ঠিক হবে না।
এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে যে কার্যক্রম চলছে, সেটাকে আরও বেগবান করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে নামমূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়াসহ যেসব প্রস্তাব আছে, সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন তাঁরা।
ইউজিসির চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চ্যুয়াল এই সভায় ইউজিসির সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা যুক্তরা হন।