অনলাইনে চলছে জমজমাট যৌনবাণিজ্য।

0
577

পছন্দ, দরদাম ও টাকা পরিশোধও চলছে অনলাইনেই। উঠতি মডেল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চাভিলাসী ছাত্রী ও পেশাদার যৌনকর্মীদের একাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। চাইলেই নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে যাবে কাঙ্খিত সুন্দরী।

নগরীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, বনশ্রী ও অন্যান্য এলাকায় অন্তত দশটি স্পটে চলছে রমরমা দেহব্যবসা। এর বাইরে আবাসিক বাড়িতেও চলছে যৌনবাণিজ্য।

এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলেছেন, পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই তারা যৌনবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম নতুন সময়কে জানান, থানা পুলিশ চাইলেই এগুলো বন্ধে উদ্যোগ নিতে পারে। তবে প্রতারিত কেউ অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারি।

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অনেক স্পা সেন্টার গড়ে উঠেছে। সেখানে স্পা এর কথা বলা হলেও এর আড়ালে চলে দেহব্যবসা। নির্ধারিত স্পট ছাড়াও বাসা বাড়িতে যৌন কর্মীদের পৌঁছে দেয়ার কাজও করে স্পা সেন্টারগুলো।

গুলশান বনানী কেন্দ্রিক অন্তত ১০টি চক্র রয়েছে, যারা অনলাইনে এ ধরনের প্রচারণা চালায়। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে ফেসবুক পেজে অশ্লীল ছবিও ছাড়ছে তারা। আর এভাবেই অনলাইনে চালানো হচ্ছে জমজমাট যৌনবাণিজ্য।

এ পেজগুলোতে মোবাইল নম্বর যুক্ত আছে। ফোন করলেই তারা ঘণ্টা চুক্তি অফার করে। স্পা সার্ভিসের পেজে বডি ম্যাসাজ ও শারীরিক মিলনের জন্য টাকার অঙ্কও তুলে ধরা হয়েছে। আর এসব পেজ মনিটরিং-এর জন্য সার্বক্ষণিক একজন রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক রিল্যাক্স স্পা অ্যান্ড এসকর্ট এজেন্সির কর্মীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত তার কাজই হলো ফেসবুক পেজ অপারেট করা। শুধু তিনিই নন, তার মতো আরো ১৫ জন রয়েছে এ কাজে। তাদের কাজ-ফোন অথবা ফেসবুক পেজের গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা।

সরেজমিনে গুলিস্তানে মাজারের পাশে সরু গলি দিয়ে এক মার্কেটের সিঁড়ি দিয়ে তৃতীয় তলায় উঠতেই চোখে পড়ে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরা বিভিন্ন বয়সের নারীদের। এসব নারীদের কেউ কেউ ছেলেদের সঙ্গে মদ খাচ্ছেন। কেউ সিগারেটও টানছেন। এরই মধ্যে কোনো কোনো তরুণ-তরুণী বের হচ্ছেন, আবার প্রবেশ করছেন। সেখানে আসা কয়েকজন জানায়, তাদের কেউ অনলাইনের মাধ্যমে এসেছেন আবার কেউ এসেছেন পূর্ব পরিচিত হিসেবেও।

একই ভাবে ব্যবসা চলছে গুলশান-২ এর ৫২ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতেও। বাড়িটিতে লিফট আছে। ওই বাসার চারতলায় চলছে এ কর্মকান্ড। বাসাটি দেখে কারও মনেই হবে না সেখানে এ কাজ চলছে। পরিচয় গোপন করে সেখানে নিয়মিত আসা দুই তরুণীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। দুজনই মডেল।

একজন মডেলিং করেন সিনেমার আইটেম গানে, অন্যজন বিজ্ঞাপণের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দুই আইটেম গার্ল জানান, ফিল্মে কাজ কম থাকায় টাকা রোজগারের জন্যই তারা সেখানে যান। মডেলিং-এর পাশাপাশি তারা কাজ করেন এসকর্ট গার্ল হিসেবেও।

তারা বলেন, টাকার বিনিময়ে কাউকে তো মন দিচ্ছি না। এটি এক ধরনের ব্যবসা। আলাপকালে তারা জানান, তাদের রেট খুব বেশি। তাই মধ্যবিত্ত শ্রেণির কেউ তাদের কাছে যেতে পারেন না। উচ্চবিত্ত, ব্যবসায়ী, আমলা ও বিদেশিরা তার নিয়মিত খদ্দের।

আরেক তরুণী জানান, এসকর্ট গার্ল হিসেবে ওয়েবে তার কোনো ছবি নেই। ফেসবুকে তার একটি আইডি ও পেইজ আছে। সেখানেই নক করে নানা অফার পান। যিনি নক করেন তার প্রোফাইল দেখে বিত্তশালী, স্মার্ট ও বিশ্বস্ত মনে হলেই সাড়া দেন তিনি। এছাড়াও এসকর্ট থেকে ফোনে মাঝে মধ্যে খদ্দের পান।

এসকর্ট এজেন্সির কর্মীরা জানান, চাকরিজীবী নারী ছাড়াও গৃহিণীদের ছবি রয়েছে এজেন্সির কাছে। অনেকের ছবি ওয়েব পেজে দেয়া হয় না। তাদের সরাসরি দেখানো হয়।

অভিজাত এলাকায় যৌনবাণিজ্য সম্পর্কে গুলশান জোনের পুলিশের সহকারি কমিশনার রফিকুল ইসলাম খান জানান, এ ধরনের খবর শুনেছি। আমরা খোঁজ খবর নেব। এর আগে কিছু আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ আমরা পেয়েছিলাম। তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো।

 

 

 

LEAVE A REPLY