পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সাজসাজ রব পর্যটন নগড় চরফ্যাশনে

0
608

সোহেব চৌধুরী,ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। প্রকৃতি প্রেমি পর্যটকদের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের সবুজ অরন্যে ঘেরা চরফ্যাশন উপজেলা। মায়া হরিনের হরিনি চোখের চাহনি, নানান প্রজাতির পাকপাখালির কিচিরমিচির কলরবে মুখরিত কোলাহল আর মেঘনা ও তেতুলিয়া নদির মন মাতানো মাতাল ঢেউ।

দক্ষিণে বঙ্গপোসাগরের নীল জলরাসির আলতো ছোয়া যেন হাত বাড়িয়ে ডাকে পলিমাটির শহর বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বিপ জেলা ভোলার পর্যটন নগড় চরফ্যাশনে। আর তাই পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে পর্যটন নগড় চরফ্যাশনের পর্যটন স্পটগুলো যেন এখন সাজসাজ রব।

এবারের ঈদে পর্যটকদের আগমনে পর্যটন স্পটগুলো সাজানো হয়েছে নতুন সাজে , বিশেষ করে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে চরফ্যাশনের ৪টি থানার পুলিশ প্রসাশনের রয়েছে বাড়তি নজরদারি।

ঈদকে সামনে রেখে চরফ্যাশনের হোটেল মারুফ ইন্টারন্যাশনাল,হোটেল গ্রিন প্লেস,হোটেল গোল্ডলীভ,আলি ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল মনপুরা,হোটেল মিম,হোটেল রাজ,হোটেল নাজ, সেবা ও কুকরি-মুকরি গেস্ট হাউজ সহ অন্তত ২৫টি আবাসিক হোটেলে বিভিন্ন ডিসকাউন্ট সহ বুকিং চলছে। এসব হোটেলে আছে সুন্দর ও নান্দনিক থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা ও বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা। এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ঈদকে সামনে রেখে ব্যপক প্রস্তুতি নিয়েছেন।

চরফ্যাশনের খানদানি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এ- পার্টি সেন্টরারের ম্যানেজার বলেন, এবারের ঈদে আবহাওয়া যদি ভাল থাকে তাহলে ভালো বিক্রি হবে বলে আশাকরি। ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষনিয় ও উপমহাদেশের সর্বো উচ্চতা সম্পন্ন চরফ্যাশনের জ্যাকব টাওয়ারে। এ টাওয়ারটির উচ্চতা ২১৫ ফুট , শহরের খাসমহল জামে মসজিদ ও ফ্যাশন স্কয়ার সংলগ্নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে টাওয়ারটি নির্মান করা হয়েছে। লিফট সংযুক্ত টাওয়ারটিতে আছে বাইনোকুলার যার মাধ্যমে ১০০ বর্গ কিঃ মিঃ এলাকা অনায়াসেই দেখা যায়।

৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন টওয়ারটি পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করছে। ৭৫ ফুট মাটির গভিরে ৭০টি পাথর ঢালাই পাইলিং ফাউন্ডেশনের ওপর ইস্টিলের কাঠামোয় এ টাওয়ারটি নির্মান করা হয়। টাওয়ারটিতে উঠতে ১৬ জন ধারনক্ষমতা সম্পন্ন অত্যাধুনিক ক্যাপসুল লিফট আছে। জ্যাকব টাওয়ারের চারিদিকে এলুমিনিয়ামের ফ্রেমে ১০মিলি ব্যাসের স্বচ্ছ গ্লাস রয়েছে। পর্যটকরা জ্যাকব টাওয়ার থেকে দেখতে পাবেন পশ্চিম দিকে তেঁতুলিয়া নদীর শান্তজল , পূর্বদিকে অবস্থিত মেঘনার উথালপাথাল ঢেউ উত্তর দিকে তেপান্তরের সবুজ সমারোহ আর দক্ষিণে রয়েছে আরেক পর্যটন স্পট কুকরি-মুকরি ও বঙ্গোপসাগরের মনকারা বিস্তৃত নীল জলরাসি।

 

এ অঞ্চলের মন ভুলানো পর্যটন স্পট লাল নিল বেগুনী রঙের মিশ্রিত কৃত্রিম ঝর্ণার ফ্যাশন স্কয়ার ও শিশু বিনোদন কেন্দ্র শেখ রাসেল শিশু ও বিনোদন পার্কেও পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানান পৌর মেয়র শ্রী বাদল কৃষ্ণ দেবনাথ। শিশু পার্কে শিশুদের জন্য রয়েছে এডভ্যাঞ্চারাস থ্রিডি মুভি সহ ১০টিরও অধিক রাইড ব্যবস্থা। পর্যটকদের আরেক আকর্ষণিয় স্থান আঞ্জুরহাটের বাবুরহাটে অবস্থিত জেনিক এ- জেনিল ফিসারিজ যা স্থানিয়দের কাছে খামার বাড়ি নামেই সমাদৃত সেখানেও ঈদকে সামনে রেখে নেওয়া হয়েছে ব্যপক প্রস্তুতি। খামারটি কয়েকটি স্পটে বিভক্ত, এ খামারে রয়েছে ডলপিন,বাঘ,ব্যাং,হাতি ঘোরা,হরিন,কুমির, দোয়েল সহ পাথরের তৈরি বিভিন্ন ভাস্কর্য। ভিতরে আছে মাছের পুকুর ও সিঁড়ি যুক্ত মাটির টিলা হাজারো প্রজাতির ফুলের বাগান মন জুড়ানো ঝাউ ও আকাশমনি এবং ইউকালেক্টর ও শেওরা গাছের বাগান। এখানে আসলে প্রাণ জুরানো বাতাসের দোলায় পুরো মন ও শরির শিহরিত হবে যে কোনো ভ্রমন পিপাসুর। জেনিক এ- জেনিল ফিসারিজের ম্যনেজার জানান তাদের এ খামারে উৎসব ছাড়াই প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসেন কোলাহল মুক্ত পরিবেশে একটু প্রশান্তির আশায়। আর যে কোনো উৎসবেতো কথাই নেই হাজার হাজার পর্যটকের ভির থাকে এ খামারে। এখানে আছে গাড়ি পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থা। এ অঞ্চলের মায়া ব্রিজ,সুলতান মিয়ার ব্রিজ ও কলমি ব্রিজ এলাকার সাদা জলের আকাবাকা পথে বয়ে যাওয়া খালের ¯্রােত ও প্রকৃতিও বাদ যায়না প্রকৃতি প্রেমিদের চোখ থেকে। চরফ্যাশন শহরের পূর্ব-উত্তরে অবস্থিত খোর¯্রতা মেঘনার ঘোলা জলে ঢেউ ভাঙ্গে বেতুয়া রিভার ভিউ স্পটের বালি আর পাথরে মিশ্রিত সাজানো ব্লকে। নারিকেলের পাতাগুলো ছুইছুই করে মেঘনার ঘোলা জলের সাথে। লাল নীল ও সাদা রঙের পাল উড়িয়ে মাঝিরা বিকেলের রাঙ্গামেঘ সাতরিয়ে চলে ছোট ছোট ডিঙ্গা নিয়ে, গাংচিল ও বকের কিচিরমিচির ডাক যেন এক পরম প্রতিধ্বনি জাগায় হৃদয়ের মাঝে। সন্ধ্যেবেলায় নদীর কিনারায় রুপালী চাঁদের ¯িœগ্ধ আলোয় চিকচিক করা জলের পাসে বসে বন্ধু বান্ধব মিলে জমে উঠে চা কফি ও চানাচুর বাদামের আড্ডা। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকরা ছবি তুলছে কেওরা ও নারিকেলের বাগান ও ডাঙ্গায় উঠানো ট্রলার নৌকা বা ডিঙ্গায় বসে এমন পরিবেশের স্পটগুলোয় আছে মিলনমেলার গোলঘর বেঞ্চ ছাতা ও ছোট ছোট টুল সান বাধানো ব্লকের সিঁড়ি। চরফ্যাশনের দক্ষিণে অবস্থিত বাংলাদেশের মানচিত্রের ক্ষুদ্র ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সাগরকন্যা কুকরি-মুকরি,ঢালচর, ও তারুয়া সমুদ্র সৈকত। যেখানে বালির কিনারায় মিশে আছে নীল আকাশ, দিনরাত ঢেউ খেলে সমুদ্রের জল। কুকরি-মুকরিতে পর্যটকদের জন্য আছে থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা এখানে আছে থ্রি-স্টার মানের গেস্ট হাউজ এ গেস্ট হাউজে আছে সুইমিংপুল ও হ্যালিপেড। কুকরি-মুকরিতে আছে হাজার হাজার প্রজাতির গাছ ও উদ্ভিদ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য যেন কুকরি-মুকরির চারপাশ জুড়েই। এখানে আছে এডভ্যাঞ্চারবহুল ছোট নদী, বৃক্ষরাজি,হাজার প্রজাতির পাকপাখালি বন্য মহিশ,হরিনের পাল, বানর শৃগাল,মেছবাঘ সহ নানান প্রজাতির বন্যপশুর দেখামিলে এ কুকরি-মুকরির সবুজ শ্যামল অরন্যে। কুকরিতে যেতে দক্ষিন আইচা থানা থেকে কচ্ছপিয়ায় আছে স্পিডবোট ও ট্রলারের সু-ব্যবস্থা। তারুয়া সমুদ্র সৈকতে আছে নীল জলরাসির উচ্ছসিত ছোট ছোট ঢেউ ও বিচ এলাকায় আছে মন জুড়ানো ঝাউ কেওরা সহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ, সমুদ্রের সচ্ছ জলে আছে সামুদ্রিক কাকড়া,বিরল প্রজাতির ঝিনুক সামুক প্রকৃতির এরকম অপার সৌন্দর্য দেখতে প্রতিন ভিড় জমাচ্ছে শত শত পর্যটক। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে দর্শনার্থিরা এ দর্শনিয় স্পটগুলো ঘুরে দেখতে আসছেন চরফ্যাশনে। বাংলাদেশের যে কোনো অঞ্চল থেকে রাজধাণি ঢাকার নদী বন্দর থেকে বিলাশবহুল লঞ্চ ও জাহাজে করে ভোলা ও চরফ্যাশনে আসতে পারবেন যে কোনোও ভ্রমন পিপাসু তো চলুন পরিবার ও বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহায় ঘুরে আসি পর্যটন নগড় পলিমাটির শহর দ্বিপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন থেকে।

LEAVE A REPLY