আজ সন্ধ্যায় জানাযাবে ভোট কবে

0
300

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে আজ। সন্ধ্যা ৭টায় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা তফসিল ঘোষণা করবেন। এর আগে তফসিল চূড়ান্ত করতে সকালে বৈঠকে বসবে ইসি। সকাল ১১টায় নির্বাচন ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করছে ইসি। সংলাপের ফল দেখে ইসিকে তফসিল ঘোষণার অনুরোধ করেছিল সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

এ পরিস্থিতিতে কোনো ভয়ভীতি উপেক্ষা করে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ইসিকে তফসিল ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইসির সঙ্গে বৈঠক করে এ পরামর্শ দেয়। তফসিল নিয়ে অটল থাকার বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরামর্শ এসেছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব। ইসি সূত্রে জানা গেছে, তফসিল চূড়ান্ত করতে আজ সকালে বৈঠকে বসবে কমিশন। তফসিলের পর ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা ইসির। ভোটগ্রহণের জন্য ২০ বা ২৩শে ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হতে পারে।

কমিশন সভায় তারিখ চূড়ান্ত করার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে সিইসির ভাষণ রেকর্ড করা হবে। পরে সন্ধ্যা ৭টায় ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে একযোগে সম্প্রচার করা হবে। এদিকে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে ইসি। দলগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে ইসিতে এসব বৈঠক হয়। বৈঠকে মূলত তফসিল, সেনাবাহিনী ও ইভিএমের ব্যাপারে আলোচনা হয়। সরকারের সঙ্গে সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বাম গণতান্ত্রিক জোটও সিইসিকে চিঠি দিয়ে একই দাবি জানিয়েছে। অপরদিকে যথাসময়ে সংলাপ অনুষ্ঠানের দাবি বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট, এরশাদের সম্মিলিত জাতীয় জোট ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের।

গতকাল আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে নির্বাচন কমিশনকে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেয়। ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের প্রধান এইচটি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে অনেকেই আলোচনা করেছেন। তাদের কেউই নির্বাচন কমিশনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেননি বা হেয় প্রতিপন্ন করেননি। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, যার মধ্যে অনেক অনিবন্ধিত দলের ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। যাদের মধ্যে অনেকেই যে ধরনের কুরুচিপূর্ণ ও অমার্জিতভাবে কথা বলেছেন তাতে জনগণ বিস্মিত ও হতবাক হয়েছে।

দলমত নির্বিশেষে সকলেই এটিকে ধিক্কার জানিয়েছে। কেউ কেউ তর্জনি উঁচিয়ে ভয়ভীতিও প্রদর্শন করেছেন নির্বাচন কমিশনকে। আমরা সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই জনগণ নির্বাচন কমিশনের প্রতি এমন আচরণ সহ্য করবে না এবং এর সমুচিত জবাব দেবে ভোটের মাধ্যমে। গত সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ইসির বৈঠকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে সিইসির উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় বলে খবর প্রকাশিত হয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে নাগরিক ঐক্যের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই। ক্লোজ ডোর মিটিংয়ে তর্জনি উঁচিয়ে কথা বলার খবর কিভাবে জানলেন জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আমরা গণমাধ্যমে, টেলিভিশনে দেখেছি।

কমিশন বিব্রতবোধ করছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার দল নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে কখনই নিয়ন্ত্রণ করিনি। আমরা সবাই মিলে যদি সহায়তা করি তাহলে নির্বাচন কমিশন এমন এক উচ্চতায় চলে যাবে যেন কেউ চোখ রাঙানোর সাহস পাবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সবসময় চেষ্টা করে ইসির মান মর্যাদা রক্ষা করা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সংঘাতময় পরিস্থিতি হলে তার দায় সরকারের বিএনপির এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। কিন্তু ছিটকে ছিটকে দলের নেতারা অনেক কিছু বড় বড় কথা বলেন। আলোচনা যেখানে ফলপ্রসূ, পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক পরিবেশ কিভাবে হলো।

ইভিএম নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে এইচটি ইমাম বলেন, অত্যন্ত সীমিতভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলে ইসি জানিয়েছে। ইভিএম কিভাবে ব্যবহার করবে সেটা তাদের এখতিয়ার। সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কখনই সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিরুদ্ধে ছিলাম না। প্রচলিত যে আইন আছে সিআরপিসিতে ‘ইন এইড অব সিভিল পাওয়ার’ আর্মিকে যে কোনো সময় আহ্বান করা, সেই ক্ষমতা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের।

যেহেতু জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রিটার্নিং অফিসার হবে সুতরাং সেই ক্ষমতা তার হাতে যাবে। অতএব নির্বাচন কমিশন যদি বলে সেনাবাহিনী নিয়োগ করো তাহলে তিনি করবেন। তিনি বলেন, ইসিকে আমরা বলেছি কোনোক্রমেই কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ব্যাংক বা এনজিওর কাছে নির্বাচনী দায়িত্ব দেয়া না হয়। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পর্যবেক্ষক আসবেন তারা যেন নিবন্ধিত হন এবং নির্বাচন কমিশনের যে আচরণবিধি আছে তার মধ্যে থেকেই কাজটি করতে হবে। হঠাৎ করে বিদেশ থেকে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে আসলে হবে না।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার এখতিয়ার একমাত্র নির্বাচন কমিশনের। কবে কখন তফসিল ঘোষণা হবে সেটি নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। যেহেতু নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন ৮ই নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করবেন, আমরা বলেছি এ ব্যাপারে সরকারের তরফে সম্পূর্ণ সমর্থন থাকবে। নির্বাচন কমিশন যেদিন যা করতে চাইবেন, সেটি তারাই করবেন। আমরা কোনোক্রমেই বলবো না এটি পিছিয়ে দিন বা এগিয়ে আনুন। এটি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার।

LEAVE A REPLY