ভোলায় ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম।।ভোলা নিউজ২৪

0
417

স্টাফ রিপোর্টার,ভোলা নিউজ২৪ডটনেট।। ভোলার দৌলতখানে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা মূল্যের চাল ৩০ কেজির স্থলে ২৫-২৬ কেজি ও মূল্য ৩’শ টাকার স্থলে সাড়ে ৩শত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার দূর্গম চর মদনপুর ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালের ডিলার মাহবুব আলম ভুট্টুর বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ উঠে। ফলে এলাকার হতদরিদ্র সুবিদাভোগী মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মাহবুব আলম ভুট্টু ওই ইউনিয়নের যুব লীগের সভাপতি।

জানা যায়, গত সোমবার উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রয় করা হয়। এ কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের জনপ্রতি ৩শত টাকা নিয়ে ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও সরকারি সেলাইকরা বস্তা থেকে এক পাশ দিয়ে কেটে বস্তা প্রতি ৪-৫ কেজি করে চাল রেখে ২৫-২৬ কেজি করে চাল দেয়ার অভিযোগ উঠে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে।

এবং চাল নিতে আসা সুবিদাভোগীদের পুরো ৩০ কেজি করে চাল দিবে বলে ৩শত টাকার স্থলে সাড়ে ৩শত করে টাকা নেয় ওই ডিলার। বিতরণ স্থলে ট্যাগ অফিসার ও চাল মাপার কোনো মিটার না থাকায় সুবিদাবোগীরা বস্তা হিসেবেই চাল বাড়িতে নিয়ে যায়।

পরে বাড়িতে নিয়ে চাল মেপে বস্তায় ২৫-২৬ কেজি করে চাল পওয়া যায় বলে অভিযোগ করেন তারা। এছাড়া যে সকল সুবিদাভোগীদের কার্ড হারিয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে চাল দেয়ার কথা বলে পাঁচ শত টাকা করে দাবি করেন। এবং এলাকার লোকদের কোনো দিন তারিখ না বলেই ডিলার নিজের মনগড়াভাবে হঠাৎ করে এসে চাল দেয়া শুরু করে দেয়।

এতে অনেক কার্ডধারী লোক চাল নিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন। এর আগে গত বছর এই ডিলারের বিরুদ্ধে ১০ টাকা কেজি ধরে চাল সুবিধাভোগীদের না দিয়ে অনত্র বেশী দরে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।

মদনপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আলাউদ্দিন জানান, তার ওয়ার্ডে ১০ টাকা কেজি দরে চালের ৩০ জন সুবিধাভোগী রয়েছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০ কেজি চাল দেয়ার কথা বলে ডিলার মাহবুব আলম ভুট্টু সাড়ে ৩শত করে টাকা নিয়েছে। এমনকি সে বস্তা প্রতি ৪ থেকে ৫ কেজি করে চাল মাপে কম দিয়েছে। সে এলাকাবাসী ও কোনো জনপ্রতিনিধিদের তোয়াক্কা না করে গরীব লোকদের ঠকিয়ে যাচ্ছে।অত্র ইউনিয়নের কোন ইউপি সদস্য কে ভূট্টু তোয়াক্কা করেন না।

ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মো. হারুন, শাহজান মাঝিসহ একাধিক সুবিদাভোগী জানান, চালের ডিলার তাদের কাছ থেকে ৩০ কেজি চাল দেয়ার কথা বলে ৩০০ টাকার স্থলে সাড়ে ৩শত টাকা করে নিয়েছে। তার পরও সে ওজনে ৩০ কেজির স্থলে কাউকে ২৫ কেজি আবার কাউকে ২৬ কেজি করে দিয়েছে।

সুবিধভোগী মো. হোসেন ও ফারুক জানান, ডিলার মাহবুব আলম ভুট্টু গত বছর ৩শত টাকা করে নিয়ে ২১-২২ কেজি করে চাল দিয়েছে। এবছর পুরো ৩০ কেজি করে দেয়ার কথা বলে সাড়ে ৩শত করে টাকা নিয়েছে। কিন্তু তারপরও সে বস্তা দিয়েছে সেগুলোর এক কোনা দিয়ে সেলাই কাটা। এবং প্রতি বস্তায় ৪ থেকে ৫ কেজি করে চাল কম রয়েছে।

একই এলাকার মো. কামাল হোসেন জানান, তার কার্ডটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেটি ঠিক করার কথা বলে তার কাছ থেকে পাচঁ শত টাকা দাবি করে। এবং কার্ড ছাড়া চাল নিতে হলে তাকে ছয় শত টাকা দিতে হবে বলে জানায় ডিলার ভুট্টু।

এব্যাপারে অভিযুক্ত ডিলার মাহবুবব আলম ভুট্টু টাকা বেশী নেয়ার কথা স্বিকার করে বলেন, চরে চাল নিতে বেশী খরচ হওয়ায় বিধায় প্রতি নামে ৫০ টাকা করে বেশী নেয়া হয়েছে। তবে ওজনে কাউকে কম দেয়া হয়নি। যদিও কম হয়ে থাকে সেটা গুদামের লোকজন যানে। আমি গুদাম থেকে বস্তা হিসেবে আনি এবং বস্তা হিসেবে বিলি করি।

মদনপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন নান্নু ডিলারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, দৌলখান গোডাউন থেকে মদনপুর চরে এক টন চাল আনতে খরচ হয় দুই হাজার টাকা অথচ অন্য যায়গায় নিতে খরচ হয় এক থেকে দেড় শত টাকা। এ জন্য পরিবহন খরচ বেশী বিধায় ডিলার অতিরিক্ত ৫০ টাকা বেশী নেয়। আর ওজনে কম দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

যেহেতু গোডাউন থেকে ৩০ কেজির বস্তা দেয়া হয়। আর ওই অবস্থাই সেগুলো বিতরণ করা হয়। যদি কম থেকে থাকে তাহলে লেবাররা উঠা-নামা করাতে গিয়ে বস্তা ছিদ্র হয়ে চাল পরে যাওয়ায় মাপে কম হতে পারে।

বর্তমানে আইন অনুযায়ী কোনো কাজই হয় না উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা যদি এগুলো নিয়ে লেখালেখি করেন এতে করে উল্টো আইনের মারপ্যাচে ডিলার চাউল আনবে না। আর এ জন্য চরের মানুষই বঞ্চিত হবে।

দৌলতখান খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শান্তি রঞ্জন দাস বলেন, সরকারি ৩০ কেজি বস্তা ওজনে এর চেয়ে বেশী হবে। কখনও হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর আমরা এখান থেকে সেলাই করা বস্তা ডিলারদের কাছে হস্তান্তর করি। কোনো বস্তা লুজ মনে হলে তা পরিবর্তন করে দেই। সুতরাং ৪ থেকে ৫ কেজি করে কম হলে সেটা ডিলার রেখে দেয়।

এ ব্যাপারে দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, চাল বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকার নেয়ার কোনা বিধান নেই। বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY